নিউজ ডেস্ক।। সরকারি গাড়ি নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির শেষ নেই। নিয়ম ভেঙে সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ি ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। প্রকল্প শেষে গাড়ি জমা দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এসব অনিয়ম রোধে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) অধীনে একটি কেন্দ্রীয় যানবাহন ডাটাবেজ (তথ্যভাণ্ডার) করা হচ্ছে।
এর আগে মন্ত্রণালয়, বিভাগসহ সব সরকারি দপ্তরের যানবাহন ব্যবস্থাপনার নিজস্ব ডাটাবেজ করতে হবে। এ বিষয়ে গত ২ ডিসেম্বর সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি বৈঠক করেছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া। বৈঠকে প্রত্যেকটি সরকারি দপ্তরের সচল ও অচল গাড়ির ডিজিটাল ডাটাবেজ দ্রুত করার জন্য বলা হয়েছে।
আমরা সরকারি গাড়ির একটি কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডার তৈরি করতে চাই। কত গাড়ি আছে, কী অবস্থায় আছে, কে ব্যবহার করছে- সে তথ্য থাকবে তথ্যভাণ্ডারে। গাড়ি ব্যবস্থাপনাটা এখন একটা অস্বচ্ছ অবস্থার মধ্যে আছে। কেউ জানে না কার কাছে কত গাড়ি আছে, প্রজেক্টের কত গাড়ি আছে, আর অর্গ্যানোগ্রামের কত গাড়ি আছে, সেই গাড়িগুলো কারা ব্যবহার করছে।- প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া
এর আগে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে ডাটাবেজের জন্য সরকারি যানবাহনের তথ্যাদির বিষয়ে একটি ছকও করে দেওয়া হয়। ছকে মন্ত্রণালয়, বিভাগ, প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পের সচল যানবাহনের প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন নম্বর, যানবাহনের ধরন, ক্রয়ের সাল, চালিত কিলোমিটার, ব্যবহারকারীর নাম ও পদবি এবং চালকের নাম উল্লেখ করার জন্য বলা হয়েছে।
ব্যবহার অনুপোযোগী যানবাহনের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন নম্বর, যানবাহনের ধরন, ক্রয়ের সাল, বৈকল্যের সাল, বৈকল্যের কারণ ও গৃহীত ব্যবস্থা (বিক্রয়, নিলাম, জমাকরণ ও অন্যান্য) বিষয়ে উল্লেখ থাকতে হবে।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গত ২ সেপ্টেম্বর সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ম ভেঙে (প্রাধিকার বহির্ভূত) গাড়ির ব্যবহার কঠোরভাবে বন্ধের নির্দেশনা দিয়ে সব মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে চিঠি পাঠায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। পরে ২৪ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকেও এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা সরকারি গাড়ির একটি কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডার তৈরি করতে চাই। কত গাড়ি আছে, কী অবস্থায় আছে, কে ব্যবহার করছে- সে তথ্য থাকবে তথ্যভাণ্ডারে। গাড়ি ব্যবস্থাপনাটা এখন একটা অস্বচ্ছ অবস্থার মধ্যে আছে। কেউ জানে না কার কাছে কত গাড়ি আছে, প্রজেক্টের কত গাড়ি আছে, আর অর্গ্যানোগ্রামের কত গাড়ি আছে, সেই গাড়িগুলো কারা ব্যবহার করছে। এসব তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে নেই আমাদের কাছে।’
বিআরটিএতে তো সবার গাড়িই রেজিস্ট্রেশন করা লাগে। ইঞ্জিন নম্বর, চেসিস নম্বরও তাদের কাছে থাকে। তাই বিআরটিএকে দিয়ে কেন্দ্রীয় ডাটাবেজের কাজটি করানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে নিজেদের ডাটাবেজটা নিজেদেরই করতে হবে। গত ২ ডিসেম্বরের সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।- সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের পরিবহন কমিশনার মো. আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীর
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তর যানবাহন নিয়ে একটি তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলবেন। এসব তথ্যের সমন্বয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে বিআরটিএতে তথ্যভাণ্ডার স্থাপন করা হবে। এর মাধ্যমে আমরা সব সরকারি গাড়ির হিসাব পাবো। এতে গাড়ি ব্যবস্থাপনাটা সহজ ও স্বচ্ছ হবে। যে সব অনিয়মের কথা শোনা যায়, সেগুলোও কমানোর ক্ষেত্রে এটি একটি পদক্ষেপ। এরপর হয়তো অন্য বিষয়গুলোও আসবে।’
মুখ্য সচিব বলেন, ‘কোনো কোনো মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে তাদের গাড়ির ব্যবস্থাপনাটা ডিজিটালাইজড করেছে। সবাইকে এ ব্যবস্থায় আসতে হবে। যারা করেনি মিটিং করে তাদের আমরা তাগিদ দিয়েছি তাড়াতাড়ি এটা করার জন্য। তাদের তথ্যগুলো নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে তথ্যভাণ্ডার তৈরি হবে।’
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.