শিক্ষাবার্তা ডেস্ক, ঢাকাঃ আয়কর না দেওয়ার অভিযোগে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। পাশাপাশি বকেয়া কর পরিশোধের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে।
সূত্র জানায়, প্রায় ৫০টির বেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে আয়কর পরিশোধের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে প্রায় ১২টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। তবে এই সংখ্যা বাড়তে পারে।
জানা গেছে, ঈদের আগে ব্যাংক হিসাব জব্দ করায় বিপাকে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। জব্দ করা ব্যাংক হিসাব দ্রুত খুলে না দিলে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি ৩১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে কর পরিশোধের জন্য চিঠি দিয়েছে এনবিআর। এরমধ্যে চারটি বিশ্ববিদ্যালয় আংশিক কর পরিশোধ করায় তাদের দেওয়া চিঠি প্রত্যাহার করা হচ্ছে।
যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ও সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি।
এছাড়া কর পরিশোধের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, নটর ডেম ইউনিভার্সিটি, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, এক্সিম ব্যাংক ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি।
সোমবার (১ এপ্রিল) বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির পরিচালক বেলাল আহমেদ বলেন, বকেয়া কর পরিশোধে চিঠি দিয়েছে ৫০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়কে। প্রায় ৩০টা বিশ্ববিদ্যালয় ঝামেলায় ফেসে গেছে। অনেকগুলোর একাউন্ট ফ্রিজ করে দিয়েছে। কোনো কোনো জায়গা থেকে এনবিআর অলরেডি ডেবিট করে নিয়েছে টাকা। এটা করা উচিৎ হয়েছে কি না জানি না।
তিনি বলেন, কতটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব জব্ধ করা হয়েছে এটা সুনিদৃষ্ট না। গত বৃহস্পতিবার (২৯ মার্চ) পর্যন্ত ১০-১১টা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। আজকে আরও ২টার খবর জেনেছি। এটা অফিশিয়ালি জানি। আর আনঅফিশিয়ালি ২৫টার ওপরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
জানা যায়, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার বরাবর ৪ মার্চ চিঠি পাঠান ঢাকা কর অঞ্চল-১১-এর উপ-কর কমিশনার মো. জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া। প্রাইম ইউনিভার্সিটিসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়কে একই দিন আয়কর প্রদানের তাগাদাপত্র দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ১৫ মার্চের মধ্যে আয়কর পরিশোধের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কর প্রদানে ব্যত্যয় হলে আয়কর আইন ২০২৩-এর ২৭৫ ধারা অনুযায়ী জরিমানাসহ অন্যান্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয় এনবিআরের ওই চিঠিতে।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানে চিঠিতে আয়কর আইন ২০২৩-এর ২১৪ ধারা মোতাবেক বকেয়া কর পরিশোধের জন্য বলা হয়। ২০০২-৩ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত (১৬ অর্থবছরে) মোট ১৮০ কোটি ৫০ লাখ ৯৪ হাজার ৫৬৪ টাকা কর পরিশোধ করতে বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয়টিকে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, কর পরিশোধের জন্য এনবিআর থেকে চিঠি পেলেও, ব্যাংক হিসাব জব্দের বিষয়ে কোনো চিঠি তারা পায়নি। ব্যাংক থেকে ফোন করে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
২০০৭ সালের ২৮ জুন এক প্রজ্ঞাপনে রাজস্ব বোর্ড জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) অনুমোদিত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং অপরাপর বিশ্ববিদ্যালয় যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নয়, তাদের উদ্ভূত আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে আয়কর পুনর্নির্ধারণ করা হলো। ১ জুলাই থেকে এটা কার্যকর হবে।
২০১০ সালের ১ জুলাই এনবিআরের আরেক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা শুধু তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজের উদ্ভূত আয়ের ওপর প্রদেয় আয়করের হার হ্রাস করে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো।
এরপর বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ৪৬টি রিট করা হয়। ওই দুটি প্রজ্ঞাপন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। এরপর উচ্চ আদালতের দেওয়া ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি আপিলের অনুমতি দেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ আয়কর আদায় থেকে বিরত থাকতে এনবিআরকে নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে আইনি লড়াই শেষে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বোরহান উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ আদেশ দেন, দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে।
আইনি জটিলতা নিরসনের আগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কর আদায় না করা এবং ঈদের আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যাংক হিসাব জব্দ করার মতো চূড়ান্ত পদক্ষেপ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি। একই সঙ্গে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে, সেগুলো পুনরায় চালুর নির্দেশনা দেওয়ারও অনুরোধ জানিয়েছে সংগঠনটি। জাগো নিউজ
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০১/০৪/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.