ঢাকাঃ এখন থেকে গাছ কাটতে কমিটি থেকে অনুমতি নেওয়া লাগবে বলে এক ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে গ্রাম পর্যায়ে ব্যক্তি মালিকানার গাছ কাটতে অনুমতি লাগবে না বলে জানিয়েছেন রিটের পক্ষের আইনজীবী।
মঙ্গলবার গাছ কাটা নিয়ন্ত্রণে নির্দেশনা চেয়ে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষ থেকে জনস্বার্থে করা রিটের রুল যথাযথ ঘোষণা করে এ রায় ঘোষণা করেন উচ্চ আদালত।
বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ এই রায় দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী সঞ্জয় মণ্ডল ও সেলিম রেজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. শফিকুর রহমান।
রায়ের বিষয়ে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, এই রায়ের ফলে গাছ কাটতে অনুমতি নিতে হবে কমিটি থেকে। ঢাকা ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এই কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে সাত দিনের মধ্যে ঢাকায় কমিটি গঠন করতে বলেছেন আদালত। পরিবেশবাদী, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকদের সমন্বয়ে এই কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে।
জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করতে জনপ্রশাসন সচিবকে সাত দিনের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আর জেলা প্রশাসকের নেতৃতে জেলা কমিটি এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) নেতৃত্বে উপজেলা কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে।
জেলা কমিটিতে জেলা পরিবেশ কর্মকর্তা, সরকারি কলেজের একজন শিক্ষক, স্থানীয় সমাজকর্মী, পরিবেশবিদ বা বিশেষজ্ঞ, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অথবা সাধারণ সম্পাদক এবং সিভিল সার্জনকে নিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে।
উপজেলা কমিটিতে স্থানীয় একটি কলেজের অধ্যক্ষ, সমাজকর্মী, পরিবেশবাদী, সমাজ কল্যাণ কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)’র নির্বাহী প্রকৌশলীকে রাখতে বলা হয়েছে।
রিটের পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, আদালত রায়ে বলেছেন, দেশে দিন দিন তাপমাত্রা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে গাছ সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। নির্বিচারে গাছ কাটা হলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে, যা আমাদের বেঁচে থাকার অধিকারকে খর্ব করছে। পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য যে পরিমাণ গাছ বা বনায়ন দেশে থাকা প্রয়োজন সে পরিমাণ গাছ বা বনায়ন নেই। ফলে গাছ রক্ষা করা খুবই জরুরি।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ আরও বলেন, ‘কমিটি গঠনের নির্দেশনার পাশাপাশি ২০২৪ সালে প্রণীত সামাজিক বনায়ন বিধিমালায় সামাজিক বনায়নের গাছ কাটা সংক্রান্ত একটি বিধান পরিবর্তন করতে বলেছেন হাইকোর্ট।
আদালত ‘সামজিক বনায়নের গাছ না কেটে গাছের বাজার মূল্য নির্ধারণ করে সে টাকা নির্বাচিত উপকারভোগীদের (ভূমিহীন, দুস্থ মহিলা, অনগ্রসর গোষ্ঠী, দরিদ্র আদিবাসী, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাসহ আরও অনেকেই) দেওয়ার বিধান সামাজিক বনায়ন বিধিমালায় যুক্ত করতে বলেছেন।’
এক প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বলেন, ‘সামাজিক বনায়নের গাছ কাটাই যাবে না। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে যেকোনো গাছ কাটতে কমিটির অনুমতি লাগবে। তবে গ্রাম পর্যায়ে ব্যক্তি মালিকানার গাছ কাটতে অনুমতি লাগবে না বলে জানান এই আইনজীবী।’
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২৯/০১/২০২৫
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.