এইমাত্র পাওয়া

বেরোবিতে ৭৫ লাখ টাকার ল্যাব ছয় বছর ধরে অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে

রংপুরঃ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) বিজনেস অনুষদে প্রায় ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি কম্পিউটার ল্যাব প্রায় ছয় বছর ধরে অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। এই ল্যাবের সরঞ্জামগুলো প্রায় নষ্ট হয়ে গিয়েছে এবং এটি শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো কাজে আসছে না। ফলে শিক্ষার্থীরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে, ২০১২-১৪ এ ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের অর্থায়নে উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়ন প্রকল্পের সংক্ষেপে এইচখিউইপির আওতায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মাধ্যমে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস অনুষদকে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপনের জন্য ৭৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন বিজনেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক মতিউর রহমানের হাত ধরেই এই কম্পিউটার ল্যাবটি কার্যক্রম শুরু করা হয়। সেসময় ল্যাবটি দেখার জন্য আলাদা করে জনবল রাখা হয়েছিল। কিন্তু ২০১৯ সালের পরবর্তী সময়ে কম্পিউটার ল্যাবের জন্য আলাদা করে জনবল রাখা হয়নি। ২০২০ সালে করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাব শুরু হলে বাংলাদেশে স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকারি নির্দেশে বন্ধের ঘোষণা আসে। এর প্রভাব পড়ে বিজনেস অনুষদের কম্পিউটার ল্যাবে। যার ফলে প্রায় প্রতিটা কম্পিউটার বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়ায় সেটি আর শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করতে ব্যর্থ হয়। যার ফলে করোনা পরবর্তী সময়ে বন্ধ থাকায় এক থেকে দেড় বছর পর কম্পিউটারগুলো আর চালু করা সম্ভব হয়নি। অন্য কারণ হিসেবে অনুসন্ধান করে দেখা যায় যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে অপর্যাপ্ত জনবল থাকায় তাদের বিভিন্ন বিভাগ ও প্রশাসনিক ভবনের বিভিন্ন দফতর তাদের রাখা হয়। পর্যাপ্ত জনবল না থাকার ফলে কম্পিউটার ল্যাবটির জন্য আলাদাভাবে আর লোক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এভাবেই দিন দিন অকেজো হতে থাকে কম্পিউটারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। ফলে এক সময় অচল হয়ে পড়ে ল্যাবটি।

এ বিষয়ে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী মারুফ হাসান রিফাত বলেন, আমি আর্টস ফ্যাকাল্টি থেকে নিজের ইচ্ছেতেই বিভাগ পরিবর্তন করে বিজনেস ফ্যাকাল্টিতে আসি। গত-সেমিস্টারে দুইটি কোর্স ছিল। একটি হলো ‘Computer In Business’ এবং দ্বিতীয়-টি হলো ‘Statistics In Business’ দু’টি কোর্সের সাথেই কম্পিউটার প্রাকটিক্যাল কোর্সও ছিল ১.৫ ক্রেডিটের। কিন্তু আমরা কি করলাম, আমরা প্রাকটিক্যাল পরীক্ষাগুলোও দিলাম লিখিতভাবে। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব দুর্ভোগ খুবই খারাপ লাগে। যেখানে পরিসংখ্যান কোর্সে SPSS শেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সেগুলো শিখলাম থিউরিতে। আশা রাখি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসান খুব দ্রুত এই সমস্যাগুলোর সমাধান করবে। যেন পরবর্তী ব্যাচগুলোকে এই দুর্ভোগ না পোহাতে হয়!

কম্পিউটার ল্যাবটির বিষয়ে জানতে চাইলে তৎকালীন বিজনেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান বলেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে একটি প্রকল্প যার নাম ছিল হেকেপ। সেটির মাধ্যমে আমাদের ৭৫ লাখ টাকা দেয়। পরে আমার নেতৃত্বেই ল্যাবটি স্থাপন করা হয়। আমি তখন প্রজেক্টটির এইচপিএম ছিলাম। ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু আমি যখন ডিন ছাড়লাম, এখান থেকে জনবলগুলো আস্তে আস্তে বিভিন্ন জায়গায় পদায়ন করা হয়। পরবর্তীতে ল্যাবটি অব্যবহারযোগ্য থেকে গেল। এরপর করোনার মধ্যে গোটা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় কম্পিউটারের বিভিন্ন জিনিসপত্র দীর্ঘদিন অকেজো থাকে।

মতিউর রহমান ল্যাবটি সম্পর্কে আরও বলেন, দশ বছর পর আবার ডিনের দায়িত্ব পেলে কয়েকবার মৌখিকভাবে এবং চিঠিও দিয়েছি। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে ল্যাবটি ঐভাবেই থাকে। বিগত প্রশাসনের অনিচ্ছায় অনাগ্রহের কারণে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

ল্যাবটি শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করার বিষয়ে জানতে চাইলে বিজনেস অনুষদের বর্তমান ডিন অধ্যাপক ফেরদৌস রহমান বলেন, আমরা ল্যাব টি চালু করার কাজ হাতে নিয়েছি। শিগগিরই চালু হবে।

নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার বেলাল বলেন, কম্পিউটার ল্যাব রিপেয়ার করার জন্য আমাদের কাছে একটা চিঠি আসে। কম্পিউটার ল্যাব মেরামতের জন্য আমরা ৪ লাখ ১৭ হাজার ১৪০ টাকার একটা চিঠি রেজিস্ট্রারকে দিয়েছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ড. হারুন অর রশীদ বলেন, দায়িত্ব নিয়ে এটার খোঁজ নিয়েছি। কম্পিউটারগুলো মেরামতযোগ্য। চালু করা সম্ভব। কাজ শুরু হয়ে গেছে। আভ্যন্তরীণ লোকজনই করবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলী বলেন, কম্পিউটার ল্যাবটির বিষয়ে যথাযথভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ ও লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়া হবে। এই বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি এবং যেগুলোতে ল্যাব নেই সামনে সেগুলোতে ল্যাব দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৫/১২/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.