জাতি গঠনে চরিত্রবান, আপোষহীন তরুণ নেতৃত্ব চাই
কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম।।
যে সময়টা এখন যাচ্ছে তা খুবই ক্রিটিক্যাল। এ সময়েই অপরাধ তার পূর্ণ শক্তি নিয়ে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। সমাজের এ অবস্থা বদলাতে তরুণ ও যুব সমাজকে বিশেষ করে শিক্ষিত এবং যারা সৎ তাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে।
এজন্য প্রথমেই শিক্ষা অর্জনের কোন বিকল্প নেই। তাছাড়া, এমনিতে শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। এ অধিকার থেকে কাউকেই বঞ্চিত করার কোনই সুযোগ নেই। সমাজ ও রাষ্ট্রে শিক্ষিত লোক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে শিক্ষিত তরুণ সমাজের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তারা সমাজটাকে বদলে দিতে পারে। বদলে দিতে পারে সব ধরণের কুসংস্কার।
মানুষের পুরো জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে তার তারুণ্যের সময়টুকু। বলা চলে, সুনির্দিষ্ট এই সময়েই মানুষের জীবনের মোড় ঘোরে। জীবনের স্বর্ণালী সময় এই যৌবনকাল। এখন যারা তরুণ (বিশেষ করে যারা শিক্ষা অর্জনে ব্যাপৃত রয়েছে) তাদের ভাবতে হবে ভবিষ্যত নিয়ে। হেলায়, খেলায় এই যৌবনকাল কেটে গেলে জীবনে সফলতা আসবে না। সামর্থ্য ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে জীবনের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে সেখানে নোঙর ফেলতে হবে। অনেক তরুণ মনে করে, বোধ হয় এই সময়টাই আনন্দ ফূর্তি করার মোক্ষম সুযোগ। আর মনে করাটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু মনে রাখতে হবে, ভালো হতে চাইলে যেমন একালে হওয়া যায়, খারাপ হওয়ারও উপযুক্ত সময় একাল! ফলে মন যা চায় তা করতে থাকলে শেষ জীবনে অনুশোচনা করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবেনা। কী করলাম, কী হারালাম তা নিয়ে মাথা চাপড়ালেও তখন আর কোন ফায়দা হবে না। অনেক তরুণ, যুবককে দেখা যায় নেশার ঘোরে মাতাল হয়ে রঙিন দুনিয়ার স্বপ্ন দেখতে। সততা সত্যবাদিতা আর চারিত্রিক সৌন্দর্যকে পায়ে ঠেলে জীবনের মানে খুঁজে ফেরে। সব ধরনের অশ্লীলতা ও অনৈতিকতাকে নিজের জন্য উপযোগী মনে করে। অথচ এসব কিছু যে জীবন ধ্বংসের উপাদান তা যৌবনের তাড়নায় বুঝে উঠতে পারে না যুবক বৈকি! বুঝলেও তখন আর সময় থাকে না।
তরুণদের অবশ্যই সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। সমাজের অনিয়ম আর দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে তাদের ভূমিকা রাখতে হবে। তাদের অবশ্যই সব ধরনের অপরাধ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরে আসতেই হবে। নিজের মা-বাবা, দেশ ও মানুষের স্বপ্ন পূরণে, জাতি গঠনে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। কারণ, সবাই তাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখে। তারাই নেতৃত্ব দেবে জাতিকে।
নানা আন্দোলনে শিক্ষিত তরুণ এবং যুবকদেরই অংশগ্রহণ থাকে সব থেকে বেশি। তারাই দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র নিপীড়ণের বিরুদ্ধে রূখে দাঁড়িয়েছিল। এসব আন্দোলন ও প্রতিবাদ সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়িয়েছে।
তরুণদের হতে হবে সাহসী। ধর্মীয় অনুশাসনের অনুসরণ, সৎ ও যোগ্য করে নিজেকে তৈরী করার মানসিকতাসস্পন্ন। কোন ধরনের মাদকতা স্পর্শ করতে পারবে না তাদের। মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান হতে হবে আপোষহীন। সময়ের সাহসী পুরুষ হিসেবে দেশ ও জাতির আলোকবর্তিকা হয়েই উদ্ভাসিত হতে হবে। অসহায় জনগণ তাদের দিকেই তাকিয়ে। জাতির স্বপ্ন পূরণে শিক্ষিত তরুণদেরই নেতৃত্বের আসনে সমাসীন হতে হবে। নেশার ঘোরে জীবনের মানে নেই। চরিত্র গঠন ও মানুষের কল্যাণের মাঝেই জীবনের অর্থ খুঁজতে হবে। তবেই বদলে যাবে জীবন, বদলে যাবে মন ও মনন। তবে তরুণদের প্রতিও রাষ্ট্র ও সমাজের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি সবধরণের ভালো কাজ ও সমাজের কল্যাণে তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে। জ্বালাতে হবে আশার বাতিঘর।
আধুনিকতার নামে যাবতীয় বেলাল্লাপনা আর নষ্টামিকে ছুঁড়ে ফেলে একজন শিক্ষিত তরুণ তার জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারে। দূরে ঠেলবে সব অপসংস্কৃতিকে। এড়িয়ে চলতে হবে মন্দ লোকের সংস্পর্শ। যে আদর্শ বিপথগামী করবে, পথহারা করবে সে আদর্শ পরিত্যাগ করতে হবে। আদর্শের প্রশ্নে আপোষহীন, চরিত্রবান তরুণ নেতৃত্ব চাই। তরুণ ভালোবাসবে নিজেকে, নিজের পরিবার, সমাজ ও দেশকে। তবেই সার্থক হবে জীবন-যৌবন। তবেই দিশাহীন মানুষ দিশা পাবে। তোমরা যারা শিক্ষিত তরুণ, যুবক-তোমাদের কাছেই এ প্রত্যাশা সবার। তোমরাই সমাজটাকে বদলে দিতে পারো।
লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট