এইমাত্র পাওয়া

দুই জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে ডিঙ্গিয়ে অধ্যক্ষ পদে বিভাস চন্দ্র সাহা

নিজস্ব প্রতিবেদক।। রাজধানীর পুরান ঢাকার সলিমুল্লাহ কলেজে দুই সিনিয়র শিক্ষককে ডিঙ্গিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে একই কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বিভাষ চন্দ্র সাহার বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী দুজন শিক্ষিকা হলেন অধ্যাপক শিরিন আখতার ও অধ্যাপক কানিজ নাছরীন। ইতিমধ্যে অধ্যাপক শিরিন আখতার অবসরে গিয়েছেন (অভিযোগ আছে তাকে জোর করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব হস্তান্তরে বাধ্য করা হয়েছে)। অন্যদিকে অধ্যাপক কানিজ নাছরীন অবসরে যাবেন ২০২৫ সালের আগস্ট মাসে। ভুক্তভোগী এখন নিজের অধিকার ফিরে পেতে হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়েছেন।

জানা যায়, রাজধানীর টিপু সুলতান রোডে অবস্থিত সলিমুল্লাহ কলেজের অর্থনীতি বিভাগে ৬/১১/১৯৯৪ সালে যোগ দেন অধ্যাপক কানিজ নাছরীন। নিয়োগের পরেই অজানা কারণে ১৯৯৬ সালে জ্যেষ্ঠতা হারানোর খবর পান তিনি। বিভিন্ন সময়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের গঠিত একাধিক তদন্ত কমিটি জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করলেও তার প্রায়োগিক অধিকার পাননি। সম্প্রতি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রেও হয়েছেন বঞ্চিত।

সর্বশেষ গত ১৮ জুলাই সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালীন অবস্থায় নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় কলেজটির আরেক শিক্ষক বিভাষ চন্দ্র সাহাকে।

জানা যায়, ২০২৩ সালের ৬ জুলাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সলিমুল্লাহ কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি বরাবর একটি চিঠি প্রেরণ করা হয়। চিঠিতে ‘২০১৯ এর ধারা ৪(ক) এর ২(i) ও (ii) মোতাবেক অধ্যক্ষ পদ শূন্য হলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে উপাধ্যক্ষ বা জ্যেষ্ঠতম পাঁচ জন থেকে যেকোনো একজনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করে সেটা আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে বলা হয়। সে মোতাবেক জ্যেষ্ঠতম শিক্ষক শিরিন আখতারকে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়। জানা যায়, শিরিন আখতার উক্ত দায়িত্ব নিতে অনুৎসাহী থাকায় তাকে বোঝানো হয় যে তিনি জ্যেষ্ঠ বিধায় চাকরি করতে চাইলে দায়িত্ব নিতে বাধ্য, নতুবা সিভিল সার্জন কর্তৃক অসুস্থতা জনিত অপারগতা প্রকাশ করতে হবে। তখন অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে শিরিন আখতার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

সর্বশেষ অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে গত ৫ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে একটি পরিপত্র জারি করা হয়। পরিপত্রটির ‘ক’ অনুচ্ছেদে বলা হয়, ‘স্নাতক (পাস) কলেজে সহকারী প্রধান শিক্ষক বা উপাধ্যক্ষ ব্যতীত অন্য কোন শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষের দায়িত্বভার অর্পণ করা যাবে না। তবে সহকারী প্রধান শিক্ষক বা উপাধ্যক্ষের পদ শূন্য থাকলে কর্মরত শিক্ষকদের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠতম সহকারী শিক্ষক বা জ্যেষ্ঠতম সহকারী অধ্যাপককে প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করতে হবে।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পরিপত্র জারির পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ধরনের চিঠির প্রাধান্য থাকে না। তাছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিঠিটি গত বছরের, আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রটি চলতি বছরের শুরুতে। আর এ ধরনের কলেজগুলোর ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র প্রাধান্য পাবে। যেকোনো পরিপত্র জারি হলে, তার আগের পরিপত্র বা নিয়মগুলো স্বাভাবিকভাবেই গ্রহণযোগ্যতা হারায় এবং নতুন পরিপত্রের নির্দেশনাই কার্যকর হয়।

