এইমাত্র পাওয়া

কাজী আজহার আলী কলেজের উপাধ্যক্ষ মুজিবুরের বিরুদ্ধে অনিয়মের পাহাড়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ বাগেরহাট জেলার ফকিরহাটের কাজী আজহার আলী কলেজের উপাধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ  হাওলাদার মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, দুর্নীতি, অসদাচরণ, স্বেচ্ছাচারিতা ও প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা করা, অধ্যক্ষ পদে আবেদন করেও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করাসহ অভিযোগের পাহাড় জমেছে। এক ব্যক্তির অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতায় ডুবতে বসেছে এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী এ কলেজটি। উপজেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে কলেজটির অভ্যন্তরীণ অডিটে ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম ধরা পরায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হলেও আজ পর্যন্ত ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,  দীর্ঘদিন ধরে কলেজটিতে অধ্যক্ষের পদ শূন্য থাকায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন উপাধ্যক্ষ হাওলাদার মুজিবুর রহমান। টানা এই দায়িত্ব পালনকালে বেসরকারি কলেজের অর্থ আয় ও ব্যয়ের কোন নিয়মনীতি না মেনে বিল ভাইচার ছাড়া কিংবা ফটোকপিতে বিল ভাইচার করে নামে বেনামে খরচ দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব থাকায় কলেজটিতে একটি সংঘবন্ধ চক্র তৈরি করেছেন তিনি। ফলে তার আর্থিক অনিয়ম এবং ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসদাচারণ নিয়ে কেউ কোন কথা বলা কিংবা প্রতিবাদ করার সাহস করেনি। 

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, পতিত হাসিনা সরকারের ছত্রছায়ায় অনিয়ম করে পার পেয়ে যাওয়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাওলাদারের রুমে কলেজের একাডেমিক কাজে বিভিন্ন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা আসলেও তিনি সিগারেট (অধ্যক্ষের চেয়ারে বসে) ধরিয়ে কথা বলতে থাকেন। শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের বিভিন্নভাবে অপমান অপদস্থ করেন। 

শিক্ষাবার্তার হাতে আসে কলেজটির পাঁচ বছরের অডিট প্রতিবেদনে প্রায় ১৮ লাখ টাকার অডিট আপত্তি পাওয়া যায় যা হাওলাদার মজিবুর রহমান বিভিন্ন নামে বেনামে বিল দেখিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। উপজেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে এই অডিট কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন তৎকালীন ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা বেগম এবং সদস্য হিসেবে ছিলেন, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সবুর আলী ও  উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মিলন কুমার দাশ। পাঁচ বছরের করা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে অডিট আপত্তিতে দেখা যায়, অগ্রিম ভাউচারের (ডেবিট ভাউচার) মাধ্যমে টাকা নিয়ে খরচের ভাউচার (ক্রেডিট ভাউচার) অফিসে জমা দেওয়া হয়নি যা  নিয়ম পরিপন্থী। কোন কমিটির আহ্বায়কের নামে ইস্যু করা ডেবিট ভাউচার থেকে তাঁর অবগতি ও স্বাক্ষর ব্যতীত টাকা উত্তোলন; এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে গ্রহণকারীরও স্বাক্ষর ব্যতীত টাকা উত্তোলন খুবই আপত্তিকর।  নিরীক্ষাকালীন সময়ে কলেজে ভিন্ন ভিন্ন শিরোনামে ০৫টি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ চলছিল। দেখা যায় যে, উপাধ্যক্ষ হাওলাদার মুজিবর রহমান একই সাথে ০৫টি কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন যেটি নিয়ম পরিপন্থী। শুধুমাত্র ডেবিট ভাউচার দিয়ে চেকবিহীন নগদ ১৭,৭৯,৩৭০/- টাকা অফিস ফান্ড থেকে উত্তোলন করা নিয়ম পরিপন্থী বিষয়। একই সাথে ০৫টি কমিটির সদস্য সচিব হয়ে উপাধ্যক্ষ হাওলাদার মুজিবুর রহমান কর্তৃক কমিটির অবগতি ব্যতীত টাকা উত্তোলন, টাকা খরচ এবং খরচের কোন ভাউচারই অফিসে জমা না দেওয়া নিয়ম বহির্ভূত। 

এই অডিট প্রতিবেদন ৫ মে ২০২২ ইং তারিখে দেওয়া হলে তৎকালীন আওয়ামী লীগের ছত্র ছায়ায় থাকা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মজিবুর রহমান তার বিরুদ্ধে কোন ধরণের প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে দেননি। রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে আরও অপকর্ম চালিয়ে গেছেন।  অডিট প্রতিবেদনের কারণে ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদ থেকে তাকে  অব্যাহতি দিয়ে কলেজটির জ্যেষ্ঠ শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন দাড়িয়া কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়। 

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা উপাধ্যক্ষ হাওলাদারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের আমলে কেউ কোন কথা বলার সাহস না করলেও পতিত হাসিনা সরকারের পতনের পরে গত ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ইং তারিখে কলেজটির এক অভিভাবক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। 

জাহাঙ্গীর হোসেন শেখ নামের ঐ অভিযোগকারী তার অভিযোগে উপাধ্যক্ষ হাওলাদার মুজিবর রহমানের আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, অসদাচরণ, অধ্যক্ষের চেয়ারে বসে ধূমপান, গ্রুপিং করা, নিজের ইচ্ছেমত কলে আসাসহ একাধিক অভিযোগ ও অভিযোগের স্বপক্ষে দলিলাদি উল্লেখ করেছেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের নভেম্বরে কলেজটির অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হয়। সেই বিজ্ঞপ্তিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাওলাদার মজিবুর রহমান আবেদন করেন। নিয়ম অনুযায়ী, অধ্যক্ষ পদে আবেদন করলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে থাকার কোন সুযোগ না থাকায় তিনি এই পদ থেকে অব্যহতি নেন। এসময় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পান কলেজটির জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মোহাম্মদ আব্দুল বারী। আওয়ামী ছত্র ছায়ায় অপকর্মে লিপ্ত থাকা হাওলাদার মুজিবর ৫ আগস্টের পরে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটলে তিনি আওয়ামী সুবিধাভোগি হিসেবে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পাবেন না জেনে আবার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে ফেরেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির নিষ্পত্তি না হলেও এবার বিএনপির নেতাদের পিছে দৌড়ঝাঁপ করে বিধিবহির্ভূতভাবে গত ৩ নভেম্বর ২০২৪ ইং তারিখে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন।  নিয়ম অনুযায়ী অধ্যক্ষ পদে আবেদনকারী ব্যক্তি একই প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে না থাকতে পারলেও হাওয়ালাদার মজিবুর রহমান বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে আছেন। 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ হাওলাদার মজিবুর রহমান শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন এর আগে একটি তদন্ত হয়েছিল সেটাতে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছি। কে বা কারা এসব অভিযোগ করছে আমি জানিনা।

জানতে চাইলে কলেজটি গভর্নিং বডির  সদ্য দায়িত্ব পাওয়া সভাপতি (এডহক কমিটি) ও বিএনপি নেতা অধ্যাপক এমডি মোবাশ্বের হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

সাবেক ইউএনও কর্তৃক অডিট করে এবং আর্থিক জালিয়াতি ধরা পরলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন জানতে চাইলে ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোহিনুর জাহানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল তিনি ফেন ধরেননি।

এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক অধ্যাপক শেখ হারুনর রশীদ শিক্ষাবার্তা’কে বলেন,  বেসরকারি কলেজের ক্ষেত্রে ম্যানেজিং কমিটির প্রধান এসব দুর্নীতির বিষয়ে ক্ষমতা প্রয়োগ করার ক্ষমতা রাখেন। এখন যিনি কমিটির  দায়িত্বে তার সাথে কথা বললে বিষয়টি তিনিই ভালোভাবে দেখতে পারবেন। এছাড়াও অভিযোগ পেলে বা তদন্তের দায়িত্ব পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৭/১১/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.