এমপিওভুক্ত করা নিয়ে যা বললেন শিক্ষামন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক।।

রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে জাতীয় শিক্ষানীতি ও নতুন কারিকুলাম বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, আমরা চিন্তা করছি কত বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানকে এমপিও কাঠামোর মধ্যে আনা যায়। আবার এই কাঠামোর মধ্যে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে যেমন- বাড়ি ভাড়া, উৎসব ভাতা, চিকিৎসা ভাতা কিভাবে বৃদ্ধি করা যায়।

তিনি বলেন, প্রায় ৩০ লাখের মতো শিক্ষার্থী জাতীয় শিক্ষাক্রমের বাইরে গিয়ে এমন একটি শিক্ষাপদ্ধতিতে তারা আছে, সেখানে দক্ষতারও কোনো আলোচনা নেই, জ্ঞানেরও কোনো আলোচনা নেই, শিক্ষা সমাপ্ত করে কোন কর্মসংস্থানে যাবে তারও কোনো আলোচনা নাই।

রোববার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে জাতীয় শিক্ষানীতি ও নতুন কারিকুলাম বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (বাকবিশিস)।

মন্ত্রী বলেন, সেই (অতিরক্ষণশীল) জনগোষ্ঠী জাতীয় শিক্ষাক্রম নিয়ে যখন অভিযোগ করছে, সেই অভিযোগের সাথে আমরা নিজেরাও যখন সমবেত হয়ে যাচ্ছি, তখন তো দ্বিচারিতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। একটা পক্ষ যারা বাংলাদেশকে অন্ধকারের দিকে পিছিয়ে নিয়ে যেতে চায়, তারা যে শিক্ষাপদ্ধতি চাচ্ছে তাতে বিজ্ঞানের প্রতিটা অধ্যায়ের আগে থাকতে হবে ধর্মীয় বক্তব্য। সেটা তো কোনো শিক্ষা পদ্ধতির মধ্যেই পড়ে না। কিন্তু সে ধরণের আলোচনা তারা করছেন। তারা বলছেন, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে শিক্ষাকে দেখতে হবে।

সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরলেন শিক্ষামন্ত্রী
তিনি বলেন, যারা আমাদের স্বীকৃত ধর্মতত্ত্ববিদ, আলিয়া মাদ্রাসার প্রক্রিয়া থেকে জ্ঞান অর্জন করে বড় আলেম-ওলামা হয়েছেন, তারা কিন্তু এটি বলছেন না। তারা কিন্তু আমাদের শিক্ষাক্রমকে যথাযথভাবে মেনে নিচ্ছেন এবং সহযোগিতা করছেন। কিন্তু ওই শক্তি তো আমাদের বই-ই পড়ায় না। এমন একটি গোষ্ঠী আমাদের বই নিয়ে প্রতিবার মতামত দিচ্ছেন। আরেকটা রাজনৈতিক শক্তি এবং অন্যরা যারা আমরা সমালোচনা করছি তারা মিলে সেটিকে আবার অন্যভাবে শক্তিশালী করছি।

মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, আমরা চিন্তা করছি কত বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানকে এমপিও কাঠামোর মধ্যে আনা যায়। আবার এই কাঠামোর মধ্যে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে যেমন- বাড়ি ভাড়া, উৎসব ভাতা, চিকিৎসা ভাতা কিভাবে বৃদ্ধি করা যায়। আমরা মনে করি না যে, বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে দক্ষতা-যোগ্যতার এত ঘাটতি রয়েছে যে, সরকারি শিক্ষকদের চেয়ে তারা এত কম (অনেক কম) বেতন দিব। তাদের মর্যাদার ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কাছাকাছি আনতে না পারলে তা শিক্ষার্থীদের জন্য যথাযথ হবে না। এতে শিক্ষার মান বাড়বে না, শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও এটি বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।

নওফেল বলেন, সরকারের অঙ্গীকার হলো- প্রস্তুতির জন্য যে প্রশিক্ষণ, গবেষণার প্রয়োজনীয়তা সেই চ্যালেঞ্জ আমাদের সবসময় ছিল। এখনও আছে, আগামীতেও থাকবে। কিন্তু তাই বলে শতভাগ প্রস্তুত হয়ে একটি প্রক্রিয়া শুরু করতে পারব বা সেটি করার জন্য যে সময় ব্যয় হবে এর মধ্যে প্রজন্ম কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেটির কথাও ভাবতে হবে। যে কারণে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়ে গেছে। ২০১৭ সাল থেকে এর পাইলটিং শুরু হয়েছে। এই শিক্ষাক্রমেও জ্ঞানের ওপর অবশ্যই জোর দেওয়া হয়েছে। আমরা জ্ঞাননির্ভরতা থেকে কখনোই বেরিয়ে আসতে পারব না। আমরা চেয়েছি শিক্ষাক্রমে জ্ঞানের প্রয়োগিক বিষয়কে গুরুত্ব দিতে। দক্ষতা ও মূল্যবোধ দুটোই গুরুত্বপূর্ণ।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষা খাতে বাজেট বাড়ানোর চেয়ে যথাযথভাবে বাজেট খরচ করার বিষয়ে আলোচনা হওয়া উচিত। শুধু বাজেট বাড়ালেই হবে না, কোন ক্ষেত্রে বাজেট বাড়াতে হবে সেটিও আলোচনা করা উচিত।