সলিমুল্লাহ কলেজের একটি সূত্র জানায়, কলেজটির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিভাষ চন্দ্র সাহা উপধ্যক্ষ পদে আবেদন করেছিলেন। যদিও এই শিক্ষকের কাগজপত্রে ত্রুটি থাকায় উপাধ্যক্ষ পদে তার আবেদনটি বাতিল হয়ে যায়। এছাড়া সম্প্রতি কলেজের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, হিসাবরক্ষকসহ বেশকিছু পদে নিয়োগের সার্কুলার হয়েছে, সাবেক অধ্যক্ষ শিরিন আখতার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থাকাকালীন পদগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগ বাণিজ্য বা অনিয়মের সুযোগ ছিলো না। তাই গত ১৮ জুলাই জোরপূর্বক শিরিন আখতারের স্বাক্ষর নিয়ে বিভাষ চন্দ্র সাহার কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়। এতে সহায়তা করেন গভর্নিং বডির তৎকালীন সভাপতি আব্দুল্লাহ মন্নাফী (মার্শাল) যিনি ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর দ্বিতীয় পুত্র। তবে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিবেদন ও কানিজ নাছরীনের আবেদন যাচাই করে দেখা গেছে, সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পরিপত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হওয়ার কথা কানিজ নাছরীনের। এই শিক্ষিকা ১৯৯৪ সালে সলিমুল্লাহ কলেজে যোগদান করেন এবং ১৯৯৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে তার এমপিও শুরু হয়। অপরদিকে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিভাষ চন্দ্র সাহার এমপিও শুরু হয় ১৯৯৫ সালের মে মাসে, অর্থাৎ কানিজ নাছরীনের তিন মাস পর। অবশ্য বিভাষ চন্দ্র সাহার দাবি তিনি ০১-০৯-১৯৯৪ তে যোগদান করেছেন (অ্যাডহক) এবং কানিজ নাছরিন ০৬-১১-১৯৯৪ তে যোগদান করেছেন।

১৯৯৬ সালে প্রথম কানিজ নাছরীন জ্যেষ্ঠতা হারানোর খবর পান। পরে এ বিষয়ে ১৯৯৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। ২০০৫ সালে কলেজ কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেই কমিটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করলে সেখানেও কানিজ নাছরীনকে বিভাষ চন্দ্র সাহার জ্যেষ্ঠ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। অভিযোগ আছে ২০০৭ সালে মোহাম্মদ সাঈদুল হক তালুকদার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থাকাকালীন জিবি মিটিংয়ে বিভাষ চন্দ্র সাহাকে জ্যৈষ্ঠ দেখানো হয়। মোহাম্মদ সাঈদুল হক তালুকদার নিজের এবং তার সাথে নিয়োগপ্রাপ্ত আরও তিন শিক্ষক বিভাষ চন্দ্র সাহা, সাজেদা পারভীন চৌধুরী ও আব্দুছ ছবুর গাজীর স্বার্থচরিতার্থ করতেই এমনটা করেন বলে ভুক্তভোগীর অভিযোগ। এমনকী ২০০৭ সালে মোহাম্মদ সাঈদুল হক তালুকদার যখন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন, তখনও জ্যেষ্ঠ ৫ জনের একজনের ৬ মাসের জন্য দায়িত্ব পাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ১৫ নম্বর ক্রমিকে থাকা মোহাম্মদ সাঈদুল হক তালুকদার ৬ মাসের পরিবর্তে প্রায় ২ বছর (২৬/২/০৭ – ০২/০২/০৯) পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। ২০০৯ সালেও একইরকম বিতর্ক সৃষ্টি হয় এবং সর্বশেষ ২০১৬ সালে গভর্নিং বডির একটি সভায় সর্বসম্মতিক্রমে কানিজ নাছরীনকে জ্যেষ্ঠতার স্বীকৃতি দেয়া হয়। একইসাথে বিষয়টি নিয়ে কোন বিতর্কের সুযোগ নেই বলেও সুপারিশ করা হয়। সেই সাথে, তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারী নিয়ম অনুসরণ করতে বলা হয়। কিন্তু, তখনকার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো: রুস্তম আলী তা করেননি। মো: রুস্তম আলীর বিরুদ্ধে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থাকা অবস্থায় (তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে) ৮ লক্ষ ৭৫ হাজার ৯৭৭ টাকা তহবিল তছরুপের অভিযোগ আছে। তাই, জ্যেষ্ঠতার স্বীকৃতির সাথে সংশ্লিষ্ট অধিকার কানিজ নাছরীনকে প্রদানের কথা বলা হলেও কার্যত তিনি তা পাননি।

সম্প্রতি কলেজের গভর্নিং বডিতে পরিবর্তন আসে। বর্তমান সভাপতি নিযুক্ত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ টি এম জাফরুল আজম। তিনি দৈনিক আমাদের সময়কে জানান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর উক্ত কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতির দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে কলেজের কতগুলো সমস্যার বিষয়ে জেনেছি, তবে বিষয়গুলো আমার দায়িত্ব গ্রহণের আগের। অধ্যাপক বিভাষ চন্দ্র সাহা ও কানিজ নাছরিনের বিষয়টি এখন হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।। হাইকোর্ট থেকে যে আদেশ দেবেন, সেটাই করব আমরা।

তিনি আরো বলেন, শতবর্ষী একটা কলেজের এমন করুণ অবস্থা দেখে আফসোস হয়। আমি বেশকিছু অনিয়মের কথাও শুনেছি, আমরা আপাতত সেগুলো নিয়ে কাজ করছি। যতদূর জানি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী অধ্যক্ষের পদে জ্যেষ্ঠ ৫ জন শিক্ষকের যেকোনো একজনকে দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। আবার মাউশি থেকে অধ্যক্ষ নিয়োগের ব্যাপারে একটা তথ্যতে বলা হয়েছে জ্যেষ্ঠতম সহকারী শিক্ষক বা জ্যেষ্ঠতম সহকারী অধ্যাপককে প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করতে হবে। আমরা কোনটা অনুসরণ করবো এটা নির্দিষ্ট করে বলা নেই।আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে চিঠি দেওয়া হয় সেই চিঠিতে সলিমুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজকে নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে এখন যেহেতু বিষয়টি হাইকোর্টে রয়েছে।হাইকোর্ট থেকে সমাধান আসলে ব্যাপারটা ভালো হয়।

কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শিরিন আখতারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘স্থায়ী অধ্যক্ষ না থাকায় প্রতি ৬ মাসের জন্য জ্যেষ্ঠতম শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদানের একটি পরিপত্র আছে। পুরনো প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আমার অধ্যক্ষ পদের মেয়াদ শেষ হয় ১৮ জুলাই। কিন্তু, বর্তমান পরিপত্র অনুযায়ী (পূর্ণাঙ্গ অধ্যক্ষ নিয়োগ সম্পন্ন না হলে) শেষ কার্যদিবস (অর্থাৎ ২১/১০/২৪ তারিখ) পর্যন্ত আমারই দায়িত্বে থাকার কথা। নিয়োগ প্রক্রিয়া অনেকটা এগিয়ে গেলেও নিয়োগ প্রক্রিয়া তখনও অনেকটা বাকি থাকায় পরবর্তী অধ্যক্ষ নিয়োগ বিষয়ে ২৪/০৬/২৪ তারিখের গভর্নিং বডির সভায় আলোচনা হলেও কোনো নাম প্রস্তাব ছাড়াই সভা শেষ হয়। পরে ১৮/০৭/২৪ তারিখ সন্ধার পরে গভর্নিং বডির সভাপতি এসে অধ্যক্ষ পদে বিভাষ চন্দ্র সাহার নাম প্রস্তাব করেন। আমি সেখানে রাজি হইনি। কারণ কোনক্রমেই বিভাষ চন্দ্র সাহা সিনিয়র নয়। পরবর্তীতে তারা আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে বাধ্য করেন। তবে সেই মিটিংয়ের রেজুলেশনে আমার স্বাক্ষর নেই। কারণ জ্যেষ্ঠতম শিক্ষক হলেন কানিজ নাছরীন।’

তিনি আরো বলেন, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিভাষ চন্দ্র সাহা আমার বকেয়া প্রোভিডেন্ট ফান্ড, বকেয়া ২৫% বেতন, চার্জ অ্যালাউয়েন্স, অবসর ফান্ডের টাকা বিভিন্ন অযুহাতে আটকে রেখেছে। আমাকে এক প্রকার মানসিক নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। আমাদের কলেজে কতিপয় শিক্ষক এবং সাবেক গভর্নিং বডির সদস্যরা সংঘবদ্ধ চক্র হয়ে কাজ করে। এদের নেতৃত্ব দেন দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ সাঈদুল হক তালুকদার। তিনিও অধ্যাপক কানিজ নাছরিন পরে যোগদান করেন কিন্তু অবৈধভাবে নিজের যোগদানের কয়েকমাস আগের তারিখ থেকে সরকারি অর্থ ভোগ করে আসছেন। এছাড়া এই চক্রে আরো আছে বিভাষ চন্দ্র সাহা, মো. আমিনুল ইসলাম, শামীমা হাফিজ, মো. গোলাম মর্তুজা, মোঃ দেলোয়ার হোসেন, মোহাম্মদ আরশেদ আলী।

