ময়মনসিংহঃ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ইতিহাসে এক সময়ের প্রাণকেন্দ্র ‘জব্বারের মোড়’ এখন বিলীনের পথে। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম গেট (কেবি কলেজ মোড়) থেকে ফসিল মোড় পর্যন্ত চার লেন বিশিষ্ট সড়ক নির্মাণের কারণে এই পরিবর্তন ঘটছে।
প্রকল্পের অংশ হিসেবে জব্বারের মোড় হয়ে যাওয়া সড়কের দুই পাশের দোকানগুলো স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মোড়ের পূর্ব পাশের দোকানগুলো সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়ামের সামনে, আর পশ্চিম পাশের দোকানগুলোকে সামান্য পেছনে সরিয়ে রাখা হবে।
এই মোড়ের অন্যতম পুরোনো ও জনপ্রিয় খাবারের স্থান ছিল ‘জব্বারের হোটেল’। হোটেলটির বর্তমান মালিক মাহবুব আলম, যিনি শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিত ‘হাবিব’ নামে।
হাবিব বলেন, আমি গত চার বছর ধরে জব্বার হোটেল চালাচ্ছি। চার বছর আগে দোকানটি নতুন করে গড়ে এখানে ব্যবসা শুরু করি। কিছুদিন আগে রাস্তার কাজের জন্য দোকান ভাঙতে হয়, এরপর এই নতুন জায়গায় স্থানান্তরিত হয়েছি। এখানে এসেছি মাত্র দুই মাস হলো। শুরুতে তিন মাস সময় লেগেছিল সবকিছু গোছাতে, তখন আর্থিকভাবে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হই। আমার ১৭ জন স্টাফেরও তখন অনেক কষ্ট হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, এখানে ব্যবসা এখনও পুরোপুরি জমে ওঠেনি, পরিচিতি তৈরি হতে সময় লাগছে। তবুও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমার হোটেলে খেতে পছন্দ করে। তাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো। আমি চেষ্টা করি যেন তারা ভালো খাবার পায়, কারণ অনেকেই বাড়ি থেকে দূরে থাকে। যখন দেখি আমার হোটেলের খাবার খেয়ে অনেক শিক্ষার্থী জীবনে ভালো করছে, সেটাই আমার সবচেয়ে বড় আনন্দ। আশা করি নতুন জায়গায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসা আরও ভালো হবে, জব্বারের হোটেল আবারও শিক্ষার্থীদের পছন্দের জায়গা হয়ে উঠবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত বলেন, আমরা প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে যখন বাকৃবিতে আসি, তখনই সবাই বলতো- চলো, জব্বারের দিকে যাই। এখন নতুন জায়গায় গেলে হয়ত সেই আগের আবহটা থাকবে না। তবু আশা করি, নতুন জায়গাতেও সেই আন্তরিকতা থাকবে।
তৃতীয় বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী জামি জানান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যের অংশ ছিল জব্বারের মোড় থেকে সোহরাওয়ার্দী হলে যাওয়ার রাস্তাটি। কিন্তু রাস্তার গাছ কেটে সংস্কারের নামে সেই সৌন্দর্য নষ্ট হয়েছে। ভবিষ্যতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রশাসনের আরও বিবেচনাপ্রসূত হওয়া উচিত।
সময়ের সঙ্গে অনেক কিছুই বদলে যায়। রাস্তা, ভবন, মানুষের জীবনযাত্রা। কিন্তু কিছু স্থান থেকে যায় স্মৃতির পাতায় অমর হয়ে। জব্বারের মোড়ও তেমনই এক স্থান, যা প্রজন্মের পর প্রজন্মের শিক্ষার্থীর হাসি, বন্ধুত্ব আর আবেগের সাক্ষী। নতুন রূপে বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে চললেও, জব্বারের মোড়ের গল্প, তার আড্ডা আর সম্পর্কের উষ্ণতা চিরকাল বাকৃবির ঐতিহ্যের অংশ হয়ে থাকবে। উন্নয়নের পথে এই পরিবর্তন হয়ত অনিবার্য, তবে দীর্ঘদিনের স্মৃতি ও প্রজন্মের গল্পে ভরা জব্বারের মোড় হারিয়ে গেলেও শিক্ষার্থীদের স্মৃতিতে এই জায়গা হয়ত আরও বহুদিন জেগে থাকবে।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৮/১০/২০২৫
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.
শিক্ষাবার্তা ডট কম অনলাইন নিউজ পোর্টাল