বৈঠকে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং শিক্ষাবিদ মনজুর আহমদ বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম দিয়ে সবকিছুর সমাধান করে ফেলব, এমন ভাবনা সঠিক নয়। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে এই শিক্ষাক্রম অনেকাংশেই বাস্তবসম্মত নয়। এটি বাস্তবায়নে যে শিক্ষক দরকার, শিক্ষকের প্রস্তুতি দরকার, অবকাঠামো, উপকরণের দরকার, সেটি আমাদের নেই। তাছাড়া, এটির (শিক্ষাক্রম) বৈজ্ঞানিক ভিত্তিও কিছুটা প্রশ্নবোধক।

তিনি বলেন, বাস্তবতার নিরিখে আমাদের চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। না-হলে আমরা মহাবিপদে পড়ব। ১০ বছরের জন্য আগামী প্রজন্ম শিক্ষা সংকটে ভুগবে। ১০ বছর পরে নতুন করে কি আবার শিক্ষাক্রম নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করব? কিন্তু এই সময়গুলো আমরা হারিয়ে যেতে দিতে পারি না। তাই আমাদের করণীয় খুঁজতে হবে। শিক্ষার জন্য একটি সমন্বিত একক নেতৃত্ব দরকার। একটি স্থায়ী শিক্ষা কমিশনও প্রয়োজন। এরপর দশশালা পরিকল্পনা নিয়ে শিক্ষকদের কিভাবে দক্ষ ও নৈতিকতাসম্পন্ন করা যায় তার জন্য কি করণীয় তা ভাবতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে বাকবিশিস’র কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, শিক্ষায় যখনই কোন বড় পরিবর্তনের চেষ্টা করা হয় তখনই তার বড় ধকলটা আসে শিক্ষকদের উপর। কারণ নতুন কোন বিষয়ে পড়াতে হলে এবং ঐ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কিভাবে মূল্যায়ন করতে হবে তা শিক্ষকদের নতুন করে আয়ত্ব করতে হয়। এজন্য শিক্ষক প্রস্তুতি নেয়ার সময় পান না এবং এজন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা তেমন একটা নেই। সাত দিনের প্রশিক্ষণে কিছু হয় না এবং প্রশিক্ষকরাও সেজন্য তৈরি নয়।

তিনি বলেন, ২০১২ সালে শিক্ষাক্রমে নতুন পাঠ্যবই চালু করা হয়েছিল। তা কোন কাজে আসে নি। কারণ নতুন কোন ব্যবস্থা চালু করতে যে প্রশিক্ষণ দরকার তার কোন ব্যবস্থা করা হয় নি। অপরদিকে শিক্ষকদের আর্থিক দুরাবস্থা এবং তাদের মানমর্যাদা কোন কিছুই বিবেচনায় নেয়া হয় নি। এছাড়া শিক্ষার যে কোন পরিবর্তনে শিক্ষকরা বড় অংশী হলেও বিভিন্ন কমিটি গঠনে তাদের সম্পৃক্ত করার পরিবর্তে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান শিক্ষাক্রমে শিক্ষকদের দায়-দায়িত্ব ও কাজের পরিধি অনেক বৃদ্ধি করা হলেও শিক্ষকদের বেতন, ভাতা, সম্মানী বৃদ্ধির কোন সুপারিশ আছে কিনা জানা নেই। শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দলবাজি, স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক লেনদেন মুক্ত করা এবং নিয়মিত শিক্ষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাও জরুরি।

বাকবিশিস’র সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. জাহাঙ্গীরের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন বিশ্ব শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি ও শিক্ষাবিদ মাহফুজা খানম, বাকবিশিস’র প্রেসিডিয়াম মেম্বার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমান, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. এম তারিক আহসান, বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের সচিব অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদী, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সভাপতি অধ্যক্ষ বজলুর রহমান মিয়া প্রমুখ।

 

 


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Check Also

পদত্যাগ করলেন সচিব খুরশেদ আলম

ঢাকাঃ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্সের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম পদত্যাগ করেছেন। ১৫ …