নিজস্ব প্রতিবেদক।।
দেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় কিছুদিন ধরেই বইছে মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার তাপপ্রবাহ। এতে করে ভীষণ অস্বস্তিতে আছে মানুষসহ সব প্রাণীই। এর মধ্যেই গতকাল রাজধানী ঢাকা, ফরিদপুরসহ কিছু অঞ্চলে অল্প সময়ের জন্য হাল্কা বৃষ্টি হলেও স্বস্তি মেলেনি। আবহাওয়া অফিসও কোনো সুখবর দিতে পারছে না। বরং বলা হচ্ছে, চলতি মাসে তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
গতকাল মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা এ মৌসুমের সর্বোচ্চ। এদিন ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত সোমবার বরিশালের খেপুপাড়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৬ এপ্রিল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল। তখন তাপমাত্রা ছাড়িয়েছিল ৪০.৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী সপ্তাহ নাগাদ ঢাকার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছুঁতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।
আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেছেন, চলমান তাপপ্রবাহ পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বাড়তে পারে।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, আগামী ২০ এপ্রিলের পর বিভিন্ন অঞ্চলে গরমের ব্যাপ্তি আরও বাড়বে। কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি হতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন।
দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, এ মাসে দুই থেকে চারটি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ এবং এক থেকে ?দুটি তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। অতি তীব্র তাপপ্রবাহে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠতে পারে। এ মাসে ১-২টি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে; যার মধ্যে একটি নিম্নচাপ/ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে পারে।
গতকাল ছিল বৈশাখের তৃতীয় দিন। এদিন রাজধানীতে ঝড়ো হাওয়াসহ এক পশলা বৃষ্টি হয়। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ঝড়ো হাওয়া শুরু হয়। পৌনে ৪টার দিকে হাল্কা বৃষ্টি শুরু হয়। ঢাকায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ১২ মিলিমিটার। সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে ফরিদপুরে ২৩ মিলিমিটার। এদিকে তীব্র গরমের মধ্যে ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
দেশের আটটি অঞ্চলের নদীবন্দরে তোলা হয়েছে দুই নম্বর হুশিয়ারি সংকেত। আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম জানিয়েছেন- ময়মনসিংহ, মাদারীপুর, বরিশাল, ফরিদপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এবং সিলেট অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে পশ্চিম/উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কি.মি. বেগে বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরসমূহকে ২ নম্বর নৌ-হুশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
অন্য এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকার অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আজ বুধবার ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর, চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
এ ছাড়া চুয়াডাঙ্গা ও বাগেরহাট জেলাসমূহের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং রাজশাহী, ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। বিরাজমান তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি দেশের কিছু কিছু জায়গা হতে প্রশমিত হতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আগামী শুক্রবার বরিশাল, চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
এ দিনেও বিরাজমান তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। বর্ধিত পাঁচ দিনের আবহাওয়ায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/জামান/১৭ /০৪/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.