ঢাকাঃ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছিলেন পাঁচ দিন। মিয়ানমারের ভয়াবহ ভূমিকম্পে বেঁচে থাকার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তিন মাউং হটুয়ে নির্ভর করেছিলেন শৈশবের পাঠ্যবইয়ের একটি শিক্ষা আর নিজের মূত্রের ওপর।
৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পটি আঘাত হানার সময় তিনি ছিলেন সাগাইংয়ে। এটি ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের সবচেয়ে কাছের শহর। সেখানে একটি প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নিতে গিয়েছিলেন ৪৭ বছর বয়সি এই শিক্ষক। ভূমিকম্প শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই তিনি দৌড়ে গিয়ে আশ্রয় নেন হোটেলের একটি খাটের নিচে।
স্কুলজীবনে পড়া একটি পাঠ্যবইয়ে লেখা ছিল যদি ভূমিকম্প হয়, শক্ত কোনো খাট বা টেবিলের নিচে আশ্রয় নিতে হবে। সাগাইং হাসপাতালের বেডে শুয়ে তিন মাউং বলছিলেন, খাটের নিচে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুরো হোটেলটি ধসে পড়ল। আমি শুধু বলতে পেরেছিলাম, আমাকে বাঁচাও! হাসপাতালে তার নাকে অক্সিজেন সাপোর্ট, হাতে স্যালাইন। দুর্বল কণ্ঠে তিনি বলেন, আমি চিৎকার করে বলছিলাম, আমাকে বাঁচাও, আমাকে বাঁচাও! কিন্তু কেউ শুনতে পায়নি।
সোয়াল ট নান নামের ঐ গেস্টহাউজটি ভেঙে পড়েছিল ইট ও লোহার গাদায়। তিন মাউং ছিলেন নিচতলার একটি রুমে। তিনি বলেন, আমার মনে হচ্ছিল, আমি নরকে আছি। পুরো শরীর জ্বলছিল, শুধু পানি চাইছিল। কোথাও পানি পাচ্ছিলাম না। তাই শরীর থেকে বের হওয়া তরল দিয়েই তৃষ্ণা মেটাতে হচ্ছিল। সাগাইংয়ের ধ্বংসলীলা প্রতিবেশী মান্ডালয়ের চেয়ে অনেক ভয়াবহ। শহরটির বেশির ভাগ ভবনই ধসে পড়েছে। প্রধান সড়কে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে, যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ইরাবতী নদীর ওপরের আভা ব্রিজও ধসে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, মিয়ানমার রেডক্রস মৃতদেহ উদ্ধার করছিল, জীবিত কাউকে পাওয়ার আশা করছিল না। তিন মাউংকে জীবিত অবস্থায় পাওয়ার পর একটি মালয়েশীয় উদ্ধারকারী দল তাকে উদ্ধার করে। তিন মাউংয়ের বোন নান ইয়োন (৫০) বলেন, আমি কী বলব! যখন তাকে উদ্ধার করা হলো, আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে নাচছিলাম, কাঁদছিলাম ও বুক চাপড়াচ্ছিলাম। হাসপাতালে এসে তিন মাউং বোনকে বলেছিলেন, আপু, আমি ভালো আছি। নান ইয়োন বলেন, তার ইচ্ছাশক্তি খুবই প্রবল। এজন্যই সে বেঁচে আছে। হাসপাতালের করিডরে শুয়ে আছেন তিন মাউং। ভূমিকম্পের পরবর্তী কম্পনের আশঙ্কায় কাউকেই ভবনের ভেতরে রাখা হচ্ছে না। তিনি বলেন, আমি এখন মুক্ত। মরে গেলে তো কিছুই করতে পারতাম না। আমি বেঁচে আছি, এখন যা ইচ্ছা করতে পারব। তিনি আবার স্কুলশিক্ষক হিসেবে কাজে ফিরে যেতে চান। তবে বৌদ্ধ ভিক্ষু হওয়ার কথাও ভাবছেন বলে জানালেন।
সূত্র: এএফপি
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৫/০৪/২০২৫
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.