বিশেষ প্রতিবেদক।।
কবি নজরুলের রচিত ও তার শিষ্য আব্বাস উদ্দিনের কণ্ঠে ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ এই লাইনটির সঙ্গে আমরা পরিচিত শৈশব থেকেই। কৈশোর পেরিয়ে একটা পরিণত বয়সে পা রাখার পরে ঈদ যেন আমাদের কাছে একটি দায়িত্ববোধ। এই দায়িত্ব ঠিকঠাকভাবে পালনেই যেন আমরা ঈদের আনন্দের প্রকৃত নির্যাস খুঁজে পাই। তবে ছোটবেলার ঈদগুলো ছিল একটু অন্যরকম।
ঈদের অনুভুতি প্রকাশ করতে গিয়ে কুমিল্লার শিক্ষক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, বয়স ভেদে ঈদের আনন্দ ভিন্ন। বর্তমানে ঈদে তখনকার মতো রোমাঞ্চকর আনন্দ, খুশি আর এখন খুঁজে পাই না। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই যেন আনন্দগুলো হারিয়ে যাচ্ছে! তখন ইদের আনন্দ শুরু হতো সেই প্রথম রোজা থেকেই। ঈদ কবে আসবে সেই দিন গুনতে থাকতাম প্রতিদিন। মনে মনে কত পরিকল্পনা! সে অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার নয়। এখন তা কেবলই স্মৃতি।
বরিশাল থেকে শিক্ষক উম্মে কুলসুম বলেন,ঈদ আমাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব, এখানে আনন্দ আর খুশির ব্যাপ্তিটা বিশাল। সেই খুশি ও আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে পারার মধ্যেই সার্থকতা। কর্মব্যস্ত জীবন শেষে যখন একটু ছুটি পাব সেই সময়টা কাটবে ঈদ আনন্দে। ধনী-গরিব সবার ঘরে ঈদ আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক, শান্তি মিলুক সবার অন্তরে এটাই এই ঈদে প্রত্যাশা।
খুলনা থেকে শিক্ষক মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন,মাহে রমজান শেষে আবারও আমাদের মাঝে ফিরে আসছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদ ধনী-গরিবের মাঝে বৈষম্য দূর করে সাম্যের কথা বলে। এই তো ছোটবেলায় ঈদকার্ড কেনা, বন্ধুর বাড়ি গিয়ে হলুদ খামে ঈদকার্ড দিয়ে আসা, ঈদকার্ডের দোকান দেওয়া, স্টিকার কেনাবেচা কী এক আনন্দ ছিল। বয়স যতই বাড়ছে, হারিয়ে যাচ্ছে সোনালি দিনগুলো। সেই দিনগুলো হারিয়ে এখন আমরা ব্যস্ত বিলাসী ও শো অফ করতে। আসুন এই ঈদে শুধুই দামি পোশাকে বিলাসিতা না করে জাতি-ধর্ম-বর্ণ, শ্রেণি-পেশা দল-মত নির্বিশেষে আর্তমানবতার পাশে দাঁড়াই। হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে সাম্য, মৈত্রী, সহমর্মিতা, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হই।
চট্রগ্রাম থেকে শিক্ষক মো. কামাল হোসেন বলেন,শৈশবের ঈদে আনন্দ ছিল। ঈদ মানেই খুশি, ঈদ মানেই আনন্দ। এবার ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিনের ছুটিতে ঈদ উদযাপন করতে বাড়িতে আসি। কিন্তু আমেজটা নেই। ছোটবেলায় ঈদ এলে কী যে খুশি হতাম, নতুন জামাকাপড় কেনা হবে। সব থেকে মজার ছিল ঈদের সালামি।
রংপুর থেকে শিক্ষক মো. আলী বলেন, এখনকার মতো এতটা বর্ণিল ছিল না আগের সময়ের ঈদ। সেই সময়ে চাকচিক্যের বাহুল্য নয়, সহজ–সাধারণ আনন্দের মধ্যেই ঈদের দিন যাপিত হতো। তখন শহরের লোকজন এতটা বেশি না থাকায় মাঠে এত বেশি জমায়েত না হলেও নেহাত কম হতো না। এক কথায় বলতে গেলে বলতে হয় মানুষের মধ্যে এক অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ছিলো এখন প্রায় শুন্যের কোঠায়।
রাজশাহী থেকে শিক্ষক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘রমজানের ও ঈদের চাঁদ দেখার জন্য ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল। ঈদের দিন আমরা গোসল করে আতর মেখে সার্কিট হাউস মাঠে যেতাম। পাটকলগুলো থেকে চট এনে বিছিয়ে দেওয়া হতো, তার ওপর যার যার জায়নামাজ পেতে আমরা ঈদের নামাজ পড়তাম। ‘ঈদের দিন আমরা বাড়ি বাড়ি যেতাম, সালাম করতাম, সালামি পেতাম। আসলে ঈদের দিন কাটত বেড়িয়ে বেড়িয়ে।
ময়মনসিংহ থেকে শিক্ষক মো. সামিউর বলেন,ছোটদের পোশাকের আলাদা বৈচিত্র্য তেমন কিছু ছিল না। তবে নতুন পোশাক সবাই পরত। এখনকার মতো নতুন জামাকাপড়, জুতা আর সুস্বাদু খাবারের সমারোহ তখনো ছিল। তবে এখন ঈদের বাহ্যিক চাকচিক্য বেড়েছে বহুগুণ। সময়ের পরিবর্তনে যোগ হয়েছে প্রচুর অনুষঙ্গ। পোশাক, সাজগোজ আর আতিথেয়তায় বদল এসেছে অনেক।
সিলেট থেকে শিক্ষক মো. নুরুজ্জামান বলেন,তখন এখনকার মতো উপচে পড়া ভিড় হতো না। এখন জমকালো তোরণ, প্যান্ডেল, সিটি করপোরেশনের বড় আয়োজন—এসব আগে ছিল না। তখন নামাজ পড়ত, মানুষ কোলাকুলি ও কুশল বিনিময় করে চলে আসত। এখন তো অনেক কিছু, তবে কিছুটা আর্টিফিশিয়াল হয়ে গেছে।
ঢাকা থেকে শিক্ষক মো. শাহ আলম বলেন,সালাম করলে দু-চার আনা সালামি পাওয়া যেত। তাতে খুব খুশি হতাম। নদীর ওপারে যাওয়া ছিল রোমাঞ্চকর। আর সামাজিক বন্ধন বেশি থাকায় বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ানোটা বেশি ছিল। ঈদের দিন মানুষ পার্কে সময় কাটাতে তেমন যেত না।’
শিক্ষাবার্তা ডটকম/জামান/১১/০৪/২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.