নিউজ ডেস্ক।।
রাজধানীর রাস্তার আশপাশে বিক্রি হওয়া ছয় খাবারে উচ্চমাত্রায় ই কোলাই ও সালমোনেলার মতো ক্ষতিকর ডায়রিয়ার জীবাণু পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। খাবারগুলো হলো—চটপটি, ছোলা-মুড়ি, স্যান্ডউইচ, আখের রস, অ্যালোভেরার শরবত ও মিক্সড সালাদ। রবিবার শাহবাগে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘প্রিভিলেন্স অব মাইক্রোবায়াল হ্যাজার্ডস ইন স্ট্রিট ফুড অ্যান্ড রেডি টু ইট সালাদ আইটেমস ইন রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড দেওয়ার প্রবলেম রিস্ক অ্যানালাইসিস’—শীর্ষক এক গবেষণার ফলাফল উপস্থাপনে এ তথ্য জানানো হয়। বিএফএসএর অর্থায়নে গবেষণাটিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ সায়েন্সের প্রধান বিজ্ঞানী ড. লতিফুল বারি। সহযোগী হিসেবে ছিলেন বিভাগের বিজ্ঞানী ড. শারমিন জামান ইমন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএফএসএর চেয়ারম্যান জাকারিয়া।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, এখন চালের মধ্যেও ভারী ধাতু পাওয়া যাচ্ছে। দেশের পানি, মাটি, বাতাস সবই দূষিত। ফলে যা-ই উৎপাদন করা হচ্ছে, তাতেই দূষিত কিছু থেকে যাচ্ছে। উৎপাদন পর্যায় থেকেই সমস্যা শুরু হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, যারা সড়কের পাশে খাবার তৈরি করছেন, তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে সঠিক কোনো জ্ঞান নেই। সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরির জন্য কাজ করছে, কিন্তু মানুষ সুস্থ না থাকলে এটা সম্ভব নয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গবেষণাটিতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৭টি স্থান থেকে এ ছয় ধরনের খাবারের ৪৫০টি নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। এর সবগুলোতেই ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বেশি মাত্রায় পাওয়া গেছে ই কোলাই (অ্যাশেরিকিয়া কোলাই), সালমোনেলা এসপিপি ও ভিব্রিও এসপিপি ব্যাকটেরিয়া।
গবেষণা ফলাফল তুলে ধরে ড. লতিফুল বারি বলেন, কোনো খাবারেই এসব ব্যাকটেরিয়া থাকার সুযোগ নেই। কিন্তু জনপ্রিয় এসব খাবারে জীবাণুগুলো ব্যাপক মাত্রায় পাওয়া গেছে। এসব খাবার খেয়ে ও পান করে মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে। জনপ্রিয় খাদ্যগুলোর পানির উত্স নিরাপদ না হওয়ায় ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণুগুলো খাবারে মিশে যাচ্ছে। এছাড়া নোংরা গামছা, অপরিষ্কার হাত ও পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখা অন্যতম কারণ। মূলত খাবার জীবাণুবাহী হচ্ছে বিক্রেতাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, স্যানিটেশন ও শিক্ষা সম্পর্কে ধারণা কম থাকার কারণে। বিক্রেতার স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে ধারণা না থাকায় জুসের মগ ও গ্লাস সহজেই জীবাণুবাহী হয়ে পড়ে। আর খাবার একবার এসব ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হলে সেগুলোর পরিমাণ আরও বাড়তে থাকে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে আগে পানির নিরাপদ উৎস ঠিক করতে হবে।
এদিকে অনুষ্ঠানে আরেকটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্টিকালচার বিভাগের অধ্যাপক আবুল হাসনাত এম সোলাইমান। কলা কীভাবে পাকানো হচ্ছে এবং কীভাবে পাকানো উচিত, তা নিয়ে তিনি গবেষণা করেছেন।
গবেষণায় দেখা যায়, দেশে পাইকারি বিক্রেতারা কলা পাকাতে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করছেন। যেখানে কার্বোহাইড্রেডের মতো নিষিদ্ধ কেমিক্যালও রয়েছে। এরা নির্দিষ্ট চেম্বারে তাপের মাধ্যমে কলা পাকানোর কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে কেমিক্যাল দিয়েই পাকায়। অথচ কলার গায়ে সরাসরি কেমিক্যাল দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.