নিজস্ব প্রতিবেদক।।
সরকারি অফিস খোলা থাকছে আজ সোমবার ও মঙ্গলবার। সেই অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীদের শেষ কর্মদিবস হচ্ছে আগামীকাল মঙ্গলবার। ক্যালেণ্ডারের হিসেবে পবিত্র ঈদুল আজহার আর মাত্র ৩’দিন বাকি। এরই মধ্যে সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছেন ঈদ উদযাপন করার জন্য। সাধারণ মানুষের মত বেশিরভাগ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং এমপিরা এবার নিজ এলাকাতেই ঈদ উদযাপন করবেন।
আবার অনেক সচিবও নিজ এলাকাতে ঈদ উদযাপন করবেন বলে জানা গেছে। কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী জানান, তারা নিজেদের এলাকার ভোটারদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে গ্রামে ঈদ করতে ঢাকা ছাড়বেন।
সুত্র জানায়, শেষ কার্যদিবসে অফিস করে মঙ্গলবার থেকে অনেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী নিজ নিজ আসনে চলে যাবেন। সেখানে ঈদের নামাজ আদায় করবেন এবং দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ সুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। এবার বেশিভাগই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এলাকায় যাচ্ছেন। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা ঈদে বাড়ি গেলেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে পারছে না।
এছাড়া অনেক আগেই স্থানীয় এমপিরা এলাকায় অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। এদিকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে প্রার্থী না দিলেও দলটির সংসদ-সদস্য, মন্ত্রী ও স্থানীয় নেতারা নিজেদের নিকটাত্মীয় ও স্বজনদের প্রার্থী করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে অনেকের বিরুদ্ধে।
এবার ঈদে তাদের সরব উপস্থিতিতে দলীয় রাজনীতিতে বড় প্রভাব পড়বে বলেই মনে করছেন নেতাকর্মীরা। যদিও বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। ইতোমধ্যেই দলের বিভাগীয় বৈঠকগুলোতে এমপি-মন্ত্রীদের পক্ষপাতিত্ব না করার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কেউ নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করলে তাকে সাংগঠনিক শাস্তির আওতায় অনা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
আসন্ন ঈদুল ফিতরের পরেই শুরু হচ্ছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। ফলে ঈদ কেন্দ্র করে এবার দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ ভোটারের কাছেও ছুটছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে টানিয়েছেন পোস্টার-ব্যানার-ফেস্টুন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অনলাইনেও ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী সাধারণ মানুষের পাশে থেকে মন জয় করার চেষ্টা করছেন। প্রার্থী ও সমর্থকদের পদচারণায় ইতোমধ্যেই তৈরি হয়েছে ভিন্ন আমেজ।
এছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রথম ঈদ হওয়ায় স্ব স্ব এলাকায় ছুটছেন স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীরাও। নির্বাচনি এলাকায় অবস্থানকালে তারাও গুরুত্ব দিচ্ছেন উপজেলা নির্বাচনকে। দলের হাইকমান্ডের নিষেধ থাকলেও পছন্দের প্রার্থীদের নানাভাবে সামনে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন তারাও।
সব মিলিয়ে এবারের ঈদের আমেজ বাড়িয়ে দিয়েছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। দেশজুড়ে পবিত্র ঈদ উল ফিতর পালিত হবে। করোনা মহামারির কারণে গত কয়েক বছর নানা বিধিনিষেধ থাকায় ঈদ উৎসব সেভাবে উদযাপন করতে পারেনি দেশবাসী। তাই এবার ঈদ উদযাপনে বাড়তি উৎসাহ মানুষের মধ্যে। সাধারণ মানুষের মতো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদেরও রয়েছে ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি।
প্রতিবারই সর্বসাধারণের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ও আলোচিত রাজনৈতিক নেতাদের ঈদ। কোন দলের কোন নেতা বা সরকারের কোন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-এমপি কোথায় ঈদ করবেন, এ নিয়ে রয়েছে মানুষের কৌতুহল। বর্তমানে দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকায়ই অনেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী তার নিজ এলাকায় ঈদ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যথারীতি গণভবনে ঈদ উদযাপন করবেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক নিজ এলাকা গাজীপুরে ঈদের নামাজ আদায় ও সেখানে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং সাবের হোসেন চৌধুরী ঢাকাতেই ঈদের নামাজ আদায় ও শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঢাকায় তার নির্বাচনী এলাকা তেজগাঁওয়ে ঈদ করবেন। মনিপুরীপাড়ার মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করার কথা রয়েছে তার। পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ নিজ নির্বাচনী এলাকা রাঙ্গুনিয়ায় ঈদ করবেন। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম নিজ নির্বাচনী এলাকা কুমিল্লাতে ঈদের নামাজ আদায় এবং সেখানে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। সমাজকল্যাণ ডাক্তার দীপু মনি ঢাকাতেই ঈদ উদযাপন করবেন। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার নিজ নির্বাচনী এলাকা নওগাঁতে ঈদ করবেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন নিজ গ্রাম মেহেরপুরে ঈদ করবেন। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ঈদ করবেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরে এর পরে বঙ্গভনে আসবেন। মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে ঈদের জামাত আদায় ও শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন নিজ নির্বাচনী এলাকা নরসিংদীতে ঈদের নামাজ আদায় ও সেখানে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল চট্টগ্রামে ঈদের নামাজ আদায় ও সেখানে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এলাকা ঢাকাতেই ঈদ করবেন। নৌ-পরিবহন মন্ত্রী মন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী দিনাজপুরে ঈদ করনে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদের নামাজ আদায় ও শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক নিজ নির্বাচনী এলাকা বরিশালে ঈদের নামাজ আদায় ও সেখানে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
মন্ত্রিসভার একটি সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারি ছুটি ৯ এপ্রিল এক দিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়নি মন্ত্রিসভায়। ফলে এবার ঈদের ছুটি আগের ঘোষণা অনুযায়ী ১০ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত তিন দিনই থাকছে। যদিও বাস্তবে সরকারি চাকরিজীবীরা ছুটি ভোগ করবেন আরও বেশি। কারণ, ১৩ এপ্রিল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। তার পরদিন রোববার আবার পয়লা বৈশাখের ছুটি। মানে হলো, পাঁচ দিন টানা ছুটির সুযোগ থাকছেই।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারি ছুটি (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে) ১০ থেকে ১২ এপ্রিল। তবে গতকাল রোববার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ৯ এপ্রিল এক দিন ছুটি বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছিল। এদিকে পবিত্র শবে কদরের জন্য গতকাল সরকারি ছুটি ছিলো।
তার আগে ৫ ও ৬ এপ্রিল দুই দিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। ফলে কোনো কর্মকর্তা–কর্মচারী যদি ৮ ও ৯ এপ্রিল ছুটি নিতে পারেন, তাহলে তিনি লম্বা ছুটি ভোগ করতে পারবেন। শবে কদরের ছুটির পর আজ সোম ও মঙ্গলবার দুদিন অফিস খোলা। ১১ এপ্রিল ঈদ হলে বাড়ি যেতে মাত্র একদিন ১০ এপ্রিল সময় পাওয়া যাবে। এর মধ্য দিয়ে এখন ১০ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত টানা পাঁচ দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/জামান/০৮/০৪/২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.