এইমাত্র পাওয়া

চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের আজ জন্মদিন

ছবি আঁকা ও রঙ তুলির গল্প শিল্পের অন্যতম এক মাত্রা। শিল্প ও শিল্পীর কথা আসলেই মন-মগজে অনুরণিত হয় এক অনবদ্য নাম। এস এম সুলতান।

পুরো নাম শেখ মোহাম্মদ সুলতান, নামটা পরিচিত না হলেও এস এম সুলতান যেন এক সুপরিচিত নাম। দেশের চার স্বীকৃত মাস্টার পেইন্টারের অন্যতম এই শিল্পীর আজ ৯৬তম জন্মদিন। ১৯২৩ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়া গ্রামে জন্মেছিলেন তিনি।

শিল্পের সাধনায় মুকুটহীন শিল্পী সম্রাটের যাত্রা সৎ এবং মহৎ কবির মতন সেই পথেই, যে পথ নির্জন। নিঃসঙ্গ কিন্তু প্রকৃতির মতই বাতাসে ভরা। সারা জীবনের চর্চায় তিনি ক্যানভাসের পর ক্যানভাস ভরে তুলেছেন জীবনের মর্মরিত স্পন্দনে।

শিল্পের এক নিজস্ব ভুবন নির্মাণ করেছেন প্রায় আয়াশহীন নিরন্তর প্রচেষ্টার মধ্যে। তাঁর ছবির যে প্রকৃতি তা সম্পূর্ণ বাংলাদেশের— আবার বিশ্বেরও। তাঁর ছবির রমণীরা এক আপ্লুত যৌবনের স্বতঃস্ফূর্ত উচ্চারণ তা বাংলাদেশের গ্রামীণ রমণীর প্রতিমূর্তি হয়েও এমন এক পৃথিবীর অধিবাসী— যা এসএম সুলতানের একান্ত নিজস্ব নির্মাণ। তাঁর চিত্রাবলীতে যে পেশীবহুল পৌরুষের ঔজ্জ্বল্য তাও বাংলাদেশের গ্রামীণ নিয়ত কর্মচঞ্চল কৃষকেরই প্রতিনিধি।

এসএম সুলতানের ছবি আঁকার নেশা ছোটবেলা থেকেই। শৈশবে স্কুলের অবসরে রাজমিস্ত্রি বাবাকে কাজে সহযোগিতা করতেন এবং মাঝে মাঝে ছবি আঁকতেন। ১৯৩৮ সালে পড়ালেখা ছেড়ে তিনি চলে যান কলকাতায়। চিত্রসমালোচক হোসেন শহীদ  সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে তার পরিচয় সেখানেই। একাডেমিক যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও সোহরাওয়ার্দীর সুপারিশে ১৯৪১ সালে ভর্তি হন কলকাতা আর্ট স্কুলে।

কলকাতার আর্ট কলেজে পড়তে গিয়েও শেষ করেননি পড়াশুনা। ১৯৪৪ সালে কলকাতা আর্ট স্কুল ত্যাগ করে ঘুরে বেড়ান এখানে-সেখানে। কিছুদিন কাশ্মীরের পাহাড়ে উপজাতিদের সঙ্গে বসবাস এবং তাদের জীবন-জীবিকা ভিত্তিক ছবি আঁকেন সুলতান।

প্রাতিষ্ঠানিকতায় আস্থা রাখতে না পারা মানুষটি চিরদিন চলেছেন শিল্পের খেয়ালে। বেশির ভাগ আঁকা ছবিই বিলিয়ে দিয়েছেন যাকে-তাকে। এখনো আবিষ্কৃত হচ্ছে শিল্পীর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য শিল্পকর্ম।

এস এম সুলতানের প্রথম প্রদর্শনী হয়েছিলো ১৯৪৫ সালে ভারতের সিমলাতে। ১৯৪৬ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে তার মোট বিশটি প্রদর্শনী হয় যেসব প্রদর্শনীতে ছিলো পিকাসো, দালি, মাতিস এর মতো বিশ্বনন্দিত শিল্পীদের চিত্রকর্ম।

ছবি আঁকার পাশাপাশি সমাজ-কল্যাণেও নিরন্তর কাজ করেছেন সুলতান। নড়াইলে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। ১৯৬৯ সালের ১০ জুলাই ‘দি ইনস্টিটিউট অব ফাইন আর্ট’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৭ সালে শিশুদের জন্য ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করেন শিশুস্বর্গ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

এই শিল্পী ১৯৮২ সালে একুশে পদক, ১৯৮৪ সালে রেসিডেন্ট আর্টিস্ট, ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা এবং ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক’ অর্জন করেন। এছাড়া ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যান অব দ্য ইয়ার, নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ম্যান অব এশিয়া পুরস্কার লাভ করেন।


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.