নিজস্ব প্রতিবেদক।। সারাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিক ১৪ হাজারের বেশি। এসব ক্লিনিকে দেওয়া হয় ১৬ ধরনের স্বাস্থ্যসেবা। সেবাগ্রহীতারা একেবারেই প্রান্তিক মানুষ। দেশের স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এই কমিউনিটি ক্লিনিক। বিশেষ করে মাতৃমৃত্যু রোধ, ভাইরাস ও ফ্লু নিয়ন্ত্রণ, শিশু সুরক্ষায় টিকা এবং ক্যানসার সচেতনতায়।
স্বাস্থ্য সম্পর্কিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ১৩টি সূচকের মধ্যে অধিকাংশই কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত। দেশের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০২০-২০২৫) সেক্টর ১০ এর স্বাস্থ্য টেবিল- ১০:২ এর লক্ষ্যমাত্রায় উল্লিখিত ১৬টি সূচকের মধ্যেও ১১টি সূচক কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমে যুক্ত।
এই পুরো প্রক্রিয়ায় নেতৃত্বে দেন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) নামের স্বাস্থ্যকর্মীরা। দেশের স্বাস্থ্যখাত ঠিক রাখতে দিনরাত এক করে কাজ করলেও প্রতিষ্ঠানটির নিজেদের স্বাস্থ্যই নাজুক। বিগত সাত মাস কর্মীরা বেতন পান না। মানবেতর জীবনযাপন করছেন এই পেশায় যুক্ত ২৫ হাজার কর্মী।
কমিউনিটি ক্লিনিক, কর্মীদের বেতন বন্ধ ৭ মাস, কবে পাবেন জানেন না কেউ
কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার নফরকান্দি কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) মো: আব্দুল হালিম শিক্ষাবার্তাকে বলেন, ‘গত সাত মাস আমাদের বেতন নেই। জীবন চালানো দায় হয়ে গেছে। আমাদের রাজস্বখাতভুক্ত করবে আশ্বাস দিলেও ১৪তম গ্রেড থেকে নিয়ে ১৬তম গ্রেডে দিয়েছে, যে গ্রেড ড্রাইভার ও পিয়নদের। অথচ আমরা স্বাস্থ্যখাতের সবচেয়ে তৃণমূলে, সরাসরি মানুষের সঙ্গে কাজ করি। আমাদের মেধা, শ্রম ও কাজের অবমূল্যায়ন হয়েছে।’
বেতন না হলেও আমাকে নিয়মিত ক্লিনিকে আসতে হচ্ছে। আমার মতো হাজার হাজার সিএইচসিপি বেতন পাচ্ছেন না। একদিকে বেতন নেই, অন্যদিকে ওষুধের সাপ্লাই নেই, তাহলে আমি কমিউনিটির মানুষদের সেবা দেবো কীভাবে?
কমিউনিটি ক্লিনিক, কর্মীদের বেতন বন্ধ ৭ মাস, কবে পাবেন জানেন না কেউ
কমিউনিটি ক্লিনিকের উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পঞ্চম স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর প্রোগ্রাম সিবিএইচসি অপারেশনাল প্ল্যানের (ওপি) কার্যক্রম এখনো চালু হয়নি।
এ নিয়ে বরগুনা সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. অরুনাভ চৌধুরী বলেন, ‘বরগুনা সদর ৩৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক আছে। কেবল বুড়িরচর ইউনিয়নে আছে চারটি। সেখানে সবার বেতন সাত মাস ধরে বন্ধ। তাদের বেতন হয় ওপির মাধ্যমে। চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর প্রোগ্রাম শেষ হয়েছে ২০২৪ সালের জুনের ৩০ তারিখ। জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে পঞ্চম এইচপিএনএসপি পাস হওয়ার কথা, যা এখনো পাস হয়নি এবং কখন পাস হবে কেউ জানে না।’
তিনি বলেন, ‘কেবল সিএইচসিপিদের বেতন বন্ধ তাই নয়, একই সঙ্গে আরও কয়েকটা জিনিস বন্ধ আছে, যা এইচপিএনএসপির আওতায় ছিল। যেমন ইউএইচএফপিওদের গাড়ির তেল বন্ধ, ড্রাইভারের বেতন বন্ধ, এমনকি তাদের চাকরি আছে নাকি নেই এটাও স্পষ্ট নয়। সবাই আশ্বাস দিচ্ছে যে সিএইচসিপিরা বেতন পাবে একসঙ্গে। কিন্তু এটা তো গ্যারান্টি না, আশ্বাস। পঞ্চম এইচপিএনএসপি পাস না হলে বেতন কীভাবে হবে এটাও বোঝা যাচ্ছে না।’
