রাষ্ট্র কি শুধুই সরকারি কর্মচারীর?

জায়েদ বিন নাসের।।

দেশে সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশের অনুপস্থিতি জীবনধারণের সব ক্ষেত্রেই এক ধরনের সংকট সৃষ্টি করছে ৷ সমাজে যারা শিক্ষক হিসেবে নিজেদের আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছেন, তাদের একাংশ প্রকৃতপক্ষে কতটা শিক্ষক হয়ে উঠছেন তা নিয়ে সংশয় আছে। রাজনৈতিক দল যখন দেশের স্বার্থবিরোধী কাজে লিপ্ত তখন শিক্ষক হিসবে পরিচিতি পাওয়া একশ্রেণির লোক ওই কাজে বিরামহীন সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।

চরম তৈলমর্দন, অন্ধ অনুকরণ; শিক্ষকতার চেয়ে দলবাজিতে নিজেদের অধিক সময় নিমগ্ন রাখা; পদোন্নতিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাবার আশায় ক্ষমতাবানদের সন্তুষ্ট রাখায় তাদের বেশিরভাগ সময় পার করতে হয়।

মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকরা আগে মন্ত্রী-এমপি-আমলাদের সামনে সত্য বলতে ভয় পেতেন না, এখন শিক্ষকতার মুখোশধারীদের দেখা যায় মন্ত্রী-এমপি তো বটেই তস্য আমলাদের মিথ্যায় মদদ দিতে। স্থানীয় প্রশাসনের ভয়ে কাবু হয়ে থাকেন, থাকতে বাধ্যও হন। পুলিশকে নানান কারণে ভয় পেয়ে এড়িয়ে চলেন।

যৌক্তিক সমালোচনাটুকুও করেন না, ছাত্রদের বিবেক কীভাবে জাগ্রত করবেন তারা? ছাত্রদের শেখানোর নৈতিক অধিকার হারানোর পর কী করে এমন লোকেরা সম্মান পাবেন বলে আশা করেন? নৈরাশ্যবাদী হয়ে কোনো উপকার হয় না। প্রতিবাদটা জারি রাখা চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ নুরুল হুদা প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক ফিরিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে নজির স্থাপন করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ধর্ষণ, দুর্নীতিসহ নানান অনাচারের ঘটনা ঘটছে। শিক্ষাঙ্গনকে কলুষমুক্ত করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। টেকসই শিক্ষাব্যবস্থা দরকার। সমাজের সম্মিলিত প্রয়াসেই মুক্তি মেলে। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের প্রকৃত শিক্ষকদের সম্মান আমাদেরকে জানাতেই হবে। শ্রদ্ধা-সম্মানটাই তাদের মূল পাওয়া। ভক্তি, শ্রদ্ধার প্রকৃত হকদার তারাই।

অনেক আগে থেকেই বাংলার সমাজে স্থানীয়ভাবে শিক্ষক ও ধর্মীয় নেতাদের বিশেষ একটা প্রভাব বিরাজ করত। বিভিন্ন অন্যায়-অবিচার, জুলুমের বিরুদ্ধে শিক্ষকরা মুখে কুলুপ আঁটায় এখন শিক্ষকদের নির্যাতনে সেরকম প্রত্যাশিত কোনো প্রতিক্রিয়া এই সমাজ আর দেখাচ্ছে না।

শুধু ধর্মীয় নেতৃবৃন্দই না এমনকি প্রভবশালী বা প্রতাপশালী কোনো ব্যক্তির স্ত্রী কর্তৃক আর্থিকভাবে শক্তিশালী নন, এমন পেশার মানুষজন, যেমন গৃহপরিচারিকাকে নির্যাতনের মতো ঘটনাতেও স্থানীয় আলেম এবং শিক্ষকরা সক্রিয় ভূমিকা রাখতেন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলায় জড়িত নন— আলেমরা এই দাবি করেই ক্ষ্যান্ত দেন। ব্যতিক্রম দেখা গেছে শুধু কয়েক বছর আগে কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কোরআন রাখাকে কেন্দ্র করে হামলার পর বরিশালে।

কিন্তু হামলাই বা ঘটছে কেন? পূজামণ্ডপে হামলাসহ অনুসারী সংখ্যা বিবেচনায় ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর নানান নির্যাতন চলছে, নারীর প্রতি বর্বরতা-অসভ্যতা দেদারসে বেড়েই চলেছে। সব ছাত্র শিক্ষক না হলেও সব শিক্ষকই একসময় ছাত্র ছিলেন। ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি তো স্বাধীন বাংলায় অসম্ভব, মস্ত এক অপরাধ হবার কথা।

অথচ এই সস্তা ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের পক্ষে দাঁড়াতে দেখা গেছে মস্তক ধোলাই হওয়া দেশের সবচেয়ে নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মেধাবী শিক্ষার্থীদেরও! দেশকে রাজনীতি ও মেধাশূন্য করার গভীর এক চক্রান্ত এবং ষড়যন্ত্র চলছে। বিরাজনীতিকীকরণের মতো ঘৃণ্য অপচেষ্টায় লিপ্ত কুচক্রী মহল। দেশে যদি সুষ্ঠু ছাত্র রাজনীতি থাকত তবে শিক্ষার্থীরা সঠিক শিক্ষা-দীক্ষা পেতেন, শিক্ষকসহ সমাজের সবাই নিরাপদে থাকতেন, মানুষ হিসেবে সবারই কদরটা থাকত।

শিক্ষক সমিতি নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পদলেহন নতুন কিছু নয়, কিন্তু এখন তৈলমর্দন যেন একটা শিল্পের পর্যায়ে চলে গেছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য শিক্ষকদের উদ্যোগ নেই, অথচ নিজেদের সমিতির নির্বাচন নিয়ে তাদের ব্যস্ততা আর আয়োজনের যেন শেষ নেই!

সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাও চলত; মনোনয়নে অস্বচ্ছতা, ছাত্রদেরকে আরেক শিক্ষকের পেছনে লেলিয়ে দেওয়া, ছাত্রদের দিয়ে নিজ সহকর্মীকে অপমান অপদস্ত করা, যোগ্য শিক্ষকদের বাদ দিয়ে তেলবাজ দলবাজদের নেতৃত্বে আনা— এরকম অসুস্থ প্রতিযোগিতার মাশুল তো দিতেই হবে আমাদেরকে। পদোন্নতির জন্য এক শিক্ষক কর্তৃক আরেক শিক্ষককে হত্যার ঘটনাও তো দেখেছে বাংলাদেশ।

গত কয়েক বছরে শিক্ষক নির্যাতনের কতগুলো ঘটনা ঘটল। অথচ তারপরও আমরা যেন নির্বিকার! দিনাজপুরে এক ইউএনও-এর ওপর হামলার ঘটনায় দেশব্যাপী সকল ইউএনও-এর নিরাপত্তা বাড়ানো হলো। সরকারপ্রধানের নির্দেশে তাৎক্ষণিকভাবে রাজধানীতে এনে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলো। অথচ জেলাপ্রশাসক, পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে নড়াইলের শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে পরানো হলো জুতার মালা। পরে তাকে থানায় নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হলেও তিনি নিরাপত্তা শঙ্কায় নিজ বাসায় ছিলেন না। ভিন্ন কোথাও অবস্থান করেছেন। কোনো শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবীর ওপর হামলা হলে সারা বাংলাদেশটা শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবীদের নিরাপদ করার জন্য রাষ্ট্র বিশেষ ব্যবস্থা নেয় না কেন? এ রাষ্ট্র কি শুধুই সরকারি কর্মচারীর? জনগণের নয়? সংবিধানে তো লেখা আছে সরকারি কর্মচারীরা জনগণের সেবক, আর জনগণ হচ্ছে দেশের মালিক।

কুড়িগ্রামে এক জেলা প্রশাসক কর্তৃক সাংবাদিক নির্যাতন ও ক্রসফায়ারের হুমকির ঘটনা ঘটেছিল। পরে সেই ডিসির দুই বছর বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করে লঘুদণ্ড দেওয়া হলেও মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই লঘুদণ্ডের শাস্তি বাতিল করে অভিযোগের দায় থেকেও তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। যে সরকারি কর্মচারী সাংবাদিককে শারীরিক নির্যাতন করে, ক্রসফায়ারের হুমকি দেয় তাকে পদোন্নতি দিয়ে পুরস্কৃত করি আমরা! এই লজ্জা কই রাখব?

সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ না। লড়াই করে পেরে ওঠার মনমানসিকতা আর দেখা যায় না। আপস করে চলতে শেখা এবং এভাবে টিকে থাকাটাই যেন এখন বড় পাওয়া! দলীয় রাজনীতির স্বার্থের প্রতি সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের বড় আনুগত্য দেখা যায়, দলের স্বার্থের সঙ্গে দেশ বা নিজ পেশাদারিত্বের সাংঘর্ষিক অবস্থান দেখা দিলে আগে সাংবাদিকদের দলের বিপক্ষে অবস্থান নিতে দেখা গেলেও এখন তা আর খুব একটা দেখা যায় না।

 

বড় বড় কোম্পানি ও পুঁজিপতিদের দখলে অনেক সংবাদমাধ্যম ইতোমধ্যেই চলে গেছে, কিন্তু এসবের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের মিনমিন প্রতিবাদ কোনো সুফল আনেনি। অবস্থা প্রকট আকার ধারণ করেছে।

