ঢাকাঃ ফেসবুকে ভারতবিরোধী স্ট্যাটাস দেওয়ার জেরে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের হাতে খুন হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটের শেরে বাংলা হলে তাকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সোমবার (৭ অক্টোবর) আবরার ফাহাদের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী। পাঁচ বছর ধরে আবরারের বিভিন্ন স্মৃতি আঁকড়ে রেখেছে পরিবার।
আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার রায় কার্যকর করার দাবি জানিয়ে তার মা রোকেয়া খাতুন গনমাধ্যমকে বলেন, আমার ছেলে বুয়েটে পড়াশোনা করতে গিয়েছিল। সেখানে আমার ছেলেকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। আমার ছেলে যখন কাঁদছিল, তখন খুনিদের একটুও কষ্ট হয়নি। তারা নির্মম নৃশংসভাবে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। সেই মামলায় সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি আশা করেছিলাম। কিন্তু আদালত সবাইকে ফাঁসি দেননি। আইনের ওপর শ্রদ্ধা রেখে রায়ে আমরা সন্তোষ। তবে দ্রুত তাদের রায় কার্যকর করা হোক। সাজাপ্রাপ্ত তিন আসামি পলাতক রয়েছে, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার দাবি জানাচ্ছি।
সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বুয়েটসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছিল অতীত সরকারের আমলে। সেগুলো দীর্ঘদিন ধরে চলেছিল। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে সেগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আমার ছেলেকে এভাবে চলে যেতে হতো না। আমার ছেলে আবরারকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আবরারকে খুব কষ্ট দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। ছেলের স্মৃতি আমাকে প্রতিদিন কাঁদায়। সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গনের দাবি জানাচ্ছি।
রোকেয়া খাতুন বলেন, দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সন্ত্রাসমুক্ত করতে হবে। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিরাপদ রাখতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখতে হবে। আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। শিক্ষাঙ্গনে আমার ছেলের মতো আর কেউ খুন না হোক। আমি চাই না আমার মতো আর কোনো মায়ের বুক খালি হোক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপদে লেখাপড়া করে সবাই মানুষের মতো মানুষ হতে পারে। সেই পরিবেশ তৈরি করা হোক দেশের সকল শিক্ষাঙ্গনে।
আবরার ফাহাদের মা বলেন, পাঁচ বছর আগে ৭ অক্টোবর ছেলেকে সকালে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়েছিলাম। বিকেলে বুয়েটে পৌঁছায়। এরপর তাকে ছাত্রলীগের ছেলেরা ডেকে রাতভর নির্যাতন করে হত্যা করেছিল। তারা ছাত্রলীগ করলেও তারই কয়েকজন বন্ধু ছিল। তারাও একটি বারের জন্যও ফোনে জানায়নি ছেলে নিহত হওয়ার বিষয়ে।
প্রসঙ্গত, আবরার ফাহাদ ১৩ মে ১৯৯৮ সালে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। প্রথমে কুষ্টিয়া মিশন স্কুল ও পরে জিলা স্কুলে লেখাপড়া শেষ করে ২০১৮ সালে ৩১ মার্চ তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তি হন। আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.
শিক্ষাবার্তা ডট কম অনলাইন নিউজ পোর্টাল
