ফরিদপুরঃ ফরিদপুরের নগরকান্দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক বৈশাখী ইসলাম বৃষ্টির ওপর হামলার ঘটনার পর নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফর আলীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
হামলার ঘটনার তদন্ত ও পরিস্থিতি বিবেচনায় শনিবার (৩১ মে) সন্ধ্যায় তাকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে ফরিদপুর পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো. শামসুল আজম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, প্রশাসনিক কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পুলিশ সুপারের আদেশেই এই পদক্ষেপ কার্যকর করা হয়। সফর আলী ২০২৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর নগরকান্দা থানায় ওসি হিসেবে যোগ দেন।
গত শুক্রবার (৩০ মে) সন্ধ্যায় ডাঙ্গী ইউনিয়নের ভবুকদিয়া এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় মুখ বৈশাখী ইসলাম তার ছোট বোনকে উত্যক্তকারী শরীফ বেপারীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়ে ফেরার পথে হামলার শিকার হন। শরীফ বেপারী (২১) নামে ওই তরুণ একই এলাকার বাসিন্দা। অভিযোগ অনুযায়ী, বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত লোকজনই বৈশাখীকে রাস্তায় ফেলে মারধর করে।
এ ঘটনার পর তাৎক্ষণিক এলাকায় ছুটে যান ফরিদপুরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা শাহ্ মো. আরাফাত।
তিনি বলেন, তারা ভুবকদিয়ার ঘটনা শোনার পর ফরিদপুর থেকে ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যে সেখানে হাজির হন। তারা সেখানে দুই থেকে তিন ঘণ্টা ছিলেন। তাদের ওপর হামলা করা হয়। কিন্তু প্রশাসনের কেউ আসেনি। যারা চব্বিশে আন্দোলন করেছেন, তাদের নিরাপত্তা কোথায়?—প্রশ্ন তোলেন তিনি।
কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশে শাহ আরাফাত বলেন, ‘আপনারা এসি গাড়িতে পুলিশ প্রোটেকশন নিয়ে ঘোরেন। আমরা যারা জেলা পর্যায়ে আছি আমাদের নিরাপত্তা আপনারা নিশ্চিত না করে শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করছেন।’
এদিকে হামলার ঘটনায় বিএনপিকে দায়ী করেছেন বৈশাখী ইসলাম। ফেসবুকের এক ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘রাস্তায় ফেলে বিএনপির লোকজন মারছে আমাকে। একজন মেয়ে বলে ইচ্ছেমতো চুল ধরে লাথি মেরেছে।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান মোল্লা। তিনি বলেন, এই দুই পরিবারই আওয়ামী লীগ ঘরানার। এখানে বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রীর ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। আজ গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তারা হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশের জনগণ সন্ত্রাসের রাজনীতির পরিসমাপ্তি দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। বরং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কর্মসূচিতে হামলার মাধ্যমে সারা দেশে সন্ত্রাস এবং ত্রাসের রাজনীতিকে সামনে নিয়ে আসে। হামলা এবং সন্ত্রাসের রাজনীতি থেকে পিছিয়ে নেই বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলো।
ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রীর ওপর সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমে তারা নিজেদের পুরোনো সন্ত্রাসী চরিত্রকেই সামনে নিয়ে আসছে। এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান তারা।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি দিলীপ রায়, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি তামজিদ হায়দার, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক, বিপ্লবী ছাত্র যুব-আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তাওফিক প্রিয়া, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অমল ত্রিপুরা ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০১/০৬/২০২৫
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.