পেনশনের ব্যবস্থা সাধারণত সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য হলেও এবার থেকে বেসরকারি চাকরিজীবীরাও পাবেন পেনশনের সুবিধা। আর তাই অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গঠিত হতে যাচ্ছে সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার তহবিল। চাকরিজীবী ও নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে এই তহবিলে অর্থ দেবেন। অর্থের পরিমাণও সমান হবে।
সরকারি ও বেসরকারিখাতে একইভাবে এই তহবিল গঠনের বিধান রেখে সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এই নীতিমালা তৈরির কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে এ সংক্রান্ত গঠিত কমিটি। চলতি মাসের শেষে খসড়া নীতিমালা অর্থ সচিবের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
নীতিমালা প্রণয়নে গঠিত ৭ সদস্যের কমিটির প্রধান অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আজিজুল আলম বলছেন, পেনশন কাঠামোর একটি খসড়া আমরা তৈরি করেছি। বিভিন্ন দেশের পেনশন কাঠামো ও আইনি বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে এই খসড়া তৈরি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা আশা করছি এ মাসের শেষে নীতিমালার খসড়া অর্থ সচিবের কাছে জমা দিতে পারবো। খসড়া হওয়ার পর সরকার-বেসরকারি খাত সংশ্লিষ্ট ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসে নীতিমালা চূড়ান্ত করবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার খসড়ায় পেনশন তহবিল অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে করার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ চাকরিজীবী ও নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে এ তহবিলে অর্থ দেবে। এর পরিমাণ চাকরিজীবীর মূল বেতনের ১০ শতাংশ হতে পারে। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষও সমপরিমাণ অর্থ দেবে।
পাশাপাশি এ তহবিল ব্যবস্থাপনার জন্য একটি রেগুলেটরি অথরিটি থাকার কথা বলা হয়েছে খসড়ায়। এ অথরিটির মাধ্যমে পেনশন কার্যক্রম পরিচালিত হবে। প্রস্তাবিত পেনশন স্কিমের আওতায় সরকারি চাকরিজীবীদের বয়স ৬০ বছর এবং বেসরকারি খাতের জন্য ৬৫ বছর ধরা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে চাকরি শেষে অর্ধেক পেনশনের টাকা এককালীন তোলা যাবে। বাকি টাকা তহবিলে থাকবে। সে অর্থ পরে প্রতি মাসে ধাপে ধাপে উঠানো যাবে।
তহবিল পরিচালনার জন্য আলাদা রেগুলেটরি অথরিটি গঠন করার কথাও বলা হয়েছে। এই অথরিটি লাভজনক খাতে তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করবেন। বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত মুনাফার অংশ সুবিধাভোগীরা মাসে মাসে পাবেন। এছাড়া পেনশনভোগীদের স্মার্টকার্ড দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পেনশন স্কিমে ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের সুবিধা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, পেনশন নীতিমালা চূড়ান্ত করার পর প্রথমে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এর আওতায় আনা হবে। তারপর পর্যায়ক্রমে বেসরকারি খাতের চাকরিজীবী ও অন্যান্যদের এ পেনশনের আওতায় আনা হবে। এতে বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের সার্বজনীন পেনশনের আওতায় আনতে সময় লাগবে অন্তত তিন বছর।
সার্বজনীন পেনশন পদ্ধতির আওতায় বেসরকারি পর্যায়ে প্রাথমিকভাবে বড় বড় করপোরেট হাউস, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে কর্মরত চাকরিজীবীদের আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্য খাতের প্রতিষ্ঠানকে আনার কথা বলা হয়েছে।
এদিকে এই ফান্ডটির পুরোটি নিয়ন্ত্রণে থাকবে সরকারের হাতে। এখানে সরকারি চাকরিজীবীদের ভবিষ্যত পেনশন অর্থও জমা থাকবে। সরকারি-বেসকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য এটি একটি ‘সার্বজনীন ফান্ড’ হবে। সংশ্লিষ্ট চাকুরীজীবীরা এই ফান্ডে একটি ‘কোড’ নাম্বারের বিপরীতে অর্থ জমা রাখবেন। তারা চাকরি পরিবর্তন করলেও কোড নাম্বারের কোনো পরিবর্তন হবে না। অবসর নেয়ার পর রূপরেখা অনুযায়ী এই কোডের বিপরীতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি পেনশন পাবেন। এই ফান্ডের টাকা সরকার বিভিন্ন লাভজনকখাতে বিনিয়োগ করে মুনাফা করবে এবং এই মুনাফার অর্থ ফান্ডে অংশ নেয়া চাকরিজীবীরাও পাবেন। তবে কাউকে বাধ্য করা হবে না এই ফান্ডে অংশগ্রহণের জন্য।
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.