এইমাত্র পাওয়া

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার উন্নয়নে সক্ষমতা বাড়াতে হবে: শিক্ষা উপদেষ্টা

ঢাকা: সম্প্রতি শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল (সি আর) আবরার। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে এমএ এবং অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

পেশাগত জীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন সি আর আবরার। পাশাপাশি মানবাধিকার ইস্যুতে বরাবরই উচ্চকণ্ঠ তিনি। বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানি নাগরিক, রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ব্যাপক পরিসরে কাজ করেছেন অধ্যাপক আবরার।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম-খুন, নিপীড়নমূলক ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের বিরুদ্ধেও সরব ছিলেন সি আর আবরার। অধ্যাপনা ও মানবাধিকারকর্মী হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি লেখালেখিও করেন সি আর আবরার। ওয়েস্ট ভিউ প্রেস, ম্যাকমিলান ইন্ডিয়া ও আর্থস্ক্যানের বিভিন্ন সংকলনে তার নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এক আলাপচারিতায় সাম্প্রতিক দেশকাল-এর সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক আবরার। কথোপকথনে অংশ নিয়েছেন এম ডি হোসাইন।

শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল (সি আর) ইসলাম আবরার বলেছেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার উন্নয়নে সক্ষমতা আরো বাড়াতে হবে। এ জন্য দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক ও প্রশাসনিক সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি।’ তিনি শিল্পের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘শিল্পের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে নজর রেখে আমাদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে আরো দক্ষতামুখী ও বাস্তবমুখী করতে হবে।’

অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক নয়, বরং সহায়ক কর্তৃপক্ষ হিসেবে ভূমিকা রাখবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বায়ত্তশাসন ও শিক্ষাক্রমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে তাদের একাডেমিক ও প্রশাসনিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করা হবে। এ ছাড়া গুণগতমান উন্নয়ন ও গবেষণা কার্যক্রমকে উৎসাহিত করতে নীতিগত সহায়তা দেওয়া হবে। বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর প্রক্রিয়া চলমান। এর মাধ্যমে গবেষণা ও নতুন উদ্ভাবনের সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা দেশ ও জাতির কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যথাসম্ভব সহায়তা করবে।

এ ছাড়া অধ্যাপক আবরার বলেন, ছাত্রছাত্রীদের চাহিদানুযায়ী কীভাবে মাদ্রাসা শিক্ষাকে ঢেলে সাজানো যায়, তার জন্য রাষ্ট্র কী করতে পারে, এ ক্ষেত্রে নাগরিক সমাজের ভূমিকা কী, এগুলো নিয়ে আলোচনা করতে হবে। ন্যায়নিষ্ঠ, বিজ্ঞানভিত্তিক ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, মূলত আরব বণিকরা যখন এ অঞ্চলে এসেছিলেন, তার পর থেকেই এখানে মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। মোহাম্মদ ঘুরির ভারত বিজয়ের পরে ১১৯২ সালে আজমীরে প্রথম রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। মোগল আমলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় মাদ্রাসা শিক্ষা প্রসার লাভ করে। এরপর ১৮৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মাদ্রাসা-ই-আলিয়া কলকাতা মাদ্রাসা। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। আমাদের দেশের তিনটি ধারায় শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালিত হয়। এর মধ্যে মাদ্রাসা শিক্ষা একটি অন্যতম ধারা। এ শিক্ষার সঙ্গে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ লাখ ছাত্রছাত্রী ও দুই লাখ শিক্ষক সম্পৃক্ত। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত ও অসচ্ছল পরিবার থেকে আসা ছাত্রছাত্রীদের দেখভালের দায়িত্ব মাদ্রাসা শিক্ষকদের। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে মেধা, যোগ্যতা, সময় ও সুযোগের সদ্ব্যবহার করে তাদের কর্মক্ষম করে তোলার দায়িত্ব আমাদের।

উপদেষ্টা বলেন, আমাদের রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের টাকায় চলে। জনগণের সম্পদের সদ্ব্যবহার করতে হবে। কোন খাতে, কোনভাবে ব্যয় করলে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও প্রশাসন কার কী দায়িত্ব এবং এ দায়িত্ব কীভাবে পালন করলে মাদ্রাসা শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত- এসব সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে কর্মক্ষম করা যায়- এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।

উপদেষ্টা বলেন, আমাদের গর্বের সঙ্গে মনে রাখতে হবে, ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ থেকে প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে মাদ্রাসা ছাত্রদের ভূমিকা ছিল। আমাদের দায় ও দরদ থেকে এ দেশটাকে গড়ে তুলতে হবে।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/৩০/০৩/২০২৫


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading