রাজবাড়ীঃ নেই পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র। করছেন না আইনের তোয়াক্কাও। রাজবাড়ীতে ফসলি জমি, আবাসিক এলাকা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে গড়ে তোলা হয়েছে একের পর এক অবৈধ ইটভাটা। এসব ভাটায় আবার কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এতে শুধু পরিবেশই বিষাক্ত হচ্ছে না, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও। শ্বাসকষ্ট, হাঁপানিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ। অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস প্রশাসনের।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রাজবাড়ী সদরের দর্পনারায়ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ ইটভাটা। যার বিষাক্ত ধোঁয়ায় দুষিত হচ্ছে পরিবেশ। মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েই ক্লাস করছে ছোট ছোট কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এ ভাটার অন্যপাশে আবার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। কালো ধোঁয়ায় মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে ফসলেরও।
দর্পনারায়ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আরফান বলেন, ‘ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় আমাদের নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। প্রচুর ধুলোবালি থেকে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ছি। এছাড়া ইট তৈরির মেশিনের অতিরিক্ত শব্দদূষণের ফলে মাথা ব্যথায় ক্লাস ঠিকভাবে করা যায় না।’
আরেক শিক্ষার্থী লামিয়া আক্তার বলে, ‘ইটভাটার ট্রাক চলাচলের কারণে রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে আমাদের ভয় লাগে। এছাড়া রাস্তার ধুলোবালি আমাদের গায়ে লেগে স্কুল ড্রেস নোংরা হয়ে যায়। ইটভাটাটি বন্ধ করে দেয়া হলে আমাদের জন্য ভালো হবে।’
সদরের কল্যাণপুর বাজারের পাশে দুটি ইটভাটায় নির্বিঘ্নে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এরমধ্যে একটি ভাটা চালানো হচ্ছে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে। গোয়ালন্দ উপজেলার ভাগলপুরে আবাসিক এলাকায় রেল লাইনের পাশে পাঁচটি ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। এসব ভাটাতেও নির্বিঘ্নে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।
পদ্মা পাড়ের জেলা রাজবাড়ীর পাঁচ উপজেলায় ফসলি জমি, আবাসিক এলাকা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে গড়ে উঠেছে এমন অসংখ্য ইটভাটা।
স্থানীয়রা জানান, ‘বেশিরভাগ ইটভাটার নেই প্রশাসনের লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র। এসব ভাটায় কয়লার পরিবর্তে নির্বিঘ্নে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। বিষাক্ত ধোঁয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গাছপালা, কমে গেছে ফসলের উৎপাদন।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় বছরের পর বছর অবাধে চলছে এসব অবৈধ ইটভাটা।
সদরের দর্পনারায়ণপুর গ্রামের কৃষক মো. হিরণ বলেন, ‘ফসলি জমির পাশের ইটভাটার ধোঁয়া ও ধুলোবালিতে আমাদের ফসলে নানা রোগ হচ্ছে। উৎপাদনও কমে গেছে। ঘরবাড়ির চালা ও আসবাবপত্র নষ্ট হচ্ছে। শিশুরা শ্বাসকষ্ট, হাঁপানিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।’
ভাগলপুর গ্রামের মতিয়ার রহমান বলেন, ‘ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় এনে পোড়ানো হচ্ছে। ইটভাটার ট্রাক চলাচলের কারণে ধুলোবালিতে রাস্তায় চলা যায় না। বৃষ্টি হলে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে।’
মাহফুজ খান নামে একজন বলেন, ‘প্রশাসনের সামনেই গাছপালা উজাড় করে ইটভাটাগুলোতে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। অথচ এ বিষয়ে প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।’
পরিবেশ অধিদফতর রাজবাড়ী কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা ২৭ টি অবৈধ ইটভাটাকে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য নোটিশ দিয়েছি। যদি তারা কার্যক্রম বন্ধ না করে তাহলে আমরা আইনগত পদক্ষেপ নেব।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, ‘আমার কথা একদম স্পষ্ট। যদি কোন ইটভাটা থেকে পরিবেশ দূষিত হয় বা পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রসহ যেসকল বৈধ কাগজপত্র থাকার কথা তা না থাকে; তাহলে আমরা সেসকল ইটভাটার বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেব। আর কোন অবস্থাতেই আমরা ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোকে সমর্থন করি না। কোন ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো হলে তাদের বিরুদ্ধেও দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
উল্লেখ্য, পরিবেশ অধিদফতরের তথ্যমতে, রাজবাড়ী জেলার ৭০টি ইটভাটার মধ্যে অনুমোদন আছে মাত্র ২০টির।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৩/১২/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.