এইমাত্র পাওয়া

বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটিতে ছেলের নামে প্রস্তাব না পাঠানোয় প্রধান শিক্ষককে মা-র-ধ-র

নোয়াখালীঃ বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটিতে ছেলের নামে প্রস্তাব না পাঠানোয় নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে প্রকাশ্যে মারধর করেছেন এক বিএনপি নেতা। আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার চরকাঁকড়া ইউনিয়নের পণ্ডিতের হাটে এ ঘটনা ঘটে।

মারধরের শিকার ওই প্রধান শিক্ষকের নাম এ এন এন ইয়াছিন। তিনি পশ্চিম চরকাঁকড়া পণ্ডিতের হাট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ঘটনার পর খবর পেয়ে বিদ্যালয়ের ক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীরা পণ্ডিতের হাটে সড়ক অবরোধ করে। পরে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা থানা-পুলিশের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার পর শিক্ষার্থীরা শান্ত হয় এবং তারা বিদ্যালয়ে ফিরে যায়।

অভিযুক্ত বিএনপি নেতার নাম মো. রেজাউল হক। তিনি চরকাঁকড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ও একই ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য। এ ছাড়া তিনি পণ্ডিতের হাটের একটি ওষুধের দোকানের মালিক এবং পল্লিচিকিৎসক হিসেবে পরিচিত।

হামলার শিকার প্রধান শিক্ষক এ‌ এন এন ইয়াছিন বলেন, তাঁর বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির মেয়াদ ছিল চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সরকারের নির্দেশে কমিটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষা বোর্ড থেকে নির্দেশ আসে ছয় মাসের জন্য তিন সদস্যের একটি অ্যাডহক কমিটি গঠনের। এ জন্য তিনজনের একটি প্যানেল তৈরি করে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী তিনি তিনজন ব্যক্তির নাম চূড়ান্ত করেন।

প্রধান শিক্ষক জানান, কয়েক দিন আগে বিএনপি নেতা রেজাউল হক তাঁর ছেলের নাম কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ করেন। প্রধান শিক্ষক তাঁকে কাগজপত্র জমা দিতে বলেন। তখন রেজাউল তাঁর ছেলের কাগজপত্র বিদ্যালয়ে জমা দিয়ে যান। কিন্তু রেজাউলের ছেলের বয়স কম হওয়ায় তাঁর নাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়নি।

এ‌ এন এন ইয়াছিন অভিযোগ করে বলেন, অ্যাডহক কমিটিতে ছেলের নামের প্রস্তাব না পাঠানোর বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হন বিএনপি নেতা রেজাউল হক। আজ বেলা ১১টার দিকে একটি জরুরি কাজে বিদ্যালয় থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে পণ্ডিতের হাটে নিজ দোকানের সামনে তাঁর ওপর হামলা চালান রেজাউল। তখন সঙ্গে থাকা বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক তাঁকে রক্ষা করেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীরা। তারা হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে দুপুর ১২টার দিকে কোম্পানীগঞ্জ-পণ্ডিতের হাট সড়ক অবরোধ করে। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এ সময় প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলাকারীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে খবর পেয়ে সেখানে কোম্পানীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাহিদ হোসেন আসেন। তখন পুলিশের উপস্থিতিতে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা রেজাউল হক প্রকাশ্যে শিক্ষকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে রেহাই পান। শিক্ষার্থীরা এ সময় রেজাউল হকের ওষুধের দোকান ভাঙচুর করে এবং তাকে দোকানের মধ্যে অবরুদ্ধ করে রাখে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চরকাঁকড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রেজাউল হক কাছে দাবি করেন, প্রধান শিক্ষককে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে একটু গালমন্দ করেছেন। তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, তিনি ওই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিতে ১৪ বছর ধরে নির্বাচিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর ছেলে মাস্টার্স পাস। আর প্রস্তাব পাঠানো তিনজন ডিগ্রি পাস। প্রধান শিক্ষক অন্য আরেকজনের সঙ্গে চক্রান্ত করে তাঁদের পছন্দের লোকজনের তালিকা পাঠান। তিনি বিষয়টি জানার পর প্রধান শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করেছেন কেবল।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী কোম্পানীগঞ্জ থানার এসআই নাহিদ হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধের জেরে স্থানীয় এক ব্যক্তি প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলা চালান। ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে। পরে তিনি গিয়ে তাদের বুঝিয়ে শান্ত করেন। অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ায় বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা হয়। এ কারণে ওই শিক্ষক আর থানায় এখনো লিখিত অভিযোগ করেননি।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০২/০২/২০২৫


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.