এ এইচ এম সায়েদুজ্জামান।।
“বঙ্গবন্ধু কথাটি অর্থে দুইটি শব্দ বঙ্গ ও বন্ধু, “বঙ্গ” শব্দটি এসেছে বাঙ্গাল থেকে যা পরির্বতন হয়ে এসেছে বাঙ্গালী আর ‘বন্ধু’ হল গভীর সম্পর্ক। আর ‘বিশ্ব বন্ধু’ মানে ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে সকলের বন্ধু।
এই প্রথমবারের মতো জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎবার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয়েছে। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় জাতিসংঘে কনফারেন্স কক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন জাতিসংঘের সদস্য দেশসমূহের স্থায়ী প্রতিনিধি, কূটনীতিক, জাতিসংঘের কর্মকর্তা, নিউইয়র্কস্থ যুক্তরাষ্ট্রের মূল ধারার মানবাধিকার কর্মী, লেখক, চলচিত্র শিল্পী, টিভি উপস্থাপক, ফটোগ্রাফার এবং প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশার বিশিষ্টজনেরা।
এতে বঙ্গবন্ধুকে ‘ফ্রেন্ড অব দ্যা ওয়ার্ল্ড’ বা ‘বিশ্ব বন্ধু’ হিসেবে আখ্যা দেন জাতিসংঘের সাবেক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত আনোয়ারুল করিম চৌধুরী। এসময় তিনি জাতির পিতার সাথে তার কর্মজীবনের নানা ব্যক্তিগত স্মৃতি ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে তুলে ধরা, বহুপাক্ষিকতাবাদকে এগিয়ে নেয়াসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশ্বনেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু যেসব অবদান রাখেন তার উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত আনোয়ারুল করিম চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু প্রদর্শিত পররাষ্ট্রনীতি ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ ধারণ করেই বাংলাদেশ বহুপাক্ষিকতাবাদের অন্যতম প্রবক্তা হিসেবে বিশ্বসভায় ভূমিকা রেখে চলেছে।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের এ আয়োজনে স্বাগত ভাষণ দেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। এসময় দেশী-বিদেশী অতিথিগণ জাতির পিতার স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে একমিনিট নিরবতা পালন করেন। প্রবাসী বাঙালি সম্প্রদায়ের পক্ষে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান।
ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি সৈয়দ আকবরউদ্দিন বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যখন ভারতবাসী তাদের অকৃত্রিম বন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা জানতে পারে তখন ভারতের স্বাধীনতা দিবসের আনন্দ মুহূর্তেই বিষাদে রূপ নেয়।
ইতিহাস থেকে বিশ্লেষণ করে জানা যায় যে , সদ্য স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর নামের পূর্বের “বঙ্গবন্ধু” নামটি সংযুক্ত করা হয়েছে ; অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল বাংলার প্রতিটি নাগরিক, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের অন্যায়, অবিচার, শোষণ, নিপীড়ন, নির্যাতন, বৈষম্য ও নিজের জীবন উৎসর্গ করে অন্ধকারছন্নতার যুগ থেকে একটি স্বাধীন দেশগড়ার কারিগর। “মানুষ বয়সে বাঁচে না, বাঁচে কর্মের” পার্থিব জীবনে মানুষ তার কাজের মধ্য দিয়ে হয়ে উঠেন মহান, চিরস্বরণী ও বরণীয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলার স্বায়ত্তশাসন গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও শোষণহীন বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন এবং বহু নির্যাতন সহ্য করেছেন। তাঁর অদম্য নেতৃত্বগুণে আমরা পেয়েছি “সোনার স্বপ্নের বাংলাদেশ ” । তিনি বাঙ্গালীদের মাঝে আত্ব- বিশ্বাস সৃষ্টি করেন, বাঙ্গালী জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্ধুদ্ধ করেন।
বাঙ্গালী জাতিকে সংগঠিত করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন অসাধারণ নেতৃত্বেই গুণাবলি ; তাঁর এই গুণাবলি বর্তমান প্রজন্মেকে দেশপ্রেমের উজ্জাবিত করেছে। তাঁর মধ্য ছিল দূরদর্শীতা, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, ন্যায়পরায়ণতা,মানবতার প্রতীক, সাহসী যোদ্ধা। এই সব গুণাবলি বর্তমান প্রজন্মের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্য না থাকলে সে কখনো নেতা হতে পারে না, আগামী প্রজন্মের ও সে নেতৃত্ব দিতে পারবে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনটা রাজনৈতিকভাবে কেটেছে এবং তিনি এ দেশের মানুষের জন্য কেঁদেছেন । শেখ মুজিব ছিলেন জননেতার অন্যতম প্রতীক মানবতাবাদী।
বঙ্গবন্ধু তেমনি সফল জননেতা হিসাবে মানবতাবাদের প্রতীক ছিলেন। তিনি যেখানে অন্যায়, অবিচার, শোষণ দেখেছেন তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী ঘোষণা করেছেন ; এজন্য তাকে বারবার শাসকগোষ্ঠীর কড়া শাসনে পড়তে হয়েছে, রাজনৈতিক জীবনে অর্ধেক সময় তাকে জেল খাটতে হয়েছে। কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রো বঙ্গবন্ধু বনর্না করতে গিয়ে বলেন —-
“আমি হিমালয় দেখিনি
কিন্তুু বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি”
তাই বাংলাদেশের বর্তমানে ও ভবিষাৎ প্রজন্মের প্রতিটি নাগরীকের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মত আদর্শীক রাজনৈতিক জীবন গড়ে তোলা সকলের প্রতি রইল আমার আহব্বান। কারণ বঙ্গবন্ধু ছিল একজন স্বদেশপ্রেমিক ব্যক্তি। কেননা স্বদেশপ্রেম মানবচরিত্রের এক স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যুদ্ধে অংশগ্রহণ যেমন দেশপ্রেমিক পরিচয় বহন করে, তেমনি সাহিত্য , শিল্পকলা বা অন্যান্য জাতীয় স্বার্থের ক্ষেত্রে কাজ করাও দেশপ্রেমের লক্ষণ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো দেশপ্রেমিকে বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে গড়ে তুলতে হবে । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল সুখি সমৃদ্ধ রাংলাদেশ গড়া, এবং আজীবন হয়ে থাকবে সোনার বাংলাদেশ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছিল ক্ষুধামুক্ত ও দারিদ্রমুক্ত দেশ যেখানে থাকবে না অর্ধহারা ও অনাহারে মানুষ তারই সে স্বপ্ন পূরণ করতে যাচ্ছে বর্তমান সরকার।
এছাড়াও শিক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অগ্রণী ভুমিকা ছিল ব্যাপকহারে। তাঁর স্বপ্ন ছিল অন্ধকারচ্ছন্নতার যুগ থেকে একটি শিক্ষার আলোর আলোকিত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। তাঁর স্বপ্ন গুলো বাস্তবায়ন হোক এটাই জাতির কামনা।
লেখক- প্রধান সম্পাদক
শিক্ষাবার্তা ডট কম ও শিক্ষক ,উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজ ,ঢাকা।
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.