বরগুনা সদরে ৩৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক আছে। কেবল বুড়িরচর ইউনিয়নে আছে চারটি। সেখানে সবার বেতন সাত মাস ধরে বন্ধ। তাদের বেতন হয় ওপির মাধ্যমে। চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর প্রোগ্রাম শেষ হয়েছে ২০২৪ সালের জুনের ৩০ তারিখ। জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে পঞ্চম এইচপিএনএসপি পাস হওয়ার কথা, যা এখনো পাস হয়নি এবং কখন পাস হবে কেউ জানে না।- বরগুনা সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অরুনাভ চৌধুরী
বেতন কবে নাগাদ হবে জানেন না খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিটি বেজড হেলথ কেয়ারের লাইন ডিরেক্টর ডা. মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সিএইচসিপিসহ আমাদের বিভিন্ন অপারেশন প্ল্যানের ২৫ হাজার কর্মী বেতন পাচ্ছেন না। কবে হবে সেটা বলাও মুশকিল। অন্তর্বর্তী সরকার অনেক নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত এখনই নিচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের জন্য ১৫টি সংস্কার কমিশন করা হয়েছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন একটি। তাদের পর্যবেক্ষণের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় মোট ৩৮টি অপারেশনাল প্ল্যান আছে। এর মধ্যে কমিউনিটি বেজড হেলথ কেয়ার একটি। এগুলোর অপারেশনাল প্ল্যান হয় পাঁচ বছর মেয়াদি। এটা সবশেষ প্ল্যান। এরপর রাজস্বখাতে যাবে। হয়তো এ অপারেশনাল প্ল্যান এতদিনে হয়ে যেত, কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে দেরি হচ্ছে। বিভাগের লোকজনের পরিবর্তন হয়েছে। মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যক্তিও পরিবর্তন হয়েছে। নতুনরা এসে নতুন করে বুঝছেন।’
‘এদিকে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনও বলছে, ৩৮টি অপারেশনাল প্ল্যানের ডিটেইলটা দেখবেন। দেখে প্রাধান্যের ভিত্তিতে অনুমোদন দেবেন। তারপর কার্যক্রম চলমান থাকবে। বেতন, প্রশিক্ষণ ও মেডিসিন সরবরাহ হবে। এ জটিলতার জন্য আমাদের ৩৮টি অপারেশনাল প্ল্যানে কমপক্ষে ২৫ হাজার কর্মচারী বেতন পাচ্ছে না।’
সিএইচসিপিসহ আমাদের বিভিন্ন অপারেশন প্ল্যানের ২৫ হাজার কর্মী বেতন পাচ্ছেন না। কবে হবে সেটা বলাও মুশকিল। অন্তর্বর্তী সরকার অনেক নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত এখনই নিচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের জন্য ১৫টি সংস্কার কমিশন করা হয়েছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন একটি। তাদের পর্যবেক্ষণের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।-স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিটি বেজড হেলথ কেয়ারের লাইন ডিরেক্টর ডা. মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান
‘আমরা ওষুধও দিতে পারবো না। দুর্যোগের জন্য জরুরি কিছু সংরক্ষণ থাকে। আমরা সেটা দিয়ে এখন কোনো রকম চালাচ্ছি। গত আট মাস আগেই তাদের বলেছি, আমাদের এরকম একটা সময় যাবে, যাতে ওষুধ খরচে বিবেচনা করে। সেটা দিয়ে এখন আমরা চলছি। আশা করছি, আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে অপারেশন প্ল্যান অনুমোদন হবে। ওদের বেতন-ভাতাটা হবে ট্রাস্ট আইনের মাধ্যমে। সংসদে আইন হয়ে ট্রাস্টও হয়েছে, পদগুলো সৃজনও হয়েছে। সে আলোকে বেতন-ভাতা ও ওষুধ ট্রাস্ট থেকে হবে। সংশ্লিষ্ট ফাইলটা গত সপ্তাহের শুরুতেই স্বাস্থ্য থেকে অর্থ মন্ত্রাণলয়ে পাঠানো হয়ছে।’
শিক্ষাবার্তা /এ/১০/০২/২০২৫
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.