পাঁচ মাস ধরে উধাও ৩ শিক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

নাশকতার অভিযোগে মামলা হওয়া, একসঙ্গে দুটি স্কুলে চাকরি করা, টাকা আত্মসাৎসহ গুরুতর নানা অভিযোগ থাকলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে তিন শিক্ষক। গত পাঁচ মাস ধরে উধাও তারা। স্থানীয়রা বলছেন, বারবার চিকিৎসাজনিত ছুটি নিয়ে বহাল তবিয়তে আছেন আদমদীঘি সরকারি প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দোসর শেখ সাদি।

এ ছাড়া ৫ আগস্টের পর থেকে উপজেলা সদরের রহিম উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবদুর রহমান ও আইপিজে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনজু আরা বেগম দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত। তারপরও এই তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আজ অবধি শাস্তি বা আইনগত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস। শুধু কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েই দায় সারা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুমানা আফরোজ বলেন, দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন। প্রাইমারি স্কুলের সহকারী শিক্ষক শেখ সাদির ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, শিক্ষক শেখ সাদির চিকিৎসাজনিত ছুটির আবেদন ও ডাক্তার কর্তৃক ব্যবস্থাপত্র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

আদমদীঘি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুর রহিম প্রধান বলেন, সহকারী শিক্ষক শেখ সাদি ৩ দফায় চিকিৎসাজনিত ছুটির আবেদন করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার কোনো ছুটিই মঞ্জুর হয়নি। তার ছুটির সব কাগজপত্র বগুড়া ডিপিও অফিসে পাঠানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে নাশকতার মামলার বিষয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, এ ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই। তিনি যদি ওই মামলায় গ্রেফতার হন তখন আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারব।

আদমদীঘি সরকারি প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজা বেগম বলেন, সহকারী শিক্ষক শেখ সাদি গত ২৯ আগস্ট এক মাসের জন্য চিকিৎসা ছুটির আবেদন করেন। এরপর গত ৩০ অক্টোবর ২য় দফায় এক মাসের ছুটির আবেদন করেন। এরপর ৩য় দফায় ডাকযোগে ছুটির আবেদন করলে আমরা তা গ্রহণ করিনি। এরপর থেকে অদ্যাবধি তিনি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত।

এদিকে অভিযুক্ত তিন শিক্ষকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর থেকে নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ছাড়াই অনুপস্থিত রয়েছেন অভিযুক্ত তিন শিক্ষক। শিক্ষক শেখ সাদি দিব্যি সুস্থ থেকেও বারবার চিকিৎসাজনিত ছুটি নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তিনি এ পর্যন্ত মোট তিন দফা ছুটি নিয়েছেন। আওয়ামী আমলে প্রভাব খাটিয়ে একসঙ্গে দুটি বিদ্যালয়ে চাকরি, ডোনেশনের প্রায় ৮০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

নাশকতা মামলার আসামি হওয়ার পর থেকে তিনি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত আছেন। আওয়ামী লীগের পদ-পদবিধারী অভিযুক্ত অপর দুই শিক্ষকও ইউএনও বরাবর চিকিৎসা ছুটির আবেদন করলেও তা মঞ্জুর হয়নি। শিক্ষিকা মনজু আরা বেগম আদমদীঘি উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং অধ্যক্ষ আবদুর রহমান উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক বলে জানা গেছে। আওয়ামী সরকার পতনের পর থেকে তারা লাপাত্তা থাকলেও বহাল তবিয়তেই স্বপদে বহাল রয়েছেন।

শিক্ষাবার্তা /এ/১৯/০১/২০২৫