এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া।।২০২৪ সালের শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সাপ্তাহিক ছুটি ৫৪, অন্যান্য ছুটি ৭৬, সর্বমোট ছুটি ছিল ১৮০ দিন। কর্মদিবস পাওয়া গেছে ১৮৫ দিন। নানান কারণে আরও কিছুদিন গ্যাপ পড়লেও ধরে নিচ্ছি ১৮৫ দিনই ক্লাস হয়েছে।
ক্লাসে সিলেবাস অনুযায়ী, শ্রেণিকক্ষে পাঠদান পরিচালিত হয়েছে। ছুটিতে ‘সহায়ক গ্রন্থ’ পড়তে হয়। কিন্তু শিক্ষক, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্লাসের আগে-পরে বা ছুটিতে লাইব্রেরি ওয়ার্ক কিংবা সহায়ক গ্রন্থ পাঠ করার প্রবণতা একেবারেই কম। জিজ্ঞেস করলে জবাব আসে, শ্রেণিকক্ষের বই পড়েই শেষ করা যায় না, শিক্ষার্থীরা সহায়ক গ্রন্থ পড়বে কখন? প্রশ্ন হলো, ৩৬৫ দিনের মধ্যে ১৮০ দিন (৪৯.৩১% সময়) ছুটি পাওয়ার পরও কি এ কথা গ্রহণযোগ্য হবে? তা হলে আর কতদিন বন্ধ পেলে, এই সময় মিলবে? আসলে সদিচ্ছা বা আন্তরিকতার অভাব।
আমাদের দেশে মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক স্তরের স্কুল-মাদ্রাসায় শিক্ষাবর্ষ শুরু হয় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে। অর্থাৎ ইংরেজি বছরের প্রথম মাসে (জানুয়ারি), শেষ হয় ডিসেম্বরে, বার্ষিক বা সমাপনী পরীক্ষার মধ্য দিয়ে। বর্তমানে ডিসেম্বর চলছে। প্রতিষ্ঠানগুলোতেও চলছে বার্ষিক পরীক্ষা। ২৮ নভেম্বর বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে, শেষ হবে ১১ ডিসেম্বর। বড়জোর ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে। এর পর প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে কমবেশি ১৫ দিন, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এই সময়কে ‘ডিসেম্বর ভ্যাকেশন’/‘উইন্টার ভ্যাকেশন’ (শীতকালীন ছুটি) বলা যায়। কারণ এই সময়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের শ্রেণি পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ থাকে। তবে ‘ওল্ড টেন’ বলে পরিচিত এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে ‘বিশেষ ক্লাস’ চালু থাকে, যা চলে সেন্টার পরীক্ষার আগ পর্যন্ত।
ডিসেম্বরে ভ্যাকেশনে শিক্ষকরা ব্যস্ত থাকেন খাতা দেখা, রেজাল্ড শিট তৈরি ও এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিশেষ কোচিংয়ে পাঠদানের কাজে। প্রশ্ন হলো, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির সাধারণ শিক্ষার্থীরা ডিসেম্বর ভ্যাকেশনে কী করবে? কীভাবে সময় কাটাবে? এ নিয়ে শিক্ষক, অভিভাবক, প্রশাসন থেকে কোনো দিকনির্দেশনা আছে কিনা, জানার চেষ্টা করেছি। সফল হইনি।
এই ভ্যাকেশনে শিক্ষার্থীরা নিজেদের সম্ভাব্য যেসব কাজে যুক্ত রাখতে পারে, তা হলো : ১. বই পড়া ২. সৃজনশীল কাজ, যেমন, ধর্মীয় শিক্ষার ঘাটতি পূরণ, শুদ্ধ বানানরীতি, আবৃত্তি, ড্রইং ও সংগীত প্রভৃতি শেখা ৩. নানা-নানির বাড়ি বেড়ানো ৪. দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন ৫. সংসারের কাজে সহযোগিতা প্রভৃতি। তবে সব ছাপিয়ে আমাদের সুপারিশ থাকবে সহায়ক বই পড়ার প্রতি।
স্কুল-মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটি ও শিক্ষকম-লীর প্রতি অনুরোধ, পরীক্ষা চলাকালে অর্থাৎ ছুটি শুরুর আগেই প্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগার থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নামে বই ইস্যুর ব্যবস্থা করুন। শিক্ষার্থীরা বই বাড়ি নিয়ে যাবে, অবকাশ যাপনের পাশাপাশি বিনোদন হিসেবে সহায়ক গ্রন্থ পড়বে।
তারা চাইলে বইপাঠ শেষে ২০০ শব্দের পাঠ প্রতিক্রিয়া জমা দিতে পারে। লেখা যাচাই-বাছাই করে মানসম্মত লেখার জন্য তাদের পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এভাবেই শিক্ষার্থীদের মাঝে বইপাঠের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। উল্লেখ্য, বছরের শুরুতে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে শ্রেণি পাঠদানের চাপ কম থাকে। এই সময়টাতেও শিক্ষার্থীরা প্রচুর সহায়ক গ্রন্থ পড়তে পারে। এতে মেধার বিকাশ হবে। শিক্ষা বোঝা নয়, বিনোদন মনে হবে।
বইয়ের উৎস : ১. নিজেদের প্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরি ২. সরকারি কিংবা বেসরকারি গ্রন্থাগার ৩. আর্থিক সামর্থ্য সাপেক্ষে বই কেনা ৪. বিবিধ (নিজস্ব উদ্যোগে সংগ্রহ)।
এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া : সভাপতি, বাংলাদেশ গ্রন্থসুহৃদ সমিতি ও বেরাইদ গণপাঠাগার, ঢাকা
শিক্ষাবার্তা /এ/১১/১২/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.
শিক্ষাবার্তা ডট কম অনলাইন নিউজ পোর্টাল
