ঢাকাঃ বৃক্ষরোপণের জন্য পুরস্কার পেতে আবেদন করেছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। তবে সেই আবেদনে হিতে বিপরীত হয়েছে। পুরস্কারের বদলে তাকে তিরস্কার করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে হাটহাজারী উপজেলার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমীনের সঙ্গে।
রুহুল আমীন হাটহাজারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা থাকার সময় ওই উপজেলায় গাছ লাগিয়ে ২০২১ সালে বৃক্ষরোপণে জাতীয় পুরস্কার-২০২২ এর জন্য মনোনীত হন। কিন্তু এই পুরস্কার তাকে না দিয়ে পরবর্তীতে পদক দেওয়া হয় হাটহাজারী উপজেলা পরিষদকে।
মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে ওই তিরস্কার করা হয়।
এতে বলা হয়েছে, ‘রুহুল আমীন ২০২২ সালের ৫ জুন অনুষ্ঠিত বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ ও বৃক্ষমেলার প্রাক্কালে হীন ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল না হওয়ায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের যথাযথ ও আইনসম্মত কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। এর মাধ্যমে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছেন।’
যদিও প্রজ্ঞাপনে রুহুল আমিনের বাগান সৃজনের বিষয়টি স্বীকার করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘রুহুল আমীনের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮–এর ৩(খ) অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’-এর অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তবে তিনি বেশ কয়েকটি বাগান সৃজন করে জনস্বার্থের জন্য ইতিবাচক কাজ করেছেন বিধায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলেও তাকে সর্বনিম্ন দণ্ড ‘তিরস্কার’ দণ্ড প্রদান করা সমীচীন বলে প্রতীয়মান হয়।’
সাবেক ইউএনও রুহুল আমীনের বিরুদ্ধে এই দণ্ড প্রদানের কারণ হিসেবে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘হাটহাজারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত থাকাকালে বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার-২০২২ এর জন্য আবেদন করেছেন।’
একইভাবে দণ্ড প্রদানের আরেকটি কারণ হিসেবে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘ব্যক্তিগতভাবে পুরস্কার গ্রহণের সুযোগ না থাকায় মিথ্যা তথ্য ও জাল কার্যবিবরণী সহকারে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর গত ২৮ মে ২০২২ পুরস্কারের আবেদন প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন এবং অনুরুপ মিথ্যা তথ্য ও জাল দলিল সরবরাহ করে একাধিক জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করানোর মাধ্যমে মন্ত্রণালয় ও সরকারে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছেন।’
এ বিষয়ে কথা বলতে হাটহাজারীর সাবেক ইউএনও রুহুল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ নিয়ে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
মোহাম্মদ রুহল আমীন এখন চা বোর্ডের চট্টগ্রামে সচিব (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এই প্রজ্ঞাপনে হতবাক হয়েছেন হাটহাজারীর মানুষ। যে ব্যক্তির দক্ষতায় হাটহাজারীর দুর্গম মনাই ত্রিপুরা পল্লী, বঙ্গবন্ধু হেরিটেজ ঘোষিত হালদা নদীর সুরাক্ষায় যার অবদান ছিল সর্বজন প্রশংসিত। যিনি নিজ উদ্যোগে ৩০ হাজার বৃক্ষরোপন করে সুশোবিত করেছিলেন হাটহাজারী উপজেলা, সেই কর্মকর্তাকে পুরস্কৃত না করে উল্টো শাস্তির মুখে পরার ঘটনা তারা মেনে নিতে পারছেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাদের একজন বলেন, ‘রুহুল আমিন সাহেব একজন সাহসী এবং সৎ মানুষ। উনি হাটহাজারীতে থাকাকালীন যা করেছেন, এর আগে কোনো ইউএনও সেটি করেননি। গাছ লাগিয়ে উনি মনায় ত্রিপুরা পাড়াসহ পুরো হাটহাজারীতে সবুজ বিপ্লব ঘটিয়েছেন। এই কাজের জন্য তাকে পুরস্কার না দিয়ে মন্ত্রণালয় উল্টো তিরস্কার করেছে। এটি খুবই দুঃখজনক।’
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১০/০৪/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.