নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ ‘বঙ্গবন্ধুর দেয়া লড়াকু মন এবং বাংলাদেশের অর্থনীতির অভাবনীয় রুপান্তর” শীর্ষক স্লোগানের প্রবক্তা ও এক সময়ের আওয়ামী দাপুটে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা অধ্যাপক মোঃ সালাহ উদ্দীন আওয়ামী চেতনার ভোল পাল্টিয়ে কৌশলে বাগিয়ে নিয়েছেন আজিমপুর গভর্মেন্ট গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ। অধ্যক্ষ হয়েই ২৪ এর জুলাই গণঅভ্যত্থানকে পুঁজি করে একের পর এক অনুষ্ঠান করে কলেজের আর্থিক তছরুপ শুরু করেছেন। তিনি এখন ২৪’র জুলাই গণঅভ্যত্থানের মহান চেতনার ধারক ও বাহক।
১৬ বছরের আওয়ামী শাসন আমলে আওয়ামী মদদপুষ্ট শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা হওয়ায় তার প্রভাব ছিল সর্বত্র। এই ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসন আমলে একদিনের জন্য তাকে ঢাকার বাইরে যেতে হয়নি। আওয়ামী আমলের পুরো ১৬ বছরে তিনি ছিলেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুরস্তক বোর্ডের উপসচিব (প্রশাসন), ইডেন কলেজ, ঢাকা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, রাজধানীর হাজারীবাগের শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কলেজ এবং সর্বশেষ শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পরে আওয়ামী ভোল্ট পাল্টিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম সচিবের হাত ধরে গত ৮ অক্টোবর বাগিয়ে নিয়েছেন আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্সল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ পদ।
২০১৮ সালের আওয়ামী লীগের খাস শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তার পুরস্কার স্বরূপ তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনির হাত ধরে সরকারি বাংলা কলেজ থেকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুরস্তক বোর্ডের উপসচিব (প্রশাসন) পদে পদায়ন পান তিনি। এনসিটিবিতে পদায়ন পেয়ে সীমাহীন দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে তৎকালীন এনসিটিবির চেয়ারম্যান ও সচিব তাকে প্রত্যাহার করে অন্যত্র বদলির সুপারিশ করে। পরবর্তীতে তাকে রাজধানীর তিতুমীর সরকারি কলেজে বদলি করা হয়।
তিতুমীর কলেজে পদায়ন পেয়েই ‘বঙ্গবন্ধুর দেয়া লড়াকু মন এবং বাংলাদেশের অর্থনীতির অভাবনীয় রুপান্তর” শীর্ষক স্লোগানের প্রবক্তা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন তিনি। এই স্লোগানে একাধিক সেমিনার আয়োজন করেন। এছাড়াও আওয়ামী সভাপতি শেখ হাসিনা এবং শেখ মুজিবুর রহমান কে একাধিক সেমিনার, সভা, শেখ হাসিনার অভুতপূর্ণ সামল্য নিয়ে সার্বক্ষিণক টকশো এবং জড়ালো প্রচারের ব্যস্ত ছিলেন তিনি। তার আয়োজিত টকশো এবং সেমিনারে আওয়ামী লীগের সব প্রভাবশালী নেতাদের দেখা যেত। আওয়ামী প্রচারে সালাহ উদ্দিন এতটাই ব্যস্ত ছিলেন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা তাকে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী “আওয়ামী শিক্ষা ক্যাডার নেতা” নামেই বেশি চিনতেন।
শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, জুলাই গণঅভ্যত্থানে গত ৫ আগস্ট ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পরেই তিনি ভোল্ট পাল্টিয়ে ফেলেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্মসচিবের দপ্তরে প্রতিদিন তিনি গিয়ে বসে থাকতেন। এরপর গত ৮ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে ঐ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঐ কর্মকর্তার হাত ধরে বাগিয়ে নেন আজিমপুর গভর্নমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষের পদ। পূর্বের আওয়ামী প্রচারের অভিজ্ঞতা ও দুর্নীতিতে কাজে লাগিয়ে শুরু করেন জুলাই আন্দোলন নিয়ে সেমিনার-অনুষ্ঠান। সেসব অনুষ্ঠানে দেখা যায় যেমন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা, মাউশির গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে জুলাই গণঅভ্যত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীদের। কখনও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক সারজিস আলমকে আনেন প্রধান অতিথি করে কখনও তার অনুষ্ঠানে দেখা যায় জুলাই আন্দোলনে খাবার পানি এবং বিস্কুট বিতরণ করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়া মীর মুগ্ধের ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আজিমপুর গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, জুলাই আন্দোলন নিয়ে আমাদের স্কুলে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান হয়েছে যা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। একদিকে যেমন জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের প্রধান অতিথি করে অনুষ্ঠান করে অধ্যক্ষ সালাহ উদ্দীন জলাই আন্দোলনের ধারক-বাহক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন অন্যদিকে এই অনুষ্ঠানের পিছে মোটা অংকের অর্থের ব্যয় দেখিয়ে করেছেন আত্মসাৎ। অনেক টা “রথ দেখা কলা বেচা”র মত ব্যাপার।
তিতুমীর সরকারী কলেজের একজন অধ্যাপক বলেন, “শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা সালাহ উদ্দীন সুবিধাবাদী একজন মানুষ। আওয়ামী লীগের সময় আওয়ামী লীগের জয়গানে ব্যস্ত থাকতেন। প্রতিনিয়ত বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে টকশো আয়োজন করতেন এবং আওয়ামী গণ্যমান্য অতিথিরা তার টকশোতে অংশগ্রহণ করতেন। আওয়ামী আমলে তিনি শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রভাবশালী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত পেয়েছিলেন। এখন ভোল্ট পাল্টিয়েছেন।”
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,”সালাহউদ্দীন যখন এনসিটিবিতে কর্মরত ছিলেন, তখন থেকেই আমি এনসিটিবিতে কর্মরত আছি। যতটুকু জানি, তার অদক্ষতা ও দুর্নীতির কারনেই তৎকালীন এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ তাকে বদলির জন্য সুপারিশ করে এবং তার বদলি হয়ে যায়।”
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সুবিধাভোগী ও ভোল পাল্টানো শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ সালাহ উদ্দীন শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, “আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সঠিক নয়। আপনি সময় করে কলেজে আসেন বিস্তারিত বলব। আমি যা করেছি তার উল্টা করে উপস্থাপন করা হয়েছে।”
আওয়ামী আমলের ১৬ বছরে সুবিধা নেওয়া মোঃ সালাহ উদ্দিন কীভাবে আজিমপুর গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষচেতনার কারিগর শিক্ষা ক্যাডারের সালাহ উদ্দীন: ভোল পাল্টিয়ে বাগালেন অধ্যক্ষ পদ পদে পদায়ন পান জানতে চেয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব ছিদ্দিক জুবায়ের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি দেশের বাইরে থাকায় তা সম্ভব হয়নি।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২৪/০২/২০২৫
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.