এইমাত্র পাওয়া

শিক্ষকদের ডিজিটালের ছোঁয়া লাগবে কবে?

বিন-ই-আমিনঃ

বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে দ্রতগতিতে ডিজিটালাইজেশন ছোঁয়া লেগেছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে। এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় “ডিজিটালাইজেশন” বাংলাদেশেই মনে হয় দ্রুতগতিতে ঘটেছে। গ্রামাঞ্চলের একজন কৃষক যেভাবে ডিজিটালাইজেশন সুবিধা পাচ্ছেন,যেখানে একজন শিক্ষক সে অনুপাতে পাচ্ছেন না।
কৃষক তার প্রয়োজনীয় সকল সমস্যার ব্যাপারে ঘরে বসেই তথ্য ও সমাধান পেয়ে যাচ্ছেন সাথে সাথে। কৃষক ও কৃষির উন্নয়নে সরকার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পক্ষান্তরে শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি না থাকলেও শিক্ষকদের বেলায় আন্তরিকতার ঘাটতি আছে বলে মনে হয়।
সকল সেক্টর যেখানে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল পাচ্ছেন সেখানে একজন বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এখনো এনালগ পদ্ধতিতেই রয়ে গেছেন। এটা কিন্তু শিক্ষকের অবহেলার কারন নয়,সরকারের। আধুনিকতার ছোঁয়া সকল সেক্টর পেলেও একজন শিক্ষক কেনো নয়? শিক্ষকদের বলা হয় মানুষ গড়ার বা জাতি গড়ার কারিগর।
কারিগর যাদেরকে ডিজিটালের স্বপ্ন বাস্তবায়নে স্বপ্ন দেখান আর সেই কারিগরই থেকে যান অন্ধকারে! সরকারি কোষাগার থেকে সকল সুযোগ- সুবিধা নিয়ে অন্য সেক্টরের একজন পিওন সামাজিকভাবে সকল আনুষ্ঠানিকতায় অংশগ্রহণ করতে পারলেও বেসরকারি শিক্ষকগন পারেননা। ঈদ আনন্দ তারা অনেকটা নিরানন্দে কাটিয়ে দেন পরিবার পরিজন নিয়ে।
একজন শিক্ষক সিকিআনা বোনাসের টাকা দিয়ে স্ত্রীর শাড়ি কিনলে সন্তানের নতুন জামা কেনার টাকা থাকেনা। আত্নীয় স্বজন বা শ্বশুড়বাড়ির কোনো আনুষ্ঠানিকতায় অংশগ্রহণ করলে সংসার চালাতে কষ্ট হয়। হিসেবে করে চলতে গিয়ে অন্য পেশার লোকদের কাছে কিপ্টে বা হিসেবী বলে পরিচিতি পেতে হয়। আবার প্রতিমাসের বেতনও যখন ঠিকমতো পায়না,তখন পাওনাদারদের কাছে অবিশ্বাসের পাত্র হতে হয়।
অনেক সময় ২০ তারিখের পর বেতন পায় বেসরকারি শিক্ষকগন। ব্যাংকে গিয়ে কর্মচারীদের দুর্ব্যবহারের কথা না হয় বাদই দিলাম। “স্যার” “স্যার” বলে কতো ভাবেই যে ব্যাংকের লোকজনকে অনুনয়-বিনয় করে বেতনের টাকা তুলতে হয়! যেন তারা দয়া করছেন,শিক্ষকরা লাইনে দাঁড়িয়ে অনুদান নিচ্ছেন। ঈদের আগে হলে তো আর কথাই নাই। লম্বা লাইন রাস্তায় এসে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে ক্যাশ কাউন্টারে গিয়ে শোনতে হয় টাকা নাই। অপেক্ষা করুন।
অন্য ব্যাংক থেকে টাকা আসলে পাবেন। এতো অবহেলা,অবিচার,দুর্ব্যবহার সহ্য করতে হয় শিক্ষকদের। কিন্তু কেনো? শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কী অন্য সকলের চেয়ে কম? নাকি তাদের সনদ সরকার স্বীকৃত নয়? একজন সরকারি অফিসের পিওনের সমান বোনাস পান্ন  একজন প্রতিষ্ঠান প্রধান। ঈদের আগে বেসরকারি শিক্ষকদের  বেতনের জন্য অপেক্ষা করতে হয় সকাল থেকে বিকেল।
