নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ দীর্ঘ দিন পর বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের বিধিতে আসছে পরিবর্তন। এন্ট্রি লেভেলে শিক্ষক নিয়োগে এই পরিবর্তন হলে বর্তমানের নিয়োগ সুপারিশকারী প্রতিষ্ঠান বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)-এর কর্তৃত্বও খর্ব হবে। এমনকি সংস্থাটির নামেরও পরিবর্তন আসতে পারে। তবে সবকিছুই নির্ধারিত হবে আগামী ২১ নভেম্বরের সভায়। সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের বিধিতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে আগামী ২১ নভেম্বর সভা ডেকেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সভায় দীর্ঘ আট বছর আগের বেশ কিছু বিধির সংশোধন করার প্রস্তাব আসতে পারে।
এ দিকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্ব এনটিআরসিএ’কে দিয়ে ও নিয়োগের অনুসরণীয় পদ্ধতি নির্ধারণ করে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর জারি করা পরিপত্র সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ পরিপত্রটি সংশোধনে আগামী ২১ নভেম্বর (মঙ্গলবার) সভা ডাকা হয়েছে। এ দিন দুপুরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খানের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল রোববার এ সভা আহ্বান করে জারি করা নোটিশ প্রকাশ করেছে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। অবশ্য এর আগে গত অক্টোবর মাসে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন যে, খুব শিগগিরই বাতিল হবে নিবন্ধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ। এর পরিবর্তে আগামী বছরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ হবে পরীক্ষার মাধ্যমে। এ জন্য শিগগিরই বদলে যাচ্ছে এনটিআরসিএ’র
নামও।
সূত্র আরো জানায়, আগামীতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক নিয়োগে নিবন্ধন সনদ বা প্রত্যয়ন প্রথা উঠে যাচ্ছে। আর এর পরিবর্তে পরীক্ষা নিয়ে উত্তীর্ণদের তালিকা করে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) আদলে শিক্ষক পদে নিয়োগ সুপারিশ করা হবে। এ জন্য সংশোধন হচ্ছে আইন।
সূত্র আরো জানায়, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ ও প্রত্যয়ন বিধিমালা ২০০৬ সংশোধনের পর ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর জারি করা ওই পরিপত্রে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক নিয়োগে প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল এনটিআরসিএকে। ওই পরিপত্রে শিক্ষক নিয়োগের অনুসরণীয় পদ্ধতিও নির্ধারণ করা হয়েছিল। ওই পরিপত্র অনুসারে প্রতি বছর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষক নিয়োগযোগ্য পদে চাহিদা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে জমা দেয়ার কথা বলা হয়েছিল, যা জেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে প্রতি বছর ৩০ নভেম্বরের মধ্যে এনটিআরসিএতে পাঠানোর নির্দেশনা ছিল। প্রতি বছর প্রার্থী বাছাইয়ের পরীক্ষা (নিবন্ধন পরীক্ষা) গ্রহণ করে জাতীয়, বিভাগ, জেলা, উপজেলা ও থানাওয়ারি মেধাক্রম প্রণয়ন করে ফল ঘোষণার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল এনটিআরসিএকে। ওই পরিপত্রে বলা ছিল, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়োগের জন্য প্রার্থী নির্বাচনের সময় উপজেলা মেধাতালিকায় অগ্রাধিকার পাবে।
উপজেলায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে জেলা মেধাতালিকা ও তা-ও না পাওয়া গেলে বিভাগীয় মেধাতালিকা ও সর্বশেষ জাতীয় মেধাতালিকা অনুসরণের নির্দেশনা ছিল। এখন নতুন করে বিধিতে পরিবর্তন আনতেই মূলত ২১ নভেম্বর সভা আহ্বান করা হয়েছে।
জানা গেছে, এ সভায় অংশ নিতে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের দুইজন অতিরিক্ত সচিব, এনটিআরসিএ’র চেয়ারম্যান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর এবং মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, ঢাকা বোর্ড, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং ঢাকা অঞ্চলের উপ পরিচালককে চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এনটিআরসিএ’র কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সংশোধিত খসড়ার বিষয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করে ফের আইনের খসড়া করে তা কেবিনেটে পাঠানো হবে। তবে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা হবে আগের মতোই। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও পরে মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হবে। তবে সাবজেক্টের বিপরীতে নয়, পদের বিপরীতে নিবন্ধন করা হবে। এ ক্ষেত্রে যারা উত্তীর্ণ হবেন তাদের একটি মেধাতালিকা হবে, আদালতেরও এমন একটি নির্দেশনা আছে। পরে অধিদফতরগুলো থেকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। ওই সব পদে উত্তীর্ণ হয়ে মেধাতালিকায় স্থান পাওয়া প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদন নেয়া হবে ঠিক যেমনটি এখন হয়। তারা আবেদন করে পছন্দের প্রতিষ্ঠানে মেধা বা নম্বর অনুযায়ী নিয়োগ সুপারিশ পাবেন। তবে এখন যে নিবন্ধন পরীক্ষা নিয়ে সনদ বা প্রত্যয়ন দেয়া হয় সেটি আর দেয়া হবে না।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৩/১১/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.