পঞ্চগড়ঃ নিয়োগ মানেই বাণিজ্য। এটি এখন অপেন সিক্রেট। চলতি মেয়াদে সরকারের শেষ সময়ে সুযোগটি কাজে লাগাতে পঞ্চগড় জেলার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শূন্য পদগুলোতে নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে চলছে দৌড়ঝাপ ও তৎপরতা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি এমপি মনোনীত সরকার দলীয় লোকজন। দু’মাসের ব্যবধানে শতাধিক প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক, অফিস সহকারী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়েছে। আরও শতাধিক প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এমপি অনুমতি দেয়ার পরই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। তার নির্দেশনা পাওয়ার পর ডিজির প্রতিনিধি মনোনীত করা হয়। যা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত হলেও এটিই নিয়মে পরিণত হয়েছে। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হচ্ছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শূন্যপদে নিয়োগের আগে চলে দর কষাকষি। মেধা, দক্ষতা যাচাই নয় কে কতো টাকা দেবে, কাকে নিয়োগ দেয়া হবে তা চূড়ান্ত হওয়ার পর পরীক্ষার দিন নির্ধারণ করা হয়। পরীক্ষার দিন নির্ধারণের সময় কাকে কতো টাকা দেয়া হবে তারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সংশ্লিষ্টরা সুযোগের সুবিধা নিয়ে সমঝোতার ভিত্তিতে প্রতিটি নিয়োগে পদ অনুযায়ী ৮, ১০ ও ১৫ লাখ টাকা নিয়ে ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছে। এতে মেধাবী ও দক্ষ প্রার্থীরা বঞ্চিত হওয়ার জন্য ক্ষোভ-অসন্তোষের পাশাপাশি হচ্ছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ সবাই জানলেও নিয়োগ বাণিজ্যে প্রভাবশালীরা জড়িত থাকার জন্য কারও কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। কোনো পদে নিয়োগ পরীক্ষার আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক এমপির সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
আলোচনা সাপেক্ষে এমপি সবুজ সংকেত দেয়াসহ তার নির্দেশে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ডিজির প্রতিনিধি মনোনীত করেন। সূত্রমতে, প্রতিষ্ঠানের সভাপতি গোপনে উপজেলা পর্যায়ের মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও ডিজির প্রতিনিধিকে জানিয়ে দেন যে, আমরা ওমুককে নিয়োগ দেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এরপর সেভাবে তারা পরীক্ষা ও ভাইভা নিয়ে ফলাফল সভাপতির হাতে দিয়ে সম্মানী নিয়ে চলে আসেন। মনোনীত প্রার্থীদের পরীক্ষার আগের দিন রাতে প্রশ্নপত্র সরবরাহ বা পরীক্ষায় ডিভাইস ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়া হয়।
আটোয়ারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুল কবীর মো. কামরুল হাসান বলেন, আগে মহারথীর কাছে টাকার বান্ডিল যায়। তারপর নিয়োগ পরীক্ষার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এখানে কারও কিছু বলার সুযোগ নেই। হয়রানির ভয়ে আমরা শুধু পরীক্ষা ও ভাইভা নিয়ে ফলাফল প্রতিষ্ঠানের হাতে দিয়ে চলে আসি।
পঞ্চগড় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহীন আকতার বলেন, গত মাসে ঢাকায় একটি সেমিনারে আমরা শিক্ষা কর্মকর্তারা স্বচ্ছতার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সকল নিয়োগের ক্ষমতা বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষকে (এনটিআরসিএ) দেয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছি। নিয়োগ সংক্রান্ত নানা অনিয়মের অভিযোগ আমার কাছে আসে। নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের ক্ষমতা শিক্ষা কর্মকর্তাদের দেয়া হয়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি এমপি মনোনীত হতে হবে ও তার নির্দেশে ডিজির প্রতিনিধি দিতে হবে এ ধরনের কোনো প্রজ্ঞাপন নেই। কিন্তু ডিজির প্রতিনিধি দেয়ার ব্যাপারে এমপির নির্দেশের অপেক্ষা করতে হয়। এটাই বাস্তবতা।
পঞ্চগড় ১ আসনের সংসদ সদস্য মজাহারুল হক প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগে তার নির্দেশনার পর ডিজির প্রতিনিধি দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, নিয়োগের ব্যাপারে আমার সঙ্গে কারও কোনো টাকার লেনদেন হয় না। দু’টি প্রতিষ্ঠানে শুধু আমার মনোনীত কমিটি রয়েছে। কিন্তু এরাও কেলেঙ্কারি করেছে। দু’একটি নিয়োগে ম্যানেজিং কমিটিকে বলে কিছু মানুষের সমস্যার নিরসন করে উপকার করা হয়েছে। সূত্রঃ মানবজমিন
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৪/১১/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.