এ যেন ধনীদের বাড়ির সামনে অসহায় গরীব-দুঃখীদের  সাহায্য বা যাকাত গ্রহণ!  অন্য পেশায় এতো বিড়ম্বনা আছে বলে আমার জানা নেই। আবার অনেক সময় শোনা যায়,ডিজি মহোদয় বিদেশ,তাই চেক ছাড় হয়নি। তাই বেতন পেতে দেরি হবে। কারিগরি শাখার শিক্ষকদের অবস্থা আরো খারাপ। তাদের এমপিও কপি অনেক সময় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখায় আসেনা।
এমপিও কপি না আসায় বেতন পেতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। ডিজিটাল যুগে এসেও এমপিও কপি বিড়ম্বনা আর কতোকাল চলবে? ঢাকা থেকে ডাক যোগে এমপিও সিট ব্যাংকে আসলে বেতন। না আসলে জামেলা। বর্তমান সময়ে এমনটা লুকোচুরি খেলার মতো নয়তো?  সরকারি সকল শাখায় যেভাবে বেতন পান কর্মকর্তা- কর্মচারিরা সেখানে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক উচ্চ শিক্ষিতের বেলায় এতো অবহেলা কেনো?
এ যুগে এসেও এমপিও শিট যা কিনা কয়েকজন কর্মকর্তার সেই করা কাগজ তার এতো গুরুত্ব কিভাবে? সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক- কর্মচারী এবং ম্যানেজিং কমিটি বা জিবি’র সদস্যদের অঙ্গীকারনামা দিতে হয় এই মর্মে যে,চাহিদার অতিরিক্ত টাকা উত্তোলন করলে দায়ী থাকব। সেখানে মাসে মাসে এমপিওর কপিকে এতো গুরুত্বপূর্ণ মনে করার কারন আছে কী? মাসে মাসে একগাদা কাগজ ব্যাংকে জমা দিতে শিক্ষক কর্মচারীদের দৌড় ঝাপ শুরু হয়।
এটা কি ডিজিটাল যুগে এনালগ নিয়ে বাড়তি ঝামেলা নয়তো? অবসরে গেলে সুবিধা পেতে অপেক্ষা করতে হয় ২-৪ বছর। এটা কেমন নিয়ম? যিনি সারাজীবন মহান পেশায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করেছেন সেখানে তারই প্রাপ্য সম্মান টুকু পেতে এতো সময় লাগবে কেনো?
যেসব পেশায় ঘুষ বাণিজ্য চলে সেখানে মুল বেতন না তুলেও সংসার চলে,জমি কেনা হয়,বাড়ি-গাড়ি হয়। আর একজন শিক্ষক শুধু মুল বেতনের সাথে সামান্য বর্ধিতাংশ পেয়ে কীভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে দিনাতিপাত করে? তার উপর বর্ধিত হারে কর্তণ। ১০% কর্তণের ফলে মুল স্কেলের সম পরিমান বেতন তুলতে পারেন বেসরকারি শিক্ষকগন। উপজেলা শহর বা গ্রামের একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীকে ৮-১০ কিলোমিটার দুরে  জেলা শহরে গিয়ে প্রতি মাসের বেতন তুলতে হয়,যা সময় সাপেক্ষ এবং বিরক্তিকর।
এ যুগে এসেও প্রতি মাসে শিক্ষক- কর্মচারীদের বেতন তুলতে যে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তা শুধু কষ্টের নয়,বেদনারও। এ দুরবস্থা থেকে পরিত্রাণ জরুরী।

Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.