কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে পদ ছাড়তে হয়েছে। এবার একই অভিযোগে ফেঁসে যাচ্ছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি পক্ষ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে উপাচার্যকে পদ থেকে সরে যেতে হতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কমিশন কেলেঙ্কারির ঘটনায় জাবি উপাচার্য দায় এড়াতে পারেন না। একজন উপাচার্যের কাছে ছাত্রনেতারা কীভাবে কমিশন দাবি করার সাহস পান, এ বিষয় নিয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে উপাচার্য কীভাবে বৈঠক করেন। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল্লাহ আল মামুন গণমাধ্যমকে বলেন, জাবি উপাচার্যের বিরুদ্ধে আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি গোপনভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, অভিযোগ খুবই গুরুতর, তবে বিষয়টি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। প্রয়োজনে এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হতে পারে।
এ বিষয়ে জাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আমির হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, কমিশন আদায় করার বিষয়টি নিয়ে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। কেউ কেউ উপাচার্যের এমন ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছেন। তবে এ নিয়ে একাডেমিক কার্যক্রমে কোনো প্রকার প্রভাব ফেলেনি বলে জানান এই শিক্ষক।
এর আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য ১ হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সেই উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দের ৪-৬ পারসেন্ট চাঁদা দাবি করেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। ৮ আগস্ট রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সঙ্গে তার বাসভবনে দেখা করে এই চাঁদা চান দুই নেতা।
এ বিষয়ে ফারজানা বলেছিলেন, ‘সেদিন তারা (শোভন ও রাব্বানী) আমাকে বলে, এত বড় প্রকল্প, আপনি আমাদের সহযোগিতা করেন, আমরাও আপনাকে সহযোগিতা করব। আপনি কোম্পানিগুলোকে বলে দেন তারা যেন আমাদের কিছু (পার্সেন্ট) টাকা দেয়।
আমাদের টাকা দিলে আমরা স্থানীয় (জাবি) ছাত্রলীগকে তা থেকে কিছু দিয়ে দেব। কিন্তু আমি তাদের কথায় রাজি হইনি এবং মুখের ওপরে বলে দিয়েছি আমি কোনো টাকা-পয়সার মধ্যে নেই। তখন তারা আমাকে বলল, আপা (প্রধানমন্ত্রী) আমাদের সব বিশ্ববিদ্যালয় দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছেন।
‘সেজন্য আপনার কাছে এসেছি। তখনও তাদের কথায় সাড়া না দেয়ায় তারা আমার সঙ্গে বেশ উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা শুরু করে। এর কিছু সময় পর তারা চলে যায়।’ তারা কত পার্সেন্ট দাবি করেছিল- এমন প্রশ্নে ভিসি বলেন, ‘দু-এক পার্সেন্ট না, তারা চার কিংবা ছয় পার্সেন্টের কথা বলেছিল।’
এবার এ ঘটনায় জাবি উপাচার্য নিজেই ফেঁসে যাচ্ছেন।
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.