চাঁদপুরঃ জেলায় প্রধান শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় শিক্ষকদের পেটানোর অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে।
শনিবার (৬ এপ্রিল) হাইমচর প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন হামলার শিকার শিক্ষকরা।
এর আগে বুধবার (৩ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে হাইমচর উপজেলার নীলকমল ওছমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নীলকমল ওছমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি এস এম আল মামুন সুমন আত্মীয়করণের মাধ্যমে সহকারী প্রধান শিক্ষক, কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর, জেনারেল ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট নিয়োগে অনিয়ম করেছেন। সভাপতির আরেক আত্মীয় ফারুকুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে গোপনে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
প্রথম শ্রেণির কোনো জাতীয় পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যায়নি। সেদিন হাইমচরে ওই পত্রিকা আসতে দেওয়া হয়নি। আবেদনের সময়সীমা শেষ হওয়ার পরও প্রধান শিক্ষক পদে কতটি আবেদনপত্র জমা পড়েছে তা কেউ জানে না। এমনকি শিক্ষক প্রতিনিধিরাও জানেন না।
জানা গেছে, বিদ্যালয়ে চলমান দুর্নীতি এবং অনিয়ম নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রাক্তন শিক্ষার্থী পরিষদ এবং ম্যানেজিং কমিটির একাংশ। অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসক তদন্ত কমিটি গঠন করেন। পরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে কমিটি বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান।
তদন্ত চলাকালে ঘটনাস্থলে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির নেতৃত্বে হট্টগোলের সৃষ্টি করে বহিরাগতরা। হট্টগোলের একপর্যায়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এ সময় হঠাৎ বিদ্যালয়ের সভাপতি এস এম আল মামুন সুমন এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফারুকুল ইসলামের নেতৃত্বে বহিরাগতরা উপস্থিত শিক্ষকদের ওপর হামলা করে।
হামলার শিকার বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আলী আকবর বলেন, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য ও দুর্নীতি করে আসছেন। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় আমাদের গালাগাল এবং হুমকি-ধমকি দেন। এ ঘটনায় আমরা তার বিচার চাই।
আহত আরেক শিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলেন, সভাপতি এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকায় তারা আমাকে হুমকি দেন। তারপর আমার ওপর হামলা চালিয়ে গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেন।
এ বিষয়ে নীলকমল ওছমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক ফারুকুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে কথা বলার কিছু নেই। কারণ মামলা হয়েছে, সেখানে কথা হবে। যারা আমাদের বিষয়ে অভিযোগ করেছেন তা একেবারেই অসত্য।
মারধরের বিষয়ে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এস এম আল মামুন সুমন বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। নিয়োগসংক্রান্ত বিষয়ে আমরা সবাই যখন একসঙ্গে বসেছি, শুধু আমাদের মধ্যে হট্টগোল হয়েছে। কেউ কারও শরীরে আঘাত করেনি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোস্তফা কামাল বলেন, বিষয়টি জানার পর আমি নিজে তদন্তে গিয়েছি। সবার সঙ্গে বসে মীমাংসা করার চেষ্টাও করেছি। কিন্তু সেখানে সবাই উত্তেজিত হয়ে হট্টগোল শুরু করে দেন। যে কারণে মীমাংসা করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে এ বিষয়ে মামলা চলমান। অভিযোগের বিষয়টি মামলার রায়ের পর বোঝা যাবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৭/০৪/২০২৪