এইমাত্র পাওয়া

বেগম রোকেয়া দিবস আজ

 নিউজ ডেস্ক।। 
আজ ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবস। বাঙালি নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়ার কর্ম ও আদর্শ স্মরণ করে প্রতিবছর ৯ ডিসেম্বর পালিত হয় দিবসটি।
নারী সমাজের উন্নয়নে অসামান্য অবদানে বেগম রোকেয়া ২০০৪ সালে বিবিসি বাংলার ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি’ জরিপে ষষ্ঠ নির্বাচিত হন।  

খ্যাতিমান বাঙালি সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক এবং নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যু দিন আজ সোমবার, ৯ ডিসেম্বর। তাই দিবসটি সরকারিভাবে পালিত একটি জাতীয় দিবস।

এ দিনে বেগম রোকেয়ার অবদানকে স্মরণ করে নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অধিকার ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের অনন্য অর্জনের জন্য বেগম রোকেয়া পদক প্রদান করা হয়।

বিবিসি বাংলার জরিপে ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি’ তালিকায় অন্যতম বীরযোদ্ধা তিনি। মহীয়সী এ নারীর পুরো নাম বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। তিনি ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

রোকেয়ার জন্মের সময় মুসলিম সমাজে মেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর কোনো চল ছিল না। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই পড়ার প্রতি বেশ আগ্রহ গড়ে ওঠে ছোট্ট রোকেয়ার। তাই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও পরিবারের সবার অগোচরে বেগম রোকেয়া তার বড় ভাইয়ের কাছে উর্দু, বাংলা, আরবি ও ফারসি পড়তে এবং লিখতে শেখেন।

পড়ালেখার প্রতি প্রবল আগ্রহ থাকায় ভাইরাই বোন রোকেয়ার শিক্ষার দায়িত্ব নেন। তার জীবনে শিক্ষালাভ ও মূল্যবোধ গঠনে শুধু ভাই নয়, বড় বোনও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। তবে বিয়ের পর রোকেয়ার শিক্ষার হাল ধরেন তার স্বামী সাখাওয়াত।

১৮৯৮ সালে বিহারের ভাগলপুরে সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয় রোকেয়ার। স্বামী সাখাওয়াত ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। সমাজসচেতন, কুসংস্কারমুক্ত এবং প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন স্বামীর উৎসাহে ও নিজের আগ্রহে রোকেয়া উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ওঠেন।

জীবনে শুধু নিজেই শিক্ষিত হতে চাননি রোকেয়া। চেয়েছিলেন শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে পুরো নারী সমাজকে। তিনি তার লেখা ‘সুলতানার স্বপ্ন’-র মাধ্যমে স্বাগত জানিয়েছেন বাংলার অবরোধবাসিনী নারীদের জেগে ওঠার।

স্বামীর মৃত্যুর পর রোকেয়া তার সম্পত্তি দিয়ে নির্মাণ করেন বেশ কয়েকটি নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯০৯ সালে যাত্রা শুরু করে রোকেয়ার প্রথম নির্মত স্কুল সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল। নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে মাত্র ৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু হয় স্কুলটির।

নারীদের জন্য নির্মিত রোকেয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই বাংলার পিছিয়ে পড়া নারীদের কাছে পৌঁছে যায় মুক্তির পয়গাম। তার হাত ধরেই এ দেশের নারী সমাজ আজ যেমন দেশ পরিচালনার কাজে সফল তেমনি সফল অন্যান্য সেক্টরেও।

কুসংস্কার আচ্ছন্ন নারী সমাজ রোকেয়ার হাত ধরেই আজ বিশ্বের বুকে পুরুষের সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছেন, রাখছেন সফলতার চিহ্ন।

জীবিত অবস্থায় বেগম রোকেয়া সব সময়ই লড়ে গেছেন নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায়। নারীরাও যে মানুষ, তাদেরও যে রয়েছে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকার তিনিই প্রথম বলেছেন বলিষ্ঠ কণ্ঠে।

একাধারে প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। তার উল্লেখযোগ্য রচনা হলো-মতিচূর, সুলতানার স্বপ্ন, পদ্মরাগ, অবরোধ-বাসিনী ইত্যাদি। তার লেখাতেও ফুটে ওঠে নারী জাগরণের গান।

নারী সমাজের উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য বেগম রোকেয়া ২০০৪ সালে বিবিসি বাংলার ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি’ জরিপে ষষ্ঠ নির্বাচিত হন। শিক্ষার আলোকবর্তিকা এ মহীয়সী নারী ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর মারা যান।


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading