এইমাত্র পাওয়া

ছিলেন আ’লীগে ভোল পাল্টে এখন বুটেক্সের ভিসি!

ঢাকাঃ ৫ আগস্ট পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনার গুণকীর্তক করতে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠতেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জুলহাস উদ্দিন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে ছিল তার দহরম মহরম। সেই তিনি এখন বনে গেছেন খাঁটি ‌‘জাতীয়তাবাদী’। বাগিয়ে নিয়েছেন বুটেক্সের উপাচার্য (ভিসি) পদ।

জানা গেছে, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) খণ্ডকালীন সদস্য হয়েছিলেন বুটেক্সের ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জুলহাস উদ্দিন। আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদে ২০১৯ সালে বুটেক্সের তিন সদস্যবিশিষ্ট উপাচার্য প্যানেলের দুই নম্বরে ছিলেন এই অধ্যাপক। যদিও পরবর্তী সময়ে তালিকার এক নম্বরে থাকা অধ্যাপক মো. আবুল কাশেম বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য হন। সাধারণত, ক্ষমতাসীন দলের অনুসারীরাই ইউজিসির খণ্ডকালীন সদস্য কিংবা উপাচার্যের প্যানেলে থাকেন। কিন্তু গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরে রাতারাতি বিএনপি বনে গেছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বাধা দান করেও এবং জীবনে কখনো বিএনপির রাজনীতি না করেও তিনি ছাত্র-জনতার রক্তে গড়া সরকারের উপাচার্য হয়েছেন। আওয়ামী লীগের ভিসি প্যানেলে থাকার সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকার পরও আওয়ামী লীগের আমলে বঞ্চিত উল্লেখ করে উপাচার্য হয়ে যান অধ্যাপক জুলহাস উদ্দিন। বিষয়টি নিয়ে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে।

সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং সাবেক শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইনের স্বাক্ষর সম্বলিত ভিসি প্যানেল অনুমোদনের চিঠি রয়েছে প্রমাণ হিসেবে। তাতে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে বুটেক্সের উপাচার্য নিয়োগের জন্য তিন সদস্যের প্যানেল পাঠানো হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। সেই তালিকায় এক নম্বরে ছিলেন অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. আবুল কাশেম, দুই নম্বরে ছিলেন অধ্যাপক ড. মো. জুলহাস উদ্দিন এবং তিন নম্বরে ছিলেন ফ্যাব্রিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহ আলিমুজ্জামান। শেখ হাসিনা তালিকার এক নম্বরে থাকা অধ্যাপক আবুল কাশেমকে উপাচার্য হিসেবে অনুমোদন দেন। এরপর ওই বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি তাতে স্বাক্ষর করেন। এরপর বাকিদের স্বাক্ষর শেষে প্রজ্ঞাপন জারি হয়।

জানা গেছে, বুটেক্স তেজগাঁওয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্বাচনী এলাকা হওয়ায় তিনি অধ্যাপক জুলহাস উদ্দিনকে উপাচার্য বানাতে ডিও লেটার দিয়েছিলেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকও ডিও লেটার দেন। ড. রাজ্জাক ও অধ্যাপক জুলহাস- দুজনের বাড়ি টাঙ্গাইলে। সে কারণে ড. রাজ্জাকের সঙ্গে সম্পর্কের সূত্রে তার জন্য ডিও লেটার পাঠানো হয়। এরপর একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ অনুসারী প্রমাণিত হওয়ার পর তিন সদস্য বিশিষ্ট উপাচার্য প্যানেলের দুই নম্বরে স্থান পান এই অধ্যাপক।

অধ্যাপক জুলহাসের একাধিক সহপাঠী জানিয়েছেন, বুটেক্স এক সময় টেক্সটাইল কলেজ ছিল। অধ্যাপক জুলহাস এই কলেজের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। কিন্তু কখনোই ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। কিন্তু মাঝে দুইবার বিএনপি-জামায়াত ঘরানার টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি পদে নির্বাচন করে দুইবারই অজনপ্রিয় হওয়ায় বিপুল ব্যবধানে পরাজিত হন। তারপরও এই ফোরাম থেকে অন্যদের সঙ্গে তিনিও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান এবং ছবি তোলেন। এখন তিনি অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে হেরে যাওয়া এবং সেই ছবিকে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে ট্রাম্পকার্ড হিসেবে ব্যবহার করেন। ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি নিজেকে সাবেক ছাত্রদল নেতা ও বিএনপির অনুসারী বলে দাবি করতে থাকেন।

বুটেক্সের শিক্ষার্থীরা জানান, জুলাইয়ের মাঝামাঝি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা আসার পর অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো মাঠে নামে বুটেক্সের শিক্ষার্থীরা। সে সময় তারা অধ্যাপক জুলহাস উদ্দিনকে তাদের সমর্থন জানাতে বললেও তিনি সেটি করেননি। কিন্তু সরকার পতনের পরে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষক সমাজ ব্যানারে তিনি ঠিকই মাঠে নামেন। জানতে চাইলে বুটেক্সের একজন শিক্ষার্থী বলেন, জুলহাস স্যার কখনোই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছিলেন না। তিনি ৬ আগস্টের পর শিক্ষকদের দাবি নিয়ে মাঠে নামেন। তাকে আমরা পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের লোক হিসেবেই চিনি। তিনি ডিন থাকা অবস্থায় তার নিজ বিভাগের তার ছাত্র এই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাকিরুল ইসলাম পিয়াসকে নিজ বিভাগে নিয়োগ দেন। আওয়ামী লীগ ছাড়া গত সরকারের আমলে তিনি কিছু বুঝতেনই না।

বুটেক্স সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে টেক্সটাইল কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন ছিলেন জুলহাস। বিশ্ববিদ্যালয়ে দরপত্রের মাধ্যমে ক্রয়কৃত মালামাল বুঝে নেওয়ার কমিটির (এক্সেপটেন্স কমিটি) আহ্বায়কও ছিলেন অধ্যাপক জুলহাস। এই পদে তিনি সরকার পতনের আগ পর্যন্ত ছিলেন। এই সময়ে কোনো টেক্সটাইল মেশিনারি তিনি টাকা ছাড়া ছাড়পত্র দেননি বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক ঠিকাদার। তিনি কমিটির আহ্বায়ক এবং রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী থাকায় তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আবুল কাশেমও এক্ষেত্রে ছিলেন নিরুপায়।

সূত্র আরও জানিয়েছে, টেক্সটাইল কলেজ থাকাকালীন ২০০৭ সালে টেস্টিং অ্যান্ড কনসালটেন্সি সার্ভিস ফি’র সাড়ে ৯ লাখ টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন। সে সময় জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেছেন, ফাইল কেবিনেটে এই টাকা রাখা ছিল। দরজা ভেঙে চোর সেই টাকা নিয়ে গেছে। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, বিভিন্ন কাঁচামাল পরীক্ষা করার জন্য টেক্সটাইল কলেজকে যে ফি দেওয়া হতো, সেটি সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকে রাখার নিয়ম ছিল। সেটি না করে তিনি তালা-চাবিবিহীন ফাইল কেবিনেটে রেখেছেন এবং সেখান থেকে চুরি হয়েছে বলে মুখরোচক গল্প সাজিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে সে সময় তদন্ত কমিটি গঠন হয়। সেই কমিটি ব্যাংকে টাকা না রেখে ফাইল কেবিনেটে টাকা রাখা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এরপর ইঞ্জিনিয়ার মাসুদ আহমেদ অধ্যক্ষ হলে তিনি সেই টাকা ফেরত দিতে তার ওপর চাপ দিতে থাকেন। পরে অধ্যাপক জুলহাস তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে সেই টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হন।

বুটেক্স থেকে জানা গেছে, বেশ কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে অতিথি শিক্ষক হিসেবে ক্লাস নেন অধ্যাপক জুলহাস। সূত্রমতে, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি ও নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ক্লাস নিতেন। উপাচার্য হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ক্লাস নিয়েছেন। কিন্তু এখান থেকে যে আয় হয়, তার ২৫ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তিনি সেটি দেননি। এমনকি তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমতি নেওয়ার ধার ধারেননি। তার এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে বার বার প্রশ্ন উঠেছে, তবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর লোক হিসেবে তিনি ক্ষমতার দাপটে এসব থোড়াই কেয়ার করেছেন।

বুটেক্স সূত্র জানিয়েছে, অধ্যাপক জুলহাস উদ্দিনের বিশ্বস্ত বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-রেজিস্ট্রার মুহম্মদ শরীফুর রহমান ও সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) হোসাইন মুহাম্মদ আকবর। তাদের দুজনের স্ত্রীসহ একাধিক আত্মীয় বুটেক্সে কর্মরত। এর মধ্যে শরীফের স্ত্রী শারমিন আক্তারকে প্রথমে অ্যাকাউন্টস অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে তাকে সহকারী পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। নিয়োগের সময় এই পদের জন্য তার প্রত্যাশিত যোগ্যতা ছিল না। অন্যদিকে আকবর টাঙ্গাইলের মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় কেনাকাটায় অনিয়ম করে মালপত্র বুঝিয়ে না দিয়ে চলে আসায় ওই বিশ্ববিদ্যালয় এখনো তাকে ছাড়পত্র দেয়নি। পূর্বের কর্মস্থল থেকে ছাড়পত্র আনতে না পারায় বুটেক্সে তার বর্তমান পদের চাকরি এখনো স্থায়ী হয়নি। বর্তমান উপাচার্য দায়িত্ব গ্রহণের পর সেসব ধামাচাপা দেওয়া হয়।

উপ-রেজিস্ট্রার মুহম্মদ শরীফুর রহমান সাবেক আওয়ামী ভিসি মাসুদ আহমেদের আমলে ব্যাপকভাবে নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছিলেন। অধ্যাপক. জুলহাস উদ্দিন ভিসির দায়িত্ব নিয়েই নিয়োগ বাণিজ্য করার উদ্দেশে মুহম্মদ শরীফুর রহমানকে রেজিস্ট্রার দফতরের প্রশাসন শাখায় বদলি করে আনেন। বিতর্কিত কর্মকর্তাকে বদলি করে আনায় উপাচার্যের অসৎ উদ্দেশ্য প্রমাণিত হয়। শরীফুর রহমানের বিরুদ্ধে বুটেক্স কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ, এর আগে প্রশাসন শাখায় থাকা অবস্থায় নিয়ম লঙ্ঘন করে তিনি নিজ স্ত্রীকে তিনি হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বানিয়েছেন। অথচ, এই পদের জন্য তার কাম্য যোগ্যতাই ছিল না। এমনকি স্ত্রীর নিয়োগ বোর্ডের আবেদন ও কাগজপত্র তিনি নিজেই বাছাই করেছিলেন বলে বুটেক্সে চাউর আছে। যদিও কাগজপত্রে তিনি স্বাক্ষর করেননি। নিজেই বাছাই করায় তিনি বিপুলসংখ্যক যোগ্য আবেদনকারীকে তিনি সে সময়ে বাদ দেন।

জানা গেছে, বুটেক্সের বর্তমান ভিসি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তার নিজ বিভাগ ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রভাষক পদে বুটেক্স শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাকিরুল ইসলাম পিয়াসের নিয়োগ দেন। এ নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অধ্যাপক জুলহাস ডিন ও সিলেকশন কমিটির প্রধান থাকা অবস্থায় যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও তার ছাত্র পিয়াসকে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। শাকিরুল ইসলাম পিয়াস বুটেক্সের ৩৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি ২০১৩ সালে বুটেক্সের ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ হতে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ২০১৬ সালের ২৯ মে বুটেক্সে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। নিয়োগকালীন সময়ে তিনি বুটেক্স ছাত্রলীগের সাধারণত সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নীতিমালা থাকলেও প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একাডেমিক ফলাফলের দিক থেকে বিভাগের প্রথম, দ্বিতীয় অথবা পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থীদেরই পরবর্তীতে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে দেখা যায়। তবে শাকিরুল ইসলাম পিয়াসের স্নাতকের ফলাফলে দেখা যায় নিজ বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ ৪৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনি হয়েছেন ৪২তম। অর্থাৎ তিনি শেষের দিক থেকে দ্বিতীয় হয়েছেন। সেই নিয়োগে ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৩৩, ৩৪ ও ৩৫তম ব্যাচের চূড়ান্ত ফলাফলে প্রথম স্থানধারীসহ মোট ১৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। তবে তাদের কাউকেই শিক্ষক হিসেবে নেওয়া হয়নি।

জুলহাস উদ্দিন ডিন থাকা অবস্থায় তার নিজ পিয়ন জোবায়েরকেও কৌশল করে পদোন্নতি দিয়েছেন। এই পিয়নের বিরুদ্ধে কাজকর্মে ফাঁকিবাজি ও অনিয়মের অভিযোগ থাকায় আগের ডিনরা তাকে পদোন্নতি দেননি, এসিআর খারাপ দেন। অধ্যাপক জুলহাস ডিন হয়ে সেই পিয়নকে পদোন্নতি দিতে এসিআর ভালো দিতে এক বছর অন্য সবার পদোন্নতিও বন্ধ রাখেন। এক বছর পর সেই জোবায়েরকে সর্বোচ্চ নম্বর দিয়ে এসিআরে পরে অন্য সবার সঙ্গে পদোন্নতি দেন। নিজের গাড়িচালক হারুনকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টাও করেছিলেন তিনি। কিন্তু বিআরটিএর পরীক্ষায় সেই গাড়িচালক ডিসকোয়ালিফাইড হয়ে যান। পরে তাকে আর নিয়োগ দিতে পারেননি।

জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয় ও এডিবির অর্থায়নে বুটেক্সে স্কিলস ফর ইন্ডাস্ট্রি কম্পিটিটিভনেস অ্যান্ড ইনোভেশন প্রোগ্রাম (সিসিপ) নামে একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। গত তিন বছর ধরে এর প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ছিলেন অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন। সম্প্রতি উপাচার্য হয়েই অধ্যাপক জুলহাস তাকে সরিয়ে ঘনিষ্ঠ মশিউর রহমানকে পিডি এবং মমিনুল হককে উপপ্রকল্প পরিচালক করেন। ডিপিপিতে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পিডি নিয়োগের কথা বলা হলেও এক্ষেত্রে কনিষ্ঠ একজনকে পিডি করা হয়েছে।

তবে নিজের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন ড. মো. জুলহাস উদ্দিন। তিনি দাবি করেন, তিনি ভিসির দায়িত্ব নেওয়ার পর আওয়ামী লীগের কিছু লোকজনকে সরিয়ে দেন। ফলে সেই লোকেরা তার পেছনে লেগেছে।

আওয়ামী লীগ আমলে ভিসি নিয়োগের খসড়া তালিকায় নিজের নাম থাকা প্রসঙ্গে তিনি দাবি করেন, এ ব্যাপারে কিছু জানেন না। তিনি বলেন, আমি আরও আগেই ভিসি হতাম। শুধু বিরোধী মতের হওয়ার কারণে আমাকে ভিসি বানানো হয়নি।

নিজেকে জাতীয়তাবাদী আদর্শের লোক পরিচয় দিয়ে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের লোকজন এসব তথ্য ছড়াচ্ছে। মূলত আমি আসার অল্প কয়েক দিনের মধ্যে কিছু পদে পরিবর্তন এনেছি। তাই তারা ক্ষিপ্ত।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২৮/১১/২০২৪ 


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading