নিজস্ব প্রতিবেদক।।
বন্যাকবলিত জেলাগুলোয় স্বাভাবিক জীবনযাপনের সঙ্গে বিপর্যস্ত শিক্ষাব্যবস্থাও। বন্যায় পানিবন্দি শিক্ষালয় বন্ধের তালিকাও দীর্ঘ হচ্ছে। বন্যাশেষে শিক্ষালয় দ্রুত পুনর্নির্মাণ ও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে শিক্ষা প্রশাসন।
স্থানীয় সূত্রের তথ্যানুযায়ী, বর্ষার ভরা মৌসুম, গেল সপ্তাহজুড়ে লাগাতার বৃষ্টি এবং ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদনদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব নদনদীর মধ্যে রয়েছে তিস্তা, যমুনা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার। পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে চর ও গ্রাম প্লাবিত করছে। কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, বগুড়া, নেত্রকোনা, জামালপুর, সিলেটসহ বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে হাজারেরও বেশি বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। প্রতিদিন বাড়ছে বন্যাকবলিত এলাকার পরিধি। এসব নদীসংলগ্ন এলাকার পানিবন্দি মানুষের স্বাভাবিক
জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভেঙে পড়ছে শিক্ষাব্যবস্থা।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ গতকাল বলেন, কী পরিমাণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে খোঁজ নেব। বন্যা শেষ হলে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দ্রুত পুনর্নির্মাণ করা হবে। শিক্ষার্থীর বই নষ্ট হয়ে থাকলে নতুন বই দেওয়া হবে। শিখন ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে অতিরিক্ত ক্লাসের প্রয়োজন হলে সে ব্যবস্থা নেব।
জানা গেছে, কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলায় ৩৪১ প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসায় পাঠদান সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে। নীলফামারীতে তিস্তা নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে চর ও গ্রামগুলোকে প্লাবিত করেছে। লালমনিরহাটের ১৭ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে, ১৪টিতে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ৩ উপজেলার ৫৮ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে। কুড়িগ্রামে চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেটে টানা তৃতীয় দফা বন্যার কারণে প্রায় ৫০০ শিক্ষালয়ে পাঠদান বন্ধ আছে। কিছু শিক্ষালয়ে পানি জমে আছে আর বাকিগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। জেলার ৩৯৮ প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ। এর মধ্যে সিলেট সদর উপজেলায় ৩৭, বিশ্বনাথে ২, বালাগঞ্জে ৫৫, ফেঞ্চুগঞ্জে ৩২, গোলাপগঞ্জে ২৭, বিয়ানীবাজারে ৫৪, জকিগঞ্জে ২৩, কানাইঘাটে ৪, জৈন্তাপুরে ৩, গোয়াইনঘাটে ২, কোম্পানীগঞ্জে ৬৫, দক্ষিণ সুরমায় ২২ ও ওসমানীনগরে ৭২ বিদ্যালয় রয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আব্দুস সামাদ বলেন, বন্যাপ্রবণ জেলাগুলোয় শিক্ষার জন্য বন্যার আগেই একটি পরিকল্পনা থাকে। পানি সরে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দ্রুত পুনর্নির্মাণের জন্য সরকারি বরাদ্দের কোনো সমস্যা হবে না।
কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শামসুল আলম জানান, বন্যার পানি ওঠার কারণে ১২১ মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসায় পাঠদান সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে। বন্যাকবলিত নয় এমন সব শিক্ষালয় খোলা রয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিন জানান, ৯ উপজেলায় বন্যায় প্লাবিত বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৫৩টি। এর মধ্যে পাঠদান বন্ধ রয়েছে ২২০টির।
লালমনিরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার রায় চৌধুরী জানিয়েছেন, জেলার ১৭ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে। এর মধ্যে ১৪ বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ করা হয়েছে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম কবির জানান, ৪০ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান সম্ভব হচ্ছে না।
সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন জামালপুরের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। জামালপুরে ৪৭ কেন্দ্রে ২৭ হাজার ৯৯ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। বন্যাকবলিত দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় ছয়টি কেন্দ্রে ৩ হাজার ৭১ ও ইসলামপুর উপজেলায় ছয়টি কেন্দ্রে ৩ হাজার ৮৩ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে।
এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. শফিউর রহমান বলেন, প্লাবিত একটি অঞ্চলের কেন্দ্র স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া বাকি কেন্দ্রগুলোতে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পানি প্রবেশ করায় জামালপুরের ৩৪৭ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যার পানি বিদ্যালয়ে প্রবেশ করায় এ পর্যন্ত জেলায় ২৫৯ প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৮৮ মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ করা হয়েছে।
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.