সাংবাদিকতার স্বার্থের সঙ্গে শুধু সাংবাদিকরাই নন; শিক্ষক, ছাত্র, আইনজীবীর স্বার্থও জড়িত। পুরো সমাজের স্বার্থ জড়িত। কারণ সমাজের দর্পণ ঠিকভাবে কাজ করতে না পারলে গোটা সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আঘাত পায়। এখন কেউ কৈফিয়ত চাচ্ছে না সত্য, তবে জেনে রাখা উচিত আগামী প্রজন্ম আমাদেরকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে ছাড়বে না।

একজন যুগ্ম সচিবের গাড়ির অপেক্ষায় ফেরি ছাড়তে তিন ঘণ্টা দেরি হওয়ায় অ্যাম্বুলেন্সে থাকা এক স্কুলছাত্রের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল। সেই সরকারি কর্তাও পরে পদোন্নতি পান। কয়েক বছর আগে কক্সবাজারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক যুগ্ম সচিবের গাড়ির ধাক্কায় এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছিলেন। বিচার পাওয়া যাবে? জানা নেই। সাহস করে বললে, বোধ হয় না।

মানিক সাহা থেকে সাগর-রুনির মতো সাংবাদিকদের হত্যা হতে হয়৷ কিন্তু বিচার পাওয়া যায় না। সাগর ও রুনি দম্পতির হত্যাকারীদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুঁজে বের করার ওয়াদা ছিল তৎকালীন দায়িত্বশীল মন্ত্রীর তরফ থেকে। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবার তারিখ তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এখনো পর্যন্ত একশ পাঁচবারের মতো পিছিয়েছে৷ সাগর আর রুনির সন্তান মেঘ নাকি ক্রিকেটার হতে চায়।

মেঘের প্রজন্ম আমাদেরকে দায়ী করতে ছাড়বে না। এই বাংলায় মেঘ তার বাবা-মায়ের হত্যাকারীদের অভিশাপ দিতে দিতে বড় হচ্ছে, আর সেই অভিশাপের তাপ তো আমাদের গায়েও লাগার কথা। লাগছে ঠিকই, টের পাচ্ছি না বোধহয়, নাকি টের পেয়েও না বোঝার ভান ধরে চলছি?

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে আব্দুল মতিন খসরু যে বার নির্বাচিত হলেন ওই বছর একজন আইনজীবীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে। এক আইনজীবীকে রিমান্ডের ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন আইনজীবীরা। মাঝেমধ্যেই অন্যায়-অনাচারের শিকার হচ্ছেন৷

প্রায়শ এ ঘটনাগুলো ঘটছে ক্ষমতা কাঠামোর জন্য। কিন্তু ফৌজদারী অপরাধ করার পরও সরকারি কর্মচারীর এরকম দায়মুক্তি ও পুরস্কৃত হওয়া সমাজে ভয়ঙ্কর এক বাজে বার্তা দিচ্ছে যা দিনশেষে কারোরই ভালো বয়ে আনবে না। ঔপনিবেশিক আমলাতন্ত্রের সঙ্গে স্বাধীন বাংলার আমলাতন্ত্রের সুস্পষ্ট বিস্তর ফারাক থাকার কথা, দুই সময়ের আমলাদের আচরণ পরস্পরবিরোধী হবার কথা। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো এদের মধ্যে পার্থক্য করা মুশকিল।

আইনজীবী সমিতির নির্বাচনগুলোকে অবাধ এবং সুষ্ঠু করার জন্য অংশীজনদের যে ভূমিকার দরকার তা চোখে পড়ে না। সমাজের দর্পন, সমাজের বিবেক হিসেবে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর জবুথুবু অবস্থা! এই বেহাল দশা থেকে বের হয়ে না আসতে পারলে কারোরই রক্ষা নেই। কোথাও থেকে কোথাও থেকে কাজটা শুরু করা লাগবে। সাংবাদিক, শিক্ষক, আইনজীবীদের পেশাজীবী সংগঠনগুলো স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদের সময়েও অন্য ক্ষেত্রগুলোর চেয়ে নাক উঁচিয়ে ন্যূনতম কাজ করার চেষ্টা করে গেছে। পেশাজীবী সংগঠনগুলোতে রাজনৈতিক চর্চা ফিরিয়ে আনতে পারলে হয়তো এই জায়গাগুলো থেকেই কাজ শুরু হবার আশা বেঁচে থাকবে।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে হট্টগোল, নজিরবিহীনভাবে ফলাফল প্রকাশ জাতির জন্য খুবই দুর্ভাগ্যের। পেশাজীবী সংগঠনগুলোর অস্তিত্ব ও চরিত্র সব পেশায় ঘাপটি মেরে থাকা ব্যক্তিদের কথা-কাজের ফলে আজ চরম সংকটাপন্ন অবস্থায়। শুধু নিজের সাময়িক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে পেশাদারিত্ব ও নিজ পেশার লোকজনের বিপরীতে অবস্থান নিতে এদের গা-হাত-পা একটুও কাঁপে না। সাময়িকের জন্য আপাতদৃষ্টিতে চাটুকারদের ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দল শুভাকাঙ্ক্ষী মনে করতে পারে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দীর্ঘমেয়াদে এই চাটুকাররা ক্ষতিকর।

