ঢাকাঃ জেলার ধামরাইয়ের রঘুনাথপুর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে কলেজ তহবিলের এবং দুটি এফডিআরসহ বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে ৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। একই সঙ্গে কলেজের নামে ১০০ শতাংশ জমি দান করে দেয়া দলিলও জাল বলে তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেছে। ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন থেকে বিষয়টি জানা গেছে।
জানা যায়, ধামরাইয়ের রঘুনাথপুর এলাকার ডা. আমিনুর রহমান মারা যাওয়ার আগে ১০০ শতাংশ জমি কলেজের নামে দানপত্র দলিল করে দেন। কলেজটির নামকরণ করা হয় রঘুনাথপুর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজ। এরপর তার স্ত্রী মমতাজ বেগম কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। পরে ২০০৪ সালে কলেজটি এমপিওভুক্ত হওয়ার পর কলেজের অধ্যক্ষ মমতাজ বেগম আত্মীয়করণের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে তার ভাই আবদুল আউয়ালকে ৩ দফায় দীর্ঘ ১৪ বছর কলেজের সভাপতি রেখে বিভিন্নভাবে অর্থ হাতিয়ে নেন। এরপর অজ্ঞাত কারণে ২০১৪ সালে ধামরাইয়ের তৎকালীন ইউএনও এসএম রফিকুল ইসলাম সভাপতি হন। তিনি মমতাজ বেগমকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেয়া, এফডিআর এর ১৫ লাখ টাকা উত্তোলন করে নেয়া এবং কলেজের নামে দান করে দেয়া জমির দলিল যথার্থ হয়েছে কিনা তার জবাব চেয়ে ডা. আমিনুর রহমানকে নোটিশ দেন। এরপর ধীরে ধীরে বের হয়ে আসে স্বামী-স্ত্রীর দুর্নীতির চিত্র। সম্প্রতি মমতাজ বেগম অবসরে গেলে বর্তমানে কলেজের সভাপতি ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন শিক্ষক মো. নজরুল ইসলামকে।
তিনি বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে জানতে পারেন ডা. আমিনুর রহমানের কলেজের নামে জাল দলিল দান করেন।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম বলেন, কলেজের নামে দানপত্র দলিল জালসহ আয়-ব্যয়ে নানা দুর্নীতি করা হয়েছে মনে করে বিষয়টি আমি গত ২রা অক্টোবর ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করি। পরে প্রতিষ্ঠানের বর্তমান সভাপতি ইউএনও হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী সাবেক অধ্যক্ষ মমতাজ বেগমের অর্থ আত্মসাৎ ও বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত কমিটিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে আহ্বায়ক ও প্রতিষ্ঠানের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মো. মোর্শেদ ও ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক মো. মোখলেছ উর রহমানকে সদস্য করা হয়। তদন্ত শেষে দানপত্র দলিল জালিয়াতিসহ কলেজের প্রায় ৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার বিষয়টির সত্যতা পেয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিনুল ইসলাম বুলবুল গত ২রা নভেম্বর ইউএনও’র কাছে প্রতিবেদন জমা দেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সাবেক অধ্যক্ষ মমতাজ বেগম প্রতিষ্ঠানের তহবিল এবং এফডিআর এর ১৫ লাখ টাকার মুনাফাসহ ২২ লাখ ৬৭ হাজার ২০৯ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি ও ফরম ফিলাপের এক কোটি ৫৭ লাখ ৬ হাজার টাকাসহ মোট প্রায় ৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ করেছে তদন্ত কমিটি।
অপরদিকে চলতি বছরের ৫ই অক্টোবর স্বাক্ষরিত সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোনালিসা হক এক তদন্ত প্রতিবেদনে সাবেক অধ্যক্ষ মমতাজ বেগমের অর্থ আত্মসাৎসহ বিল রেজিস্টার, চেক রেজিস্টার, চেক বই, ব্যয়ের ভাউচারসহ সব তথ্য উদ্ধারের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছেন। এর আগে ২০১৭ সালের ৪ঠা জুলাই স্বাক্ষরিত কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত সচিব (কারিগরি) অশোক কুমার বিশ্বাসের প্রতিবেদনেও দেখা যায়, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া ভুয়া খরচ দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন অধ্যক্ষ।
কলেজের সভাপতি ইউএনও হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী বলেন, প্রতিটি তদন্ত প্রতিবেদনে অধ্যক্ষ মমতাজ বেগমের অর্থ আত্মসাৎ ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রমাণ মিলেছে। তার বিরুদ্ধে প্রায় ৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে বলা হয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে সাবেক অধ্যক্ষ মমতাজ বেগমের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকার কল করা হলেও তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০২/১২/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.