নিজস্ব প্রতিবেদক।।
শ্রেণীকক্ষ ও শিক্ষক সংকটসহ নানা সমস্যায় ভুগছে নোয়াখালী সরকারি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (এটিআই)। জেলার বেগমগঞ্জে অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে পর্যাপ্ত ক্লাস না হওয়ায় শিক্ষাজীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা। আবাসিক হলের বাইরে চাকচিক্য থাকলেও দরজা-জানালা ভাঙা।
অপরিষ্কার পানি ব্যবহারে চর্মসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। রয়েছে বহিরাগতদের উৎপাত, ক্যান্টিন ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে পণ্যের অতিরিক্ত দাম নেয়ার অভিযোগ। এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করলে শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় প্রশাসনের রোষানলে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে সংকট নিরসনের আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অপর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ আর শিক্ষক সংকটে ব্যাহত হচ্ছে তাদের শিক্ষাজীবন। প্রতি সেশনের শিক্ষার্থীদের জন্য সপ্তাহে বরাদ্দ মাত্র দুটি ক্লাস। রয়েছে বহিরাগতদের উৎপাত। ক্যাম্পাসের ক্যান্টিন ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোর মালিক পণ্যের দাম নিচ্ছে বাড়িয়ে। অতিরিক্ত চার্জ দিয়ে আবাসিক হলে থাকলেও ভাঙা দরজা-জানালা, নেই পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা।
সাইফুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অধ্যক্ষসহ পাঁচ-সাতজন শিক্ষক রয়েছেন। নেই পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ। অথচ এখানে শিক্ষার্থী রয়েছে আট শতাধিক। শিক্ষক ও শ্রেণীকক্ষ সংকটের কারণে প্রতি সেশনে শিক্ষার্থীদের জন্য সপ্তাহে ক্লাস বরাদ্দ মাত্র দুটি। এতে সিলেবাস নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা যায় না। ভালোভাবে ক্লাস না হওয়ায় মৌলিক বা তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জন কঠিন হয়ে পড়ে।’
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, অন্যান্য কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (এটিআই) ছয় মাসে হল ভাড়া দিতে হচ্ছে সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা। কিন্তু এখানে শুরুতেই দিতে হয়েছে ৯০০ টাকা। চলতি বছর আবারো বাড়িয়ে ১ হাজার ২০০ টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি বছর হল ভাড়া দিতে হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ টাকা।
অথচ আবাসিক হলের ভেতরের প্রত্যেকটি জানালা ও দরজা ভাঙা। দীর্ঘ আট বছরেও পানির ট্যাংক পরিষ্কার করা হয়নি। প্রতিটি শিক্ষার্থী চর্মসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
আট শতাধিক শিক্ষার্থীর এ ইনস্টিটিউটকে বাণিজ্যিক কেন্দ্রে রূপ দেয়ার অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। নিয়ম না থাকলেও দিঘিগুলো দেয়া হয়েছে লিজ। ফলে মাছ চাষ করতে গিয়ে পানিতে ব্যবহার করা হচ্ছে নানা রাসায়নিক।
এসব নিয়ে বিভিন্ন সময় আন্দোলন করলেও সমাধান মেলেনি অতীতে, উল্টো রোষাণলে পড়তে হয়েছে শিক্ষার্থীদের।
আরাফাত ও লাব্বি নামে দুই শিক্ষার্থী জানান, ইনস্টিটিউটে দুটি বড় দিঘি রয়েছে। কয়েক বছর আগেও এ দিঘির মাছের ভাগ পেতেন হলে অবস্থান করা শিক্ষার্থীরা। কিন্তু গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে নিয়মিত দিঘিগুলো লিজ দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা মাছের কোনো ভাগ পায় না, সব নিয়ে যায় তারা।
একই সঙ্গে সমানের দিঘিতে একটি ছোট দ্বীপের মতো ছিল, সেখানে পুরনো বড় একটি কদম গাছ ছিল। ওই গাছে শত শত পাখি আসত, অতিথি পাখি আসত দিঘিতে। কিন্তু গাছটি কেটে ফেলার কারণে পাখির সেই কলতান আর নেই। পানিতে বিভিন্ন রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে অতিথি পাখিও আসে না। ইনস্টিটিউটের সৌন্দর্য নষ্ট করে দিয়েছেন বর্তমান অধ্যক্ষ।
ব্যক্তিমালিকানায় ক্যান্টিন লিজ দেয়া হয়েছে, এতে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য নষ্ট হয়েছে। অন্যদিকে বহিরাগতদের আড্ডা বেড়ে গেছে। এতে করে মেয়ে শিক্ষার্থীরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। অন্যদিকে প্রায় সময়ই ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মারামারির ঘটনা ঘটছে।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘এসব বিষয়ে অধ্যক্ষ বা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না। প্রতিবাদ করলে উল্টো রোষাণলে পড়তে হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের ফেল করানোর মতো জঘন্য কাজ করতেও দ্বিধাবোধ করছেন না শিক্ষকরা।’
তবে বেশির ভাগ অভিযোগ অস্বীকার করলেও শ্রেণীকক্ষ ও শিক্ষক সংকটের কথা স্বীকার করেন অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন। তিনি বলেন, ‘যা করা হয়েছে, তা শিক্ষার্থীদের মঙ্গলের জন্যই করা হয়েছে।’
দ্বীপের গাছ কাটার কথা স্বীকার করলেও কেন কেটেছেন সেটার সঠিক উত্তর না দিয়ে অধ্যক্ষ বলেন, ‘সেখানে নতুন করে কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণ করা হয়েছে।’
তার দাবি, এরই মধ্যে নতুন একাডেমিক ভবন ও আবাসিক ভবনের জন্য ডিপিপি জমা দেয়া হয়েছে। শিক্ষক সংকট নিরসনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত দেয়া হয়েছে। দ্রুত সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। একই সঙ্গে দ্রুত পানি সমস্যা সমাধান করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/জামান/০৭/০৪/২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.