চুপ থেকে অপরাধকে প্রশয় দিয়ে এবং প্রকাশ্যে অন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নিয়ে অন্যায়কে সমর্থন করে কেউ কেউ নিজেদের পদ বাগিয়ে নেওয়া, অর্থনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি, পদোন্নতি ইত্যাদি সাময়িক উন্নতি ঘটাতে পারলেও জাতির জন্য দীর্ঘদিনের ক্ষত করে যায় এরা। এমন লোক শিক্ষক সমাজ, সাংবাদিক সম্প্রদায়, উকিল সমাজসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য বিপজ্জনক। এরা সমাজশত্রু, এমন লোক পেশায় এসে সুতা কাটে ভেতর থেকে।

প্রশাসন পকেটে, পুলিশ হাতে রেখে সর্বগ্রাসী ক্ষমতার যে অপচর্চা জেলা আইনজীবী সমিতি থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে বিগত এক দশকে শুরু হয়েছে তা রাষ্ট্রের জন্য খুবই ভয়াবহ। বর্তমানে সরকারি দল, বিরোধীদল হয়ে যেতে পারে ভবিষ্যতে। ক্ষমতার এমন পৈশাচিক, বেঢপ ও অমানবিক অপচর্চার সাময়িকের সুবিধাভোগী এখন যারা হচ্ছে তারা বৈরী পরিবেশে কুলিয়ে উঠতে পারবে তো? মনে হয় না। তাই নিজেদের জন্য নিজেদের শুধরে যাওয়া উচিত।

রাষ্ট্র যে সরকারি কর্মচারীর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে, নিয়ম করে পদোন্নতি দেয় তারা আমাদেরকে কানে ধরে ওঠবস করায়, ফাঁসিয়ে দেয়, দাঁড় করিয়ে মৃত্যু ঘটায়, জুতার মালা পরিয়ে বরণ করে নেয়। জনগণ যদি সত্যিই সব ক্ষমতার উৎস হয় তবে কেন জনগণের মানবিক মর্যাদা আর সামাজিক ন্যায়বিচার এভাবে ক্ষুণ্ন হবে?

কেন মানুষ নিজ কর্মচারী কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন? শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ অন্যান্য পেশাজীবীরা কেন নিজেদের মান-ইজ্জত হারানোর শঙ্কা নিয়ে বাস করবেন? জনগণের তথা সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া কেউই ভালো থাকতে পারে না। আমলা বা অপরাজনীতি করা ব্যক্তিরা ভাবতে পারে তারা ভালো আছে। কিন্তু আসলে না। কারণ তারা দেবতাতুল্য হয়ে উঠলেও আমাদের মতো পশুদের সঙ্গেই তো তাদের এই সমাজে বাস করতে হচ্ছে।

ক্ষমতার অমানবিক ও ভারসাম্যবিহীন অপচর্চাকারী তথাকথিত মনিবরা আমাদের মতো চাকরদের সঙ্গে দীর্ঘদিন থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে উঠলে তো বিপদে পড়তে হবে।

চাকরের সঙ্গে থাকতে তাদের আগামী প্রজন্মও অস্থির হয়ে উঠলে তখন কী হবে? যদি তাদের আগামী প্রজন্ম বিসিএস পাস দিয়ে সরকারি চাকরি না পান তবে কী হবে? বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সকল মানুষের পর্যাপ্ত নিরাপদে থাকার কথা। সুতরাং সংবিধান কার্যকর থাকলে তো আইনজীবী, শিক্ষক সমাজের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট পেশাজীবীর সুরক্ষার জন্য ভিন্ন আইন প্রণয়নের কথা উঠত না। দুর্ভাগ্য আমাদের যে স্বাধীনতার ৫৪তম বছরে এসে এমন দাবিও উঠছে!

শিক্ষাবার্তা ডটকম/জামান/০৯/০৪/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Check Also

ঋণের সুদহার আরো বাড়াল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে নীতি সুদহার বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। …