ঢাকা:
ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে গত ২১ এপ্রিল দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার কথা ছিল। কিন্তু তীব্র দাবদাহের কারণে সেই ছুটি বাড়ানো হয়। এখনো কমেনি গরমের তীব্রতা; নতুন করে জারি করা হয়েছে হিট অ্যালার্ট। কিন্তু এ পরিস্থিতির মধ্যেই গতকাল রবিবার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সশরীরে পাঠদান শুরু হওয়ায় ভীষণ অস্বস্তিতে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। দুর্বিষহ গরমের মধ্যে এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরাও। তারা বলছেন, জীবনের জন্য পড়াশোনা, পড়াশোনার জন্য জীবন নয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অভিভাবক ঐক্য ফোরাম গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বলেছে, দাবদাহে শিক্ষার্থীদের কেউ অসুস্থ হলে কিংবা মারা গেলে এর দায় নিতে হবে সরকারকেই। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি।
এদিকে গতকাল রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, দেশে চলমান দাবদাহের কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে পরামর্শক্রমে ঢাকা, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, খুলনা ও রাজশাহী জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আজ ২৯ এপ্রিল বন্ধ থাকবে। তবে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শীততাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আছে, কর্তৃপক্ষ চাইলে সেসব প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যাবে। অবশ্য এসব জেলার প্রাথমিকস্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে বলে জানিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেই। যেহেতু প্রাথমিকের সব ক্লাস মর্নিংয়ে হবে, তাই খোলা থাকবে।
দুপুর ১২টা। মতিঝিল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থী ক্লাসে ঢোকার আগেই কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েন। শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে ক্লাস না করেই মায়ের সঙ্গে আবারও বাসায় ফিরে যায় সে। এই শিক্ষার্থীর মা সেলিনা বেগম বলেন, আমাদের বাসা নতুনবাজার। ১১টার দিকে বেরিয়েছি। ১০ মিনিট হাঁটার পথ। তার পর মেইন রাস্তায় এসে বাস ধরেছি। বাড্ডা-রামপুরার জ্যাম ঠেলে ৩৫-৪০ মিনিট পর স্কুলে এসে পৌঁছালাম। বাসের মধ্যেই মেয়েটা বমি আসছে বলছিল। এখানে আসার পর ঠিকভাবে একা হেঁটে ভেতরে ঢুকতেও পারছে না। ও এখন ক্লাস করবে কীভাবে? স্যারদের সঙ্গে দেখা করে বলে এখন চলে যাচ্ছি। এই স্কুল গেটে আরও কয়েকজন অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাচ্চাদের নিয়ে যাতায়াতের সময় গরমে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। এরা কীভাবে ক্লাস করবে। সকালে যাদের ক্লাস ছিল, তারাও বলছেন ক্লাসের ফ্যানের বাতাসও গরম। শ্রেণিপাঠে মনোনিবেশ করতে পারেনি শিক্ষার্থীরা।
উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে সন্তানের জন্য অপেক্ষায় বসে থাকা কয়েকজন অভিভাবক গণমাধ্যকর্মীদের দেখে তাদের মনের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই গরমের মধ্যে স্কুল খোলাটা ঠিক হয়নি। কারণ পড়াশোনার চেয়ে জীবন আগে। বর্তমান সময়ে গরমে বাসায় থেকেই জ্বর হচ্ছে বাচ্চাদের। সপ্তাহখানেক পরে বা ১০ দিন পরে তো তাপমাত্রা কমেই যাবে, একটু অপেক্ষা করলে কী আর এমন হতো? তারা আরও বলেন, আমাদের বাচ্চারা তো করোনার সময় অনলাইনে ক্লাস করেছে। এখন না হয় ১০-১৫ দিন অনলাইনে ক্লাস করত। এতে আহামরি কোনো ক্ষতি হয়ে যেত না।
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.