বিদেশি শিক্ষায় সংকটে শিক্ষার্থিরা
অনলাইন শিক্ষাঃ
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বছরের শুরু থেকেই বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা সংকটে পড়েছেন। অনেক শিক্ষার্থী ইউরোপ, কানাডা, আমেরিকার মতো দেশের নামি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েও ভিসা ও ফ্লাইটসংক্রান্ত জটিলতার কারণে যেতে পারছেন না। আবার যাঁরা ছুটিতে দেশে এসেছিলেন তাঁদের অনেকেই যথাসময়ে ফিরতে পারছেন না।
শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সংকটে পড়েছে দেশের চার শতাধিক স্টুডেন্ট কনসালট্যান্সি প্রতিষ্ঠানও। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যান। বিশেষ করে ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, ভারত, চীন ও মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোতে দেশের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার আগ্রহ বেশি। কিন্তু করোনার জন্য চলতি বছরের শুরু থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লকডাউন শুরু হয়। আর বাংলাদেশে শুরু হয় গত মার্চ থেকে। বন্ধ ছিল বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে চলতি বছর ১০ হাজারেরও কম শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চশিক্ষায় যেতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন এ খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
গত অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাওয়া নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা সার্ভিস চালুর জন্য ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষার্থীরা।
বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেক শিক্ষার্থীই যাঁরা চলতি বছরের আগস্ট থেকে শুরু হওয়া সেমিস্টারে বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই ভিসা ও ফ্লাইটসংক্রান্ত জটিলতায় সেমিস্টার পরিবর্তন করে আগামী জানুয়ারি থেকে নিয়েছেন। আবার কেউ কেউ পুরো এক বছরের সেমিস্টারও পরিবর্তন করেছেন। গত আগস্ট সেমিস্টারেই যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী কিন্তু তাঁদের কেউ-ই সে সময়ে যেতে পারেননি।
জানা যায়, চলতি বছরের বিভিন্ন সেমিস্টারে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া অনেক শিক্ষার্থী ভিসা আবেদন না করতে পারায় অনলাইন ক্লাসে যোগদান করতে পারেননি। অনলাইন ক্লাসে যোগ দিতে হলে প্রথম সেমিস্টারের ফি পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি যেতে পারলে বা রিসার্চ ওয়ার্কে যোগ দিতে পারলে বেশির ভাগ স্কলারশিপ পান। অনেকেই ভিসা না পাওয়ায় তাঁরা নিশ্চিন্তও হতে পারছিলেন না। তাঁরা দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি হননি। ফলে তাঁরা চলতি বছর একাডেমিক পড়ালেখার বাইরেই রয়ে গেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন-মিলওয়াকিতে গত আগস্ট সেমিস্টারে পিএইচডি প্রগ্রামে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন রাকিবা সুলতানা। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নতুন শিক্ষার্থীদের ভিসা বন্ধ থাকায় আমি গত আগস্টে যেতে পারিনি। আগামী জানুয়ারিতে আমার সেমিস্টার শিফট করেছি। ১৫ নভেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের এমবাসি নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা কার্যক্রম শুরু করেছে। প্রথম দফায় পাঁচ দিনের জন্য প্রতিদিন ২০ জন করে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমি এখনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাইনি।’
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নেবরাসকা লিংকনে আগস্ট সেমিস্টারে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন সৌমিত্র দাস। তিনিও তাঁর সেমিস্টার পিছিয়ে জানুয়ারিতে এনেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি সরাসরি ইউনিভার্সিটিতে যেতে পারলে টিউশন ফির ক্ষেত্রে ওয়েবার (ছাড়) পাব। এ জন্য অনলাইন ক্লাসেও যোগ দিতে পারিনি। যদিও আমি প্রথম ধাপেই ভিসার জন্য ইন্টারভিউ দিতে পেরেছি। ভিসা পেলেও ফ্লাইট পেতে আবার কত ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয় তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’
সাধারণত বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই বিদেশে উচ্চশিক্ষায় গিয়ে সেখানেই স্থায়ী হন। ওই সব দেশে স্থায়ী হতে আবেদনের জন্য পাঁচ বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে থাকার শর্ত দেওয়া। কিন্তু করোনার কারণে সেই শর্ত পূরণে হিমশিম খেতে হবে শিক্ষার্থীদের। কারণ অনেক শিক্ষার্থীই নির্দিষ্ট সময়ে ভিসা বা ফ্লাইট পাননি। এ জন্য অনেকে নির্দিষ্ট সময়ে যেতে না পেরে ওই শর্ত পূরণ করতে পারবেন না।
বিএসবি ক্যামব্রিয়ান গ্রুপের প্রতিষ্ঠান বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের প্রধান নির্বাহী লায়ন এম কে বাশার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বছরের শুরু থেকেই বিভিন্ন দেশে লকডাউন ছিল। ফলে খুব কমসংখ্যক শিক্ষার্থীই এবার বিদেশে উচ্চশিক্ষায় যেতে পেরেছে। উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পর আগস্ট-সেপ্টেম্বর সেমিস্টারে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চশিক্ষায় যায়। কিন্তু এবার এই সময়ে এইচএসসির ফলই প্রকাশ হয়নি। সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের এমবাসিগুলো নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া ফের চালু করেছে। ইংল্যান্ড, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা ও ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের শর্তগুলোও সহজ করেছে। ফলে আগামীতে উন্নত দেশগুলোর উচ্চশিক্ষায় সম্ভাবনা বাড়ছে।’
ফরেন অ্যাডমিশন অ্যান্ড ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট কনসালট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি এবং ওয়েল বাংলাদেশ এডুকেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফরিদুল হক হ্যাপী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের ৪০০ সদস্য আছে। তারা সবাই দুরবস্থায় আছে। উচ্চশিক্ষায় বিদেশে যাওয়া শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার পাশাপাশি চাকরি করে প্রতিবছর মোটা অঙ্কের রেমিট্যান্স পাঠায়। করোনার জন্য সেখানেও সংকট তৈরি হচ্ছে।’
শিক্ষাবার্তা/ বিআ