এইমাত্র পাওয়া

বাঘারপাড়ায় বিদ্যালয়ে ফিরল ঝরে পড়া ১১ শিশু

যশোর: জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার কৃষ্ণনগরের প্রান্তিক কৃষক শরিফুল ইসলামের ছেলে আশিক আব্দুল্লাহ। অভাবের কারণে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় স্কুল ছেড়ে কাজ নেয় ওয়েল্ডিং কারখানায়। সে দুই বছর ধরে সেখানে অনেক কষ্টে কাজ করেছে। উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সে ফিরেছে বিদ্যালয়ে, স্বপ্ন দেখছে ডাক্তার হবার।

আলাপকালে আশিক জানায়, লেদে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করতাম। আবার গ্রিল ঘসে রঙ করতে হতো। না পারলে মারধর করতো। অনেক কষ্ট হতো। ম্যাডামরা আবার স্কুলে ভর্তি করে দেয়ায় এখন আমার অনেক ভালো লাগছে। আমি এখন মন দিয়ে পড়াশোনা করবো। পড়ালেখা করে ডাক্তার হবো।

এ উপজেলার মহিরণের রিকশাচালক সোহেল হোসেনের ছেলে নীরব হোসেন জানায়, চতুর্থ শ্রেণিতে উঠলে সে অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন তার চিকিৎসার জন্য ঢাকায় বড় হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। অনেকদিন সেখানে থাকতে হয়। তারপর সুস্থ্ হয়ে বাড়ি ফিরলেও স্কুলে আসা বন্ধ হয়ে যায়। পাঁচ বছর পর আবার স্কুলে আসতে পেরে খুব খুশি লাগছে।

যশোরের বাঘারপাড়ায় ঝরে পড়া শিশুদের বিদ্যালয়ে ফেরাতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। সোমবার (১০ জুন) জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে তাদের হাতে শিক্ষা উপকরণ তুলে দিয়ে পাঠানো হয় বিদ্যালয়ে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিদ্যালয়ে ফেরা ঝরে পড়া শিশুদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) খালেদা খাতুন রেখা।

বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসনে আরা তান্নির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল আলম, বাঘারপাড়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার ইসমত আরা পারভীন।

বাঘারপার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসনে আরা তান্নি বলেন, ক্লাস্টার ভিত্তিক তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে ঝরেপড়া শিশুদের তালিকা তৈরির পর তাদেরকে বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনতে অভিভাবকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে উঠান বৈঠক, মা সমাবেশসহ নানা কর্মকাণ্ডের পর পরিবারকে বুঝিয়ে শিক্ষার্থীদের আলোর পথে ফেরাতে সক্ষম হয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, প্রথম দিনে ঝরে পড়া ১১ শিশু বিদ্যালয়ে ফিরেছে। পর্যায়ক্রমে বাকিদেরকেও ফিরিয়ে আনার জন্যে তৎপরতা চালানো হচ্ছে। শিক্ষকদেরকে ঝরেপড়া এসব শিশুকে বিশেষ খেয়াল রাখার জন্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এদিকে প্রাথমিক শিক্ষার মনোন্নয়নে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বাঘারপাড়ার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। উপজেলার পূর্ব পাইকপাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই কর্মসূচির উদ্বোধনকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসনে আরা তান্নি জানান, এ কর্মসূচির আওতায় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের তথ্য প্রযুক্তির নানা ডিভাইসের সঙ্গে পরিচিতি করানো হচ্ছে আর পঞ্চম শ্রেণিতে গিয়ে হাতে কলমে ডিভাইসের ব্যবহার করছে। এতে একদিকে সিটিজেন গঠনে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি সরকারিভাবে পাওয়া ডিভাইসের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে। শিক্ষকরা বলছেন, পরবর্তী ক্লাসের জন্য সহায়ক হবে এই কার্যক্রম।

উল্লেখ্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা বিতরণ ছাড়াও শিক্ষার্থীদের খেলাধুলায় উৎসাহ দিতে ক্রীড়া সামগ্রী, ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের স্কাউট ড্রেস বিতরণসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে বাঘারপাড়া উপজেলা প্রশাসন।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১১/০৬/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.