ঢাকাঃ শিক্ষক ও সহপাঠীকে অভিযুক্ত করে সুইসাইড নোট লিখে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনার ১৭ দিন কেটে গেছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ঘটনার পরদিনই পাঁচ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে সাতদিন সময় দেওয়া হয়। নির্দেশনার ১৭ দিন অতিবাহিত হলেও এখনও জমা পড়েনি তদন্ত প্রতিবেদন। তবে কমিটি বলছে, তদন্ত প্রতিবেদন কবে জমা দিতে হবে, তার স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা তাদের দেওয়া হয়নি। আর উপাচার্য বলছেন, তিনি আশাবাদী— ঈদের পর তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাবেন।
গত শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে নিজের ফেসবুক ওয়ালে সহপাঠী রায়হান সিদ্দিকি আম্মান ও সাবেক সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে দায়ী করে কুমিল্লার নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী অবন্তিকা। এরপরই উত্তাল হয়ে পড়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এদিন মধ্যরাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আশ্বাস দেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। পরদিন (১৬ মার্চ) প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপাচার্য বলেন, ‘আমি কথা দিচ্ছি, তদন্ত কমিটি সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। তাছাড়া এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে ঘটা ঘটনারও তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে। আর আমার হাতে যত আইন আছে, সব আইনের সর্বোচ্চ ব্যবহার করব।’
শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মধ্যে উপাচার্য সাত দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের আশ্বাস দিলেও তা পেরিয়েছে ১৭ দিন। তবে এই সময়েও তদন্তের কাজই শেষ করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠিত উচ্চপর্যায়ের এই তদন্ত কমিটি।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, এর আগেও বিভিন্ন ঘটনা তদন্ত কমিটি গঠন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। আজ পর্যন্ত সেসব তদন্তের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। তদন্ত সাপেক্ষে অতিদ্রুত দোষীদের শাস্তি দিতে হবে।
নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী কিশোর সাম্য প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের সব আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ছিল। তবে প্রশাসন যদি আমাদের আন্দোলন হালকাভাবে নেয় তাহলে হয়তো এরপরের আন্দোলনগুলো শান্তিপূর্ণ থাকবে না।
‘ক্যাম্পাস এখন অফিসিয়ালি বন্ধ, তাই প্রশাসন প্রকৃতিগতভাবে এর সুবিধাটি পেয়ে গেছে। ঈদের পরেই প্রশাসনকে আমাদের মুখোমুখি হতে হবে এবং ছাত্ররা আরও কঠোর হবে,’ হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ইভান তাহসিব বলেন, ‘আমরা যখন উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিই তখন তাদের পক্ষ হতে বলা হয়েছিল তদন্তের বিষয়গুলো একটা পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যায়। তাই একটু সময় লাগতে পারে। আর এখন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় আন্দোলন করাও সম্ভব নয়। আমরা দেখব এই বন্ধের ভেতরে প্রশাসন কতটুকু কাজ করে। প্রশাসনের ঢিলেমি থাকলে আমরা ক্যাম্পাস খুললে আবারও আন্দোলন করব।’
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা এখনও কাজ শেষ করতে পারিনি। তবে আমরা প্রতিদিনই এটা নিয়ে বসছি। এর আগে বর্তমান ও সাবেক প্রক্টর, আইন বিভাগের চেয়ারম্যান, তৎকালীন প্রভোস্ট ও একজন হাউজ টিউটরের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল। নতুন কিছু ইনফরমেশনের জন্য আমরা আবারও বসেছি।’
সাত দিনের বেঁধে দেওয়া সময় শেষে পার হয়েছে দশ দিন। উপাচার্য যা বলছেন, তাতে লাগতে পারে আরও অন্তত দশ দিন।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, ‘সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিলে সেই রিপোর্ট অত্যন্ত কাঁচা হয়। যেহেতু তদন্তের কাজ চলছে, আমাদের শিক্ষকরা কেউ বসে নেই। তদন্ত কমিটির আহবায়ক অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে নিরলস পরিশ্রম করছেন। ইতোমধ্যে কয়েকবার কুমিল্লাতেও গিয়েছেন তারা। আশা করছি, ঈদের পরপরই আমরা তদন্ত রিপোর্ট হাতে পাব।’
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০১/০৪/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.