নিউজ ডেস্ক।।
রাজধানীর সদরঘাটে লঞ্চ দুর্ঘটনায় পাঁচজন যাত্রী নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ছিলেন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার বিল্লাল হোসেন (৩০)। স্ত্রী (মুক্তা ২৬) ও সন্তান মাইশাকে (৩) নিয়ে গাজীপুরের গাছার বড়বাড়ি এলাকায় থাকতেন তিনি। সংসারে টানাপোড়েন থাকলেও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সুখেই ছিলেন বিল্লালের। সেই পরিবারটি যেন আজ শুধুই স্মৃতি। কারণ যে পাঁচজন নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে ছিলেন বিল্লাল, তার স্ত্রী ও সন্তান।
বিল্লাল গাজীপুরে ফুটপাতে জামা-কাপড় বিক্রি করতেন। কখনও বা বিক্রি করতেন কসমেটিকস সামগ্রী। আনন্দেই কাটছিল তার জীবন। গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় যেতে আজ সদরঘাটের লঞ্চঘাটে এসেছিলেন বিল্লাল ও তার পরিবার। পন্টুনে দাঁড়িয়ে লঞ্চে ওঠার অপেক্ষা করছিলেন তারা। বিল্লালের কোলে ছিল ছোট্ট মাইশা। আরেক হাতে স্ত্রী মুক্তার হাত ধরা ছিল। হঠাৎ লঞ্চের সঙ্গে পন্টুনে বাঁধা মোটা রশি ছিঁড়ে গিয়ে ঘটে যায় মর্মান্তিক ঘটনা।
বিল্লালের বোনজামাই মো. মিজান বলেন, বিল্লালের ছোট্ট মেয়ে মাইশা বাড়ি ফিরছিলেন। কত আনন্দ করার সখ ছিল তার! কীসের আনন্দ, কীসের ঈদ! গোটা পরিবারই চলে গেল। ছোট ভাইয়ের কাছে দুর্ঘটনার খরব পাই। সদরঘাট ছুটে গিয়ে দেখি রক্তে সব ভেসে গেছে। এরপর হাসপাতাল মর্গে এসেছি।
তিনি বলেন, আমাদের পোড়া কপাল! যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতায় সর্বনাশ হয়ে গেল। এই দুর্ঘটনায় দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
এদিকে এ ঘটনায় দুই লঞ্চের চালক এবং ম্যানেজারসহ পাঁচজনকে আটক করেছে নৌ পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) বিষয়টি নিশ্চিত করেন নৌ পুলিশের ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস।
আটকরা হলেন- ফারহান লঞ্চের দুই চালক ও ম্যানেজার এবং এমভি তাসরিফের দুই চালক।
গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, সদরঘাটে লঞ্চের দড়ি ছিঁড়ে পাঁচ যাত্রী নিহতের ঘটনায় ফারহান লঞ্চের দুই চালক ও ম্যানেজার এবং এমভি তাসরিফের দুই চালকসহ মোট ৫ জনকে আটক করা হয়েছে।
তিনি বলেন, তাদের আটকের পর ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে মামলার পর বিস্তারিত জানানো হবে।
এর আগে, এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। কমিটিকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে, রাজধানীর সদরঘাট টার্মিনালে বার্দিং করার সময় তাসরিফ লঞ্চের দড়ি ছিঁড়ে তার আঘাতে ৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একই পরিবারে মা-বাবাসহ তাদের শিশু মেয়ে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- পিরোজপুরের মোটবাড়িয়ার বিল্লাল হোসেন (২৫), তার স্ত্রী মুক্তা (২৬) ও শিশু মেয়ে মাইশা (৩), ঠাকুরগাঁও সদরের নিশ্চিতপুরের রবিউল (১৯) এবং পটুয়াখালী সদরের মো. রিপন হাওলাদার(৩৮)।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা নদী বন্দর (সদরঘাট) এর যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) জয়নাল আবেদীন। তিনি বলেন, সদরঘাটের ঘটনায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মরদেহ মিডফোর্ড হাসপাতালে রাখা আছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
নৌ পুলিশের সদরঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ জানান, ঢাকা থেকে ভোলাগামী তাশরিফ-৪ লঞ্চের ধাক্কায় ৫ জন যাত্রী গুরুতর আহত হন। লঞ্চটি ঘাটে বেঁধে রাখা ছিল, হঠাৎ রশি ছিঁড়ে যাত্রীদের ধাক্কা দিলে এ ঘটনা ঘটে। সদরঘাট ফায়ার স্টেশনের অ্যাম্বুলেন্সযোগে আহতদের মিটফোর্ড হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া হয়। পরে তারা মারা যান।
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.