নিজস্ব প্রতিবেদক।। প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সবচেয়ে বিশৃঙ্খল ও জামায়াত নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই সরকারের শুরু থেকেই শিক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয় প্রফেসর ড. ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদকে। কিন্তু তিনি তার মেয়াদকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয়ই দিয়েছেন। মন্ত্রণালয়, শিক্ষাখাতের গুরুত্বপূর্ণ পদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি থেকে শুরু করে বিভিন্ন কমিটিতে বেছে বেছে বসানো হয় জামায়াত সংশ্লিষ্টদের। পাঠ্য বই নিয়ে এখনো হ-য-ব-র-ল অবস্থা সৃষ্টি হয়ে আছে।
নানা ইস্যু নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনও সামাল দিতে ব্যর্থ হন সাবেক শিক্ষা উপদেষ্টা। ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদ মন্ত্রণালয় সঠিকভাবে সামাল দিতে ব্যর্থ হওয়ায় গত ১০ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যা) হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় প্রফেসর ড. এম আমিনুল ইসলামকে। তার দায়িত্ব পাওয়ার পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ শিক্ষা পরিবারে আশার সঞ্চার হয় যে, মন্ত্রণালয়ের কাজে গতি সঞ্চার হবে। কিন্তু কোন এক অজানা কারণে প্রফেসর আমিনুল ইসলামকে পুরো সময়ই নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়। তার কাছে দেয়া হতো না কোন ফাইল, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নেয়া হতো না তার কোন মতামত। যদিও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর এম আমিনুল ইসলাম ২০০২ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ২০০৬ সালের ১৪ আগস্ট পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং ২০০৬ সালের ২৩ অক্টোবর থেকে ২০০৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়াও তিনি জানুয়ারি ২০১৮ থেকে আগস্ট ২০২৩ পর্যন্ত বাংলাদেশ মেডিকেল ফিজিক্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সাল থেকে টিএমএসএসের অ্যাডভাইজার এবং ২০২১ সাল থেকে টিএমএসএস ক্যান্সার কেয়ার সেন্টার বাস্তবায়নের স্টিয়ারিং কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করছেন।
কিন্তু বর্ষিয়ান এই শিক্ষাবিদকে মন্ত্রণালয়ে অচ্ছুত করে রাখা হয়।
মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, প্রফেসর আমিনুল ইসলাম শিক্ষাখাতে জামায়াতীকরণের বিরুদ্ধে অবস্থান ও মতামত প্রদান করায় সমন্বয়ক (জামায়াতী ঘরানার) পরিচয়ে ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদকে দিয়েই কৌশলে বিশেষ সহকারীকে সাইড করে রাখা হয়।
এমন পরিস্থিতিতে গত ৫ মার্চ প্রফেসর আমিনুল ইসলামকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী থেকে উপদেষ্টা করার সিদ্ধান্ত হয় বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়। এমনকি আমিনুল ইসলামকে বঙ্গভবনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতেও বলা হয়। বিষয়টি ওইদিনই জানাজানিও হয়। সংবাদ প্রকাশ হয় একাধিক গণমাধ্যমে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আবারো কোন অজানা কারণে তিনি বাদ পড়ে যান। নতুন উপদেষ্টা হিসেবে শপথ পাঠের আমন্ত্রণ পান প্রফেসর সি আর আবরার। তাকে গত বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
উপদেষ্টার জন্য ডাক পেয়ে বাদ পড়ার বিষয়টি নিয়ে এরপর থেকেই বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন প্রফেসর আমিনুল ইসলাম। যার প্রতিক্রিয়া হিসেবে অনেকে মনে করছেন তার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত। গতকাল সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী প্রফেসর আমিনুল ইসলাম পদত্যাগ করেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিবের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার বিষয়টি তিনি নিজেই গতকাল নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, পদত্যাগ করার জন্য প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে বারবার বলা হচ্ছিল। তাই দুপুর ২টার দিকে আমার পদত্যাগপত্র মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সচিবের কাছে পাঠিয়েছি।
এদিকে ড. এম আমিনুল ইসলামকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের মহাসচিব মো: জাকির হোসেন। তিনি গতকাল নিজের ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এমন দাবি করেন। পোস্টে তিনি লিখেছেন, নিজেদের মতো লোক বসাতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম স্যারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। সকল সেক্টরে তারা এনজিও ব্যক্তিত্ব ছাড়া বিশ্বাস করতে পারছে না।###
শিক্ষাবার্তা /এ/১১ /০৩/২০২৫
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.
শিক্ষাবার্তা ডট কম অনলাইন নিউজ পোর্টাল