অধ্যাপক কানিজ নাছরীন বলেন, আমি সবসময় সত্যের পথে থেকেছি, কোনোদিন অন্যায়ের সাথে আপোষ করিনি। আর এই শেষ বয়সে এসেও আমাকে আমার অধিকারের জন্য লড়তে হচ্ছে। ‘ষড়যন্ত্রের মুখে আমার জ্যেষ্ঠতা কেড়ে নেয়া হয়েছে বারবার, আমাকে আমার প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হয়নি। আমার নিয়োগ হয়েছে ৬/১১/৯৪ তে এবং বিভাষ চন্দ্র সাহা’র নিয়োগ ৯/৪/৯৫ তে। তাহলে, তিনি আমার চেয়ে সিনিয়র হওয়ার দাবী কীভাবে করেন? বিভাষ চন্দ্র সাহা’র নিয়োগ প্যানেলে দুইজন ছিলো, যেকোনো প্যানেলে ন্যূনতম তিন জন থাকতে হয়। তাহলে তার নিয়োগই বা বৈধ হয় কী করে? বিভাষ চন্দ্র সাহা’র স্থায়ী নিয়োগ পেয়েছে ৯.৪.৯৫ তে কিন্তু তিনি ১.৯.৯৪ থেকে যে বানোয়াট এড-হক দেখিয়ে ২২০ দিনের অতিরিক্ত টাকা নিয়েছে সেটাও একটা জালিয়াতি। বিভাষ চন্দ্র সাহা জালিয়াতি করে সরকারের টাকা নিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, হাইকোর্ট থেকে জ্যৈষ্ঠতম জনকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিতে বলা হয়েছে।কিন্তু বর্তমান চেয়ারম্যান ড এ টি এম আযম, তিনি দায়িত্বে এসেই আমাকে রিট তুলে নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন এবং পরবর্তীতে ৬/৯/২৪ তারিখে লেখা একটি চিঠি ৮/৯/২৪ তারিখ আমাকেপ্রদান করেন, যেখানে স্পষ্টত তিনি হাইকোর্টের বিরুদ্ধে গিয়ে বিভাষ চন্দ্র সাহাকে তিনি সিনিয়র বলে দাবী করেন। আমি চাই আমার সিনিয়রিটির সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত সিনিয়রিটির অধিকার প্রতিষ্ঠা হোক। বিভাষ চন্দ্র সাহা এবং বাকি যারা অবৈধ আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন তারা সেটা সরকারকে ফেরত দিক। সর্বক্ষেত্রে ন্যায় প্রতিষ্ঠা হোক।’

অভিযোগের বিষয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিভাষ চন্দ্র সাহা বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অসত্য। আমি কোনো জালিয়াতি করিনি।আমি অধ্যাপক কানিজ নাছরিনের চেয়ে জ্যৈষ্ঠ এবং আমার সব লিগ্যাল ডকুমেন্ট আছে এ বিষয়ে। আমি ০১-০৯ -৯৪ সালে যোগদান করেছি এবং অধ্যাপক কানিজ নাছরিন ০৬- ১১ – ৯৪ তে যোগদান করেছেন।আমি তার থেকে ২ মাস ০৬ দিন আগে যোগদান করেছি। আমার অ্যাডহক হিসেবে নিয়োগের কাগজপত্রও আছে। আমি তখন থেকেই বেতন পাই। তাছাড়া এই বিষয়টি হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, অধ্যক্ষের বিষয়ে যখন মিটিং হয়েছে তখন আমি উপস্থিত ছিলাম না। এগুলোর বিষয়ে গভর্নিং বডি ভালো বলতে পারবে। আমি কারো বেতন আটকিয়ে রাখিনি।বেতন উঠাতে হলে যার বেতন তার সিগনেচার প্রায়োজন হয় ও অধ্যক্ষের সিগনেচার প্রয়োজন হয়।যার বেতন সে যদি সিগনেচার না দেয়,তাহলে আমি কিভাবে আটকিয়ে রাখলাম বেতন। জানা যায়, কলেজের বেতন যায় ব্যাংকে। ব্যাংকে বেতন যাওয়ার জন্য অধ্যক্ষ ও সভাপতির স্বাক্ষর প্রয়োজন হয়।

এ বিষয়ে সলিমুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ সাঈদুল হক তালুকদারকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান নিয়ম অনুসারে ও গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত অনুসারে আমরা সমস্ত কাগজপত্র, লিগ্যাল ডকুমেন্টের উপর ভিত্তি করে দেখেছি অধ্যাপক বিভাষ চন্দ্র সাহা – অধ্যাপক কানিজ নাসরীনের থেকে জ্যৈষ্ঠ।


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.