আরও একটি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখার অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

কর আদায়ের নির্দেশ এবং ব্যাংক হিসাব স্থগিত করায় সংকটে রয়েছে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এরই মধ্যে নতুন করে আরও একটি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শাখা’ বা ‘স্টাডি সেন্টার’ খোলার অনুমোদন দিয়েছে সরকার। বিশ্ববিদ্যালয়টি হলো যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট্রাল ল্যাঙ্কাশায়ার।

৩ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-১) ড. মো. ফরহাদ হোসেন স্বাক্ষরিত অফিস আদেশ থেকে এ স্টাডি সেন্টারের অনুমোদনের বিষয়টি জানা যায়। ওই আদেশে ১৪টি শর্তে সাত বছরের জন্য এ স্টাডি সেন্টারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কর আদায়ের নির্দেশ এবং ব্যাংক হিসাব স্থগিত করায় সংকটে রয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এর মধ্যে নতুন করে আরও একটি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি সেন্টার অনুমোদন দেওয়া ঠিক হয়নি। এতে উচ্চ শিক্ষা খাতে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।

বর্তমানে দেশে ১১৪টি অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ১০৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ ছাড়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৫৫টি।আর ৩টি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।

নতুন করে আরও একটি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাসের অনুমোদন দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিষ্ঠাতা-উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির (এপিইউবি) চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন। তিনি বলেন, ‘আইনগত জটিলতা নিরসনের আগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কর আদায়ের নির্দেশ এবং ঈদের আগে ব্যাংক হিসাব স্থগিত করায় সংকটে রয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এর মধ্যে আরও একটি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা বা স্টাডি সেন্টার অনুমোদন দেওয়া ঠিক হয়নি। আমরা একাধিকবার এ ধরনের কোচিং সেন্টারকে অনুমোদন না দিতে দাবি জানিয়েছিলাম। এর ফলে উচ্চশিক্ষা খাতে বৈষম্য ও অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট্রাল ল্যাঙ্কাশায়ারের স্টাডি সেন্টারের জন্য আবেদন করেছে এডুকো বাংলাদেশ লিমিটেড। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রস্তাবিত এলাকা দিয়েছে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রামগুলো ‘ইউনিভার্সেল কলেজ বাংলাদেশ’-এর মাধ্যমে পরিচালিত হবে। এর আগে একই প্রতিষ্ঠান অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক ‘মোনাস’ এবং লন্ডনভিত্তিক ‘লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস’-এর অনুমোদন পায়।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, প্রয়োজন না থাকলেও উচ্চ মহলের চাপে এ স্টাডি সেন্টারটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর পেছনে রয়েছে বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সাবেক এক মন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) মতামতকেও অগ্রাহ্য করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সচিব ড. ফেরদৌস জামান গতকাল রোববার বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। অনুমোদনের সিদ্ধান্ত তারাই নিয়েছে।’

বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার অনুমোদনের বিরোধিতা করছেন শিক্ষাবিদেরা। তাঁরা বলছেন, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা আগে নিরূপণ করতে হবে। তারপর অনুমোদন দেওয়া উচিত।

শিক্ষাবিদ ও ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, ‘আমার জানামতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান আইনের সঙ্গে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস অনুমোদনের বিষয়টি সাংঘর্ষিক। এতে উচ্চশিক্ষায় অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। আমাদের এত সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থাকতে কেন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাসের অনুমোদন দিতে হবে?’

সার্বিক বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) খালেদা আক্তার বলেন, ‘সরকার প্রয়োজন মনে করেছে বলেই অনুমোদন দিয়েছি। এর বাইরে আর কিছু বলতে চাই না।’

শিক্ষাবার্তা ডট কম/জামান/০৮/০৪/২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.