এইমাত্র পাওয়া

সম্পাদক গোলাম সারওয়ারের স্মরণসভা আজ

দেশের অন্যতম প্রধান সম্পাদক গোলাম সারওয়ারের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে নাগরিক স্মরণসভা।

বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর ৩৮৭, তেজগাঁও শিল্প এলাকায় টাইমস মিডিয়া ভবনের প্রধান মিলনায়তনে এ স্মরণসভার আয়োজন করেছে ‘গোলাম সারওয়ার নাগরিক স্মরণ পরিষদ’। এতে সভাপতিত্ব করবেন পরিষদের সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। সাংবাদিকতার বাতিঘরখ্যাত বরেণ্য এই সাংবাদিকের ভক্ত, গুণগ্রাহী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের এ স্মরণসভায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পরিষদের সদস্য সচিব ও সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি।

একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক গোলাম সারওয়ারের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল গত ১৩ আগস্ট। গত বছরের ওই দিনে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রয়াত হন তিনি। গত ১৩ আগস্ট তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে মরহুমের কবরে সমকাল পরিবারের পক্ষ থেকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। সে সময় ঈদুল আজহার ছুটি থাকায় স্মরণসভা হচ্ছে আজ।

মুক্তচিন্তা, প্রগতিশীল মূল্যবোধ আর মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে সোচ্চার গোলাম সারওয়ার এ দেশের সাংবাদিকতা জগতে প্রতিষ্ঠানতুল্য ব্যক্তিত্ব। ষাটের দশকে সাংবাদিকতা শুরু করার পর একটানা পাঁচ দশকের বেশি সময় তিনি এ পেশায় মেধা, যুক্তিবোধ, পেশাদারিত্ব, দায়িত্বশীলতা, অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনার নিরবচ্ছিন্ন চর্চার মধ্য দিয়ে নিজেকে এবং দেশের সংবাদপত্রকে অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

গোলাম সারওয়ারের জন্ম ১৯৪৩ সালের ১ এপ্রিল বরিশালের বানারীপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় ১৯৬২ সালে চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদীর বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা হিসেবে তার সাংবাদিকতা পেশার সূচনা। একই বছর দৈনিক সংবাদের সহসম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন তিনি।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত সংবাদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন গোলাম সারওয়ার। মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন নিজের এলাকায়। স্বাধীনতার পর কয়েক মাস বানারীপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে দৈনিক ইত্তেফাকে সিনিয়র সহসম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন। ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি ইত্তেফাকে যথাক্রমে প্রধান সহসম্পাদক, যুগ্ম বার্তা সম্পাদক ও বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

সংবাদপত্রের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ বার্তা বিভাগে গোলাম সারওয়ারের সৃজনশীলতা, সংবাদবোধ ও তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এ দেশের সংবাদমাধ্যম জগতে উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত। দৈনিক ইত্তেফাকে দীর্ঘ ২৭ বছর বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি সাপ্তাহিক পূর্বাণীর নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও কাজ করেন। তিনি দেশের দুটি অন্যতম দৈনিক ‘যুগান্তর’ ও ‘সমকাল’-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেন। আমৃত্যু তিনি দৈনিক সমকালের সম্পাদক ছিলেন। একই সময় দেশের দৈনিক সংবাদপত্রগুলোর সম্পাদকদের সংগঠন বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।

সাংবাদিকতার পাশাপাশি সৃজনশীল সাহিত্যেও ছিল গোলাম সারওয়ারের অবাধ বিচরণ। শিশু একাডেমি থেকে প্রকাশিত ছড়ার বই ‘রঙিন বেলুন’ তার সাহিত্যসৃষ্টির উজ্জ্বল নিদর্শন। তার রচিত গ্রন্থের মধ্যে ‘সম্পাদকের জবানবন্দি’, ‘অমিয় গরল’, ‘আমার যত কথা’ এবং ‘স্বপ্ন বেঁচে থাক’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ২০১৭ সালে তার ৭৫তম জন্মবার্ষিকীতে দেশের বরেণ্য ব্যক্তি, সহকর্মী, বন্ধু, স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীদের লেখনীতে সমৃদ্ধ স্মারকগ্রন্থ ‘সুবর্ণরেখায় বাতিঘর’ প্রকাশিত হয়।

মেধা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার উৎকৃষ্টতার কারণে গোলাম সারওয়ার মূল্যায়িত হয়ে থাকেন ‘সাংবাদিকদের শিক্ষক’ হিসেবে। তার হাতে গড়া অন্যূন পাঁচ শতাধিক সাংবাদিক এখন দেশের বিভিন্ন পত্রিকা ও টেলিভিশন মাধ্যমে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন।


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.