ঢাকাঃ ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালা ২০২৫’ চূড়ান্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিধিমালা অনুযায়ী প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার দিন থেকে নির্বাচনের ২৪ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণা করা যাবে। প্রচারণা চলবে সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত, তবে রাত ১০টার পরে মাইক ব্যবহার করা যাবে না। পাশাপাশি সব ধরনের দেয়াল লিখনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
গত ১৫ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ খানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছিল ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধি প্রণয়ন/সংশোধনের জন্য। সেই কমিটির তৈরি করা আচরণবিধি গত বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট অনুমোদন দিয়েছে। আচরণ বিধিমালায় মোট ১৭টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। অনুচ্ছেদ ৪ অনুযায়ী প্রচার সংক্রান্ত বিষয়াবলিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে ভোটার/প্রার্থী ব্যতীত অন্য কেউ কোনো প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রচার চালাতে পারবে না। অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আইনসিদ্ধ ইতিবাচক পদ্ধতিতে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো যাবে।
বিধিমালার অনুচ্ছেদ ৬ অনুযায়ী কোনো প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে কোনো সভা/সমাবেশ/শোভাযাত্রা করতে চাইলে দিন, সময় ও স্থান উল্লেখপূর্বক চিফ রিটার্নিং অফিসার/সংশ্লিষ্ট হলের অফিসারের লিখিত অনুমতি নিতে হবে অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে। একজন প্রার্থী বা একটি প্যানেলের পক্ষে প্রতিটি হলে একটি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি প্রজেকশন মিটিং (প্যানেল পরিচিতি সভা) করা যাবে। অনুচ্ছেদ ৭ এ দেয়াল বা যানবাহনে কোনো লিখন, মুদ্রণ, ছাপচিত্র বা চিত্রাঙ্কন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিলে কোনো প্রার্থী নিজের সাদাকালো ছবি ছাড়া অন্য কারো ছবি বা প্রতীক ব্যবহার করতে পারবে না এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, হল এলাকায় অবস্থিত কোনো প্রকার স্থাপনা, দেয়াল, যানবাহন, বেড়া, গাছপালা, বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের খুঁটি বা অন্য কোনো দণ্ডায়মান বস্তুতে পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল লাগানো যাবে না। অনুচ্ছেদ ১১ তে বলা হয়েছে, নির্বাচনী প্রচারণার উদ্দেশ্যে ছেলে প্রার্থী/শিক্ষার্থীরা মেয়েদের হলে ও মেয়ে প্রার্থী/শিক্ষার্থীরা ছেলেদের হলে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি নিয়ে শুধু প্রজেকশন সভায় প্রবেশ করতে পারবে।
অনুচ্ছেদ ১২ তে বলা হয়েছে ভোটাররা নিজ নিজ হলের বৈধ পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করবে। নির্বাচনী কর্মকর্তা-কর্মচারি, প্রার্থী, পোলিং এজেন্ট, রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক অনুমোদিত ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেও ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না। ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পর মোবাইল ফোন ও ইলেকট্রনিক যোগাযোগের সকল মাধ্যম বন্ধ রাখতে হবে। বুথের অভ্যন্তরে কোনভাবেই এ ধরনের কোনো ডিভাইস ব্যবহার করা যাবে না বা কোনো প্রকার ছবি তোলা যাবে না।
অনুচ্ছেদ ১৩ তে বলা হয়েছে ভোটদানের পর ভোটারদের অবিলম্বে ভোটকেন্দ্র ত্যাগ করতে হবে ও ভোটের লাইন ব্যতীত ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে জটলা তৈরি করা যাবে না এবং দীর্ঘ সময় উপস্থিত থাকতে পারবে না। নির্বাচনের দিনে ভোটার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারি ও অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তি ব্যতীত ক্যাম্পাসে অন্য সকলের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
অনুচ্ছেদ ১৭ তে বলা হয়েছে নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গ করলে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তি ও তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তবে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার প্রয়োজনবোধে স্বপ্রণোদিতভাবে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে পারবেন। কোনো প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে কেও নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানা, প্রার্থীতা বাতিল অথবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার অথবা রাষ্ট্রীয়/বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী অন্য যেকোনো দণ্ডে দণ্ডিত হবেন বলে বিধিমালায় বলা হয়েছে।
এবিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট বডি ডাকসুর গঠনতন্ত্র ও আচরণবিধির চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। খুটিনাটি কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ভাষাগত পরিবর্তনের কথাও কিছু বলা হয়েছে সেগুলো কমিটি বৈঠকে বসে ঠিক করবে। তবে এগুলো অনুমোদিত।’
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২৭/০৪/২০২৫
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.