টাঙ্গাইলঃ মা নেই—রাতের আঁধারে চিরবিদায় জানিয়েছেন পৃথিবীকে। চারপাশে শোকের মাতম, বাড়িতে চলছে দাফনের প্রস্তুতি। এমন শোকের মুহূর্তে বুক ভরা কান্না চেপে রেখে পরীক্ষার হলে গিয়ে বসলেন দুই এইচএসসি পরীক্ষার্থী। এ যেন জীবনের এক নির্মম বাস্তবতা, মায়ের মরদেহ বাড়িতে রেখে তারা দুজন পা রাখলো পরীক্ষাকেন্দ্রে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকালে টাঙ্গাইলের সখীপুরে ঘটেছে এই পৃথক দুটি হৃদয় বিদারক ঘটনা।
এরমধ্যে এইচএসসি পরীক্ষার্থী সায়মা আক্তার হাতিয়া গ্রামের মো. রায়হান খানের মেয়ে এবং লাবনী আক্তার কচুয়া পশ্চিমপাড়া এলাকার আব্দুল মান্নান মিয়ার মেয়ে। তারা দুজনই বৃহস্পতিবারের ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন মায়ের মরদেহ বাড়িতে রেখে।
সায়মা আক্তার হাতিয়া ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থী এবং সখীপুর সরকারি কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। অন্যদিকে লাবনী আক্তার সানস্টার ইনস্টিটিউট অব টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের শিক্ষার্থী, পরীক্ষা দিচ্ছেন সখীপুর আবাসিক মহিলা কলেজ কেন্দ্রে।
দুই পরীক্ষার্থীর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বুধবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে সায়মার মা শিল্পী আক্তার (৪০) নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। অপরদিকে, বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মারা যান লাবনীর মা সফিরন বেগম (৪৫)।
সায়মা ও লাবনী দুইজনই পরিবারের কনিষ্ঠ সন্তান। শোকের এমন সময়ে ভেঙে পড়লেও আত্মীয়স্বজন ও শিক্ষকদের সাহচর্যে পরীক্ষা দিতে কেন্দ্রে আসেন তারা।
পরীক্ষার দিন সকাল ১০টার আগে অশ্রুসজল চোখে কেন্দ্রে পৌঁছান সায়মা ও লাবনী। কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক ও সহপাঠীদের সহানুভূতি ও সাহসিকতায় তারা পরীক্ষায় অংশ নেন। লাবনীর মায়ের জানাজা সকাল সাড়ে ১১টায় অনুষ্ঠিত হয়। সায়মার মায়ের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বাদ যোহর।
হাতিয়া ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ রহিজ উদ্দিন বলেন, সায়মা খুবই মেধাবী শিক্ষার্থী। মায়ের মরদেহ বাড়িতে রেখে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার ঘটনাটি সত্যিই হৃদয়বিদারক। আল্লাহ যেন তাকে শক্তি দেন।
সানস্টার ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ নাছির উদ্দিনও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষা দেওয়া মানসিকভাবে অনেক কঠিন। তবুও ওরা যে সাহস দেখিয়েছে, তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৩/০৭/২০২৫
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.