এইমাত্র পাওয়া

স্কুলের বেঞ্চে বসা নিয়ে ঝগড়ার জেরে সহপাঠীদের হাতে খু-ন স্কুল শিক্ষার্থী

চট্টগ্রামঃ চট্টগ্রামে সহপাঠীদের হাতে মো. রাহাত খান (১২) নামে এক খুদে ক্রিকেটার খুন হয়েছে। বুধবার সকালে নগরীর চান্দগাঁও থানার হামিদচর এলাকায় কর্ণফুলী নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ রাহাতের চার সহপাঠীকে হেফাজতে নিয়েছে। রাহাত খান নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন সানোয়ারা ইসলাম বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। সে চট্টগ্রাম ব্রাদার্স ইউনিয়ন জুনিয়র ক্রিকেট দলের সদস্য ছিল। আগামী মৌসুমে অনূর্ধ্ব-১৪ তে খেলার জন্য তাকে বাছাই করা হয়েছিল। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, দুই মাস আগে স্কুলের বেঞ্চে বসা নিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে রাহাতের ঝগড়া হয়েছিল। সেই ঝগড়ার জেরে মঙ্গলবার তাকে পিটিয়ে নদীতে ফেলে দেয় তার বন্ধুরা। পরে সহপাঠীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মৃত অবস্থায় তাকে নদী থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় চার সহপাঠীকে আসামি করে থানায় মামলা করা হয়েছে। রাহাতের বাসা নগরীর চান্দগাঁও থানার পূর্ব ফরিদার পাড়া এলাকায়। তিন ভাইয়ের মধ্যে সে ছিল সবার ছোট।

পারিবারিক সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সকালে যথাসময়ে স্কুলে গিয়েছিল সে। ছুটির পর বাসায় না ফেরায় পরিবারের সদস্যরা স্কুলে গিয়ে খোঁজাখুঁজি করেন। এরপর তার কাছের বন্ধুদের কয়েকজনের কাছে গিয়ে তার খোঁজ পাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে বিষয়টি থানায় জানালে পুলিশ তার চার বন্ধুকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে তাদের স্বীকারোক্তিতে হামিদচর এলাকা থেকে বুধবার সকাল ৬টার দিকে রাহাতের লাশ উদ্ধার করা হয়।

কান্নায় ভেঙে পড়া শোকে মুহ্যমান রাহাতের মা রোজী আক্তার বলেন, মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত স্কুলে মাসিক পরীক্ষা ছিল। সে পরীক্ষা দিয়েছে। এরপর আধাঘণ্টা টিফিনের ছুটি ছিল। আবার ক্লাস দেড়টা পর্যন্ত। টিফিন ছুটিতে যখন বের হয়েছে, তখন বন্ধুরা খেলতে যাওয়ার কথা বলে। সে খেলার পাগল ছিল। বন্ধুদের সঙ্গে চলে গেছে। খেলার কথা বলে সেখানে নিয়ে তাকে নির্মমভাবে খুন করেছে তার সহপাঠীরা।

সানোয়ারা ইসলাম বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আবুল মনসুর চৌধুরী বলেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে বিদ্যালয় ছুটির পর রাহাতকে তার এক সহপাঠী বন্ধুর সঙ্গে গেটের বাইরে আইসক্রিম খেতে দেখা গেছে। ওই বন্ধুকে প্রধান সন্দেহভাজন হিসাবে চান্দগাঁও থানা পুলিশ নিয়ে গেছে। তারা দুজন একই সেকশনে পড়ে। এ ছাড়া পুলিশ আরও তিন ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে। তারা একই শ্রেণির হলেও ভিন্ন সেকশনের।

তিনি জানান, মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে রাহাতের বাবা-মা বিদ্যালয়ে গিয়ে সে বাসায় ফেরেনি বলে জানান। এরপর তারা নিজেরাই স্কুলের মাঠে খোঁজাখুঁজি করেন। কিছু সময় পর এক শিক্ষকের কাছে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে কল করে জানানো হয়, হামিদচরে নদীর তীরে রাহাতের স্কুলব্যাগ, জুতা, প্যান্ট পড়ে আছে। ব্যাগের ভেতর বেতনের রশিদ থেকে ওই শিক্ষকের নম্বর পেয়েছে বলে জানানো হয়। বিষয়টি রাহাতের বাবা-মাকে জানান প্রধান শিক্ষক। তখন পরিবারের লোকজন হামিদচরে গিয়ে পড়ে থাকা ব্যাগ-জুতা, প্যান্ট দেখেন এবং সেগুলো উদ্ধার করেন। তারা বিষয়টি পুলিশকে জানান।

বিকালে পুলিশের টিম ওই বিদ্যালয়ে যায়। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করেন। সেখানে যার সঙ্গে সর্বশেষ রাহাতকে আইসক্রিম খেতে দেখা যায়, তার বিষয়ে পুলিশ ও পরিবারের সদস্যদের জানান প্রধান শিক্ষক। ঘটনা তদন্তে সানোয়ারা ইসলাম বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের তিন শিক্ষককে তদন্তের দায়িত্ব দিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন।

এদিকে ছেলেকে হারিয়ে রাহাতের বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছেন। ছেলের মৃত্যু কোনোভাবেই মানতে পারছেন না বাবা লিয়াকত আলী ও মা রোজী আক্তার। স্কুলের শিক্ষক ও ক্রিকেট খেলার শিক্ষকরাও হাজির হয়েছেন রাহাতের বাসায়। কেউ বিশ্বাস করতে পারছেন না রাহাত আর নেই। সে খুন হয়েছে তার সহপাঠীদের হাতে।

ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাহাতের নিথর দেহ যখন ফরিদারপাড়া তালতলা এলাকায় নেওয়া হয়, তখন স্বজন ও প্রতিবেশীদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে এলাকার পরিবেশ।

রাহাতের সাবেক প্রাইভেট শিক্ষক মো. হেফাজ বলেন, তাকে উদ্ধারের সময় তার নাকে-মুখে রক্ত ছিল। তার অণ্ডকোষও ফেটে গিয়েছিল।

চট্টগ্রাম ব্রাদার্স ইউনিয়নের জুনিয়র ক্রিকেট কোচ মো. আবদুস ছামাদ বলেন, রাহাত যখন প্লে’তে পড়ত তখন থেকে তাকে ক্রিকেট খেলার জন্য নিয়ে আসে তার পরিবার। সেজন্য আমরা তাকে খুব বেশি কেয়ার করতাম। তার ধ্যান-জ্ঞানও ছিল ক্রিকেট। সর্বশেষ অনূর্ধ্ব-১১ থেকে সে ৪৯ রান করে নটআউট ছিল। আগামী মৌসুমে অনূর্ধ্ব-১৪ তে খেলার জন্য আমরা তাকে সিলেকশন করেছিলাম। রাহাত নেই এটা আমরা এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০১/০৫/২০২৫


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading