হবিবপুর কেশবপুর ফাজিল মাদ্রাসা ও অধ্যক্ষ মোঃ মইনুল ইসলাম পারভেজ। ছবিঃ সংগৃহীত

ভুয়া আবেদন এবং স্মারকে বিদ্যোৎসাহী সদস্য হলেন সেই অধ্যক্ষ মইনুল

নিজস্ব প্রতিবেদক,  ঢাকাঃ  মাদ্রাসা প্রধান কর্তৃক প্রস্তাবিত নামের তালিকায় নাম না থাকলেও, মাদ্রাসা প্রধানের আবেদন উপেক্ষা করে ভুয়া আবেদন এবং মাদ্রাসার ভুয়া স্মারক নম্বর ব্যবহার করে জালিয়াতির মাধ্যমে সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার হবিবপুর কেশবপুর ফাজিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির বিদ্যোৎসাহী  সদস্য  হিসেবে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কর্তৃক বিদ্যোৎসাহী সদস্য  মনোনীতি হয়েছেন একই উপজেলার হুলিয়ারপাড়া জামেয়া কাদেরিয়া সুন্নিয়া ফাজিল মাদ্রাসার সেই অধ্যক্ষ মো: মইনুল ইসলাম পারভেজ (ইনডেক্স নং— ৩২০৮৫৮) । এর আগে গত ২৫ জুন, ২০২৩ ইং তারিখে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় চাকরিবিধি পরিপন্থী এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের ভাবমূর্তি নষ্ট উল্লেখ করে অধ্যক্ষ মো: মইনুল ইসলাম পারভেজের এমপিও কেন বন্ধ হবে না তা জানতে চেয়ে শোকজ করে মাদ্রাসা অধিদপ্তর।  ‘জালিয়াতির মাধ্যমে ১৭ বছর ধরে অধ্যক্ষ মইনুল ইসলাম পারভেজ!‘ শিরোনামে শিক্ষাবার্তায় সংবাদ প্রকাশিত হলে গত ১৫ অক্টোবর অধ্যক্ষ মাইনুল ইসলামের নিয়োগ সংক্রান্ত সকল কাগজ নিয়ে মাদ্রাসা অধিদপ্তরে তলব করে  অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (অর্থ) মোঃ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে।

অনিয়মের অভিযোগে একবার শোকজ করা এবং জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়ার অভিযোগে অধিদপ্তরে তলব করে গত ১৫ অক্টোবর অধিদপ্তর থেকে চিঠি ইস্যুর দুই দিন পরেই অধিদপ্তর থেকে ১৭ অক্টোবর তাকে বিদ্যোৎসাহী সদস্য হিসেবে মনোনীত করে চিঠি ইস্যু করা হয়। এতে স্বাক্ষর করেন অধিদপ্তরের পরিদর্শক (ঢাকা ও সিলেট বিভাগ) মোহাম্মদ সাজিদুল হক।

ঐ চিঠিতে বলা হয়, মাদ্রাসার গভর্নিং বডিতে মহাপরিচালক, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক একজন বিদ্যোৎসাহী সদস্য মনোনয়নের নিমিত্ত সূত্রোস্থ ১ নং স্মারকে বর্ণিত মাদ্রাসার এডহক কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি), সুনামগঞ্জ ও অধ্যক্ষ কর্তৃক নামের প্রস্তাব সম্বলিত একটি আবেদন দাখিল করা হয়। এডহক কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি), সুনামগঞ্জ ও অধ্যক্ষ কর্তৃক দাখিলকৃত আবেদন (স্মারক অনুযায়ী আবেদনের তারিখ ২৮ আগস্ট ২০২৩) ও আবেদনের সাথে সংশ্লিষ্ট কাগজ-পত্র পর্যালোচনান্তে সূত্রোস্থ ২ নং স্মারকের ১৬ নং অনুচ্ছেদে (ফাযিল ও কামিল মাদ্রাসায় বিদ্যোৎসাহী সদস্য পদে মহাপরিচালকের প্রতিনিধি মনোনয়ন দান) বর্ণিত ক্ষমতা বলে ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম পারভেজকে হবিবপুর কেশবপুর ফাজিল মাদ্রাসার গভর্নিংবডির বিদ্যোৎসাহী সদস্য পদে নির্দেশক্রমে মনোনয়ন দেয়া হলো।

শিক্ষাবার্তা’র অনুসন্ধানে জানা গেছে, অধিদপ্তর থেকে অধ্যক্ষ মইনুলকে বিদ্যোৎসাহী সদস্য হিসেবে মনোনীত করার চিঠিতে মাদ্রাসার যে স্মারক নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে। বাস্তবে এই স্মারক নম্বর ভুয়া এবং হবিবপুর কেশবপুর ফাজিল মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ কখনই এই স্মারক নম্বর আবেদনে সংযুক্ত করেননি বা ব্যবহার করেনি। এই চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে, ‘এডহক কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি), সুনামগঞ্জ ও অধ্যক্ষ কর্তৃক দাখিলকৃত আবেদন ও আবেদনের সাথে সংশ্লিষ্ট কাগজ-পত্র পর্যালোচনান্তে’ তাকে বিদ্যোৎসাহী সদস্য মনোনীত করা হয়েছে। আদতে এই আবেদন হবিবপুর কেশবপুর ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ করেনই-নি। বাস্তবে এই আবেদনটিই ভুয়া।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি বছরের গত ২৭ মে ২০২৩ ইং তারিখে হবিবপুর কেশবপুর ফাজিল মাদ্রাসার এডহক কমিটির মেয়াদ শেষ হতে যাওয়ায় নিয়মিত কমিটি গঠনের লক্ষে ২০ মে ২০২৩ ইং তারিখে দাতা প্রতিনিধি  ও অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন  অনুষ্ঠিত হয়। এরপর গত ২৩ মে ২০২৩ ইং তারিখে অধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত মাদ্রাসা অধিদপ্তরের ডিজি কর্তৃক বিদ্যোৎসাহী সদস্য মনোনয়নের জন্য সূচীপত্র সহ ২৪ পৃষ্ঠার কাগজপত্র সংযুক্ত করে গত ৮/৬/২০২৩ ইং তারিখে আবেদন করেন মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ যার স্মারক নম্বর হবিবপুরফামা/১২৯৯৬৫/২০২-৪২ তারিখঃ ২৩/০৫/২০২৩। এই আবেদনে এডহক সভাপতির প্রতিস্বাক্ষর না থাকায় তা বাতিল করে মাদ্রাসা অধিদপ্তর এবং পুনরায় সভাপতির প্রতিস্বাক্ষর সহ নাম প্রস্তাব পাঠানোর জন্য বলা হয়। এরপর গত ১৯ জুন ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ড. মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ১৮ জুনের চিঠিতে মোঃ আবিবুল বারীকে সভাপতি করে এবং জগন্নাথপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মনোনীত বিদ্যোৎসাহী সদস্য করে গভর্নিং বডির মনোনয়ন দেন। অধ্যক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৬ জুন ২০২৩ ইং তারিখে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মনোনীত বিদ্যোৎসাহী সদস্য হিসেবে মোঃ শিহাব উদ্দিন চৌধুরীকে মনোনয়ন দেন। মাদ্রাসা অধিদপ্তরের ডিজি মনোনীত বিদ্যোৎসাহী সদস্য বাদে গভর্নিং বডির সকল সদস্যের পদ পূরণ হলে গত ০৫ জুলাই ২০২৩ ইং তারিখে  ১৮ জুন ২০২৩ ইং তারিখে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গঠিত গভর্নিং বডির সভাপতি  মোঃ আবিবুল বারীর প্রতিস্বাক্ষর নিয়ে হবিবপুর কেশবপুর ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নাম প্রস্তাব করে পুনরায় মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে (অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কর্তৃক মনোনীত) বিদ্যোৎসাহী সদস্য মনোনয়নের জন্য আবেদন করেন যার স্মারক নম্বর-হবিবপুরফামা/১২৯৯৬৫/২০২-৫৫ তারিখঃ ০৫/০৭/২০২৩।

অর্থ্যাৎ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কর্তৃক মনোনীত বিদ্যোৎসাহী সদস্য মনোনয়নের জন্য তৎকালীন এডহক সভাপতি সুনামগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (আইসিটি ও শিক্ষা) এর প্রতিস্বাক্ষর না থাকায় গত ৮/৬/২০২৩ ইং তারিখে  অধ্যক্ষের আবেদন বাতিল করে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর এবং এরপর আরবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গঠিত গভর্নিং বডির সভাপতি  মোঃ আবিবুল বারীর প্রতিস্বাক্ষর সংযুক্ত করে নাম প্রস্তাব করে গত ০৫ জুলাই ২০২৩ ইং তারিখে পুনরায় আবেদন করে হবিবপুর কেশবপুর ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। দুই বারের এই আবেদনে প্রস্তাবিত নামের তালিকায় মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ, মোঃ মইনুল ইসলাম পারভেজের নাম প্রস্তাব না করলেও চলতি মাসের গত ১৭ অক্টোবর ২০২৩ ইং তারিখে মোঃ মইনুল ইসলাম পারভেজকে অধিদপ্তরের ডিজি কর্তৃক বিদ্যোৎসাহী সদস্য হিসেবে মনোনীত করে ইস্যু করা চিঠিতে এডহক কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি), সুনামগঞ্জ ও অধ্যক্ষ কর্তৃক দাখিলকৃত আবেদনের (স্মারক অনুযায়ী আবেদনের তারিখ ২৮ আগস্ট ২০২৩) প্রেক্ষিতে করা হয়েছে উল্লেখ করা হয়। অর্থাৎ হবিবপুর কেশবপুর ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ গত জুন এবং জুলাই মাসে এডহক সভপতির প্রতি স্বাক্ষর ছাড়া এবং গভর্নিং বডির নতুন সভাপতির প্রতিস্বাক্ষরে আবেদন করলেও ইস্যুকৃত চিঠিতে আবেদনের তারিখ দেখানো হয়েছে ২৮ আগস্ট ২০২৩ ইং তারিখ। বাস্তবে এই আবেদনটি হবিবপুর কেশবপুর ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ করেন নাই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হবিবপুর কেশবপুর ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুল হাকিম শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, আমি এই আবেদন করিনি। এডহক সভাপতির প্রতিস্বাক্ষর ছাড়া করা আবেদন মাদ্রাসা অধিদপ্তর বাতিল করে প্রতিস্বাক্ষর সংবলিত আবেদন করতে বলে। তার প্রেক্ষিতে আমি নিয়মিত সভাপতি গঠন হবার পরে সেই সভাপতি মোঃ আবিবুল বারীর প্রতিস্বাক্ষর নিয়ে আবেদন করি। যখন নতুন সভাপতি মনোনীত হয়ে গেছে তখন পূর্বের এডহক সভাপতির প্রতিস্বাক্ষর কিভাবে নিব প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, এডহক সভাপতির কথা এবং আমার আবেদনের কথা মাদ্রাসা অধিদপ্তরের চিঠিতে কিভাবে উল্লেখ করা হলো তা আমার জানা নেই। এই আবেদনটি আমার করা নয়। ইস্যুকৃত চিঠিটা দেখে আমি নিজেই অবাক হয়েছি। আর সমচেয়ে বড় কথা হলো দুই বার যে আমি নাম প্রস্তাব করে আবেদন করেছি সেখানে অধ্যক্ষ মইনুল ইসলাম পারভেজের নামই নেই।

তিনি আরও বলেন, অধিদপ্তরের এই চিঠিতে বর্ণিত মাদ্রাসার স্মারক নং- -০৫.৪৬.৯০০০.০০৬.১.০০০.২১-৬২, তারিখঃ ২৮/০৮/২০২৩ খ্রি. ডকেট-১১৪৯৩, তারিখঃ ২৯/৮/২০২৩ খ্রি. উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ এডহক সভাপতির প্রতিস্বাক্ষর ছাড়া আমার করা আবেদন ২৩ মে ২০২৩ তারিখে স্বাক্ষরিত আর এখানে ২৮ আগস্ট ২০২৩ তারিখে উল্লেখ করা হয়েছে এবং স্মারকে ডকেট- নম্বর দেওয়া হয়েছে ১১৪৯৩ অথচ ২৩ মে ২০২৩ তারিখে আমার স্বাক্ষরিত আবেদনটি ৮/৬/২০২৩ ইং তারিখে আমি জমা দিয়েছিলাম যার ডকেট নম্বর ছিল ৭৬৭০। আমরা চিঠিতে উল্লেখিত এই স্মারক নম্বর কখনই দেইনি। মূলকথা স্মারকে উল্লেখিত তারিখে আমি আবেদনই করিনি অথচ এই তারিখে আমি এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষরের কথা বলা হয়েছে। আমার করা আবেদনের তারিখের সাথে স্মারক নম্বরের উল্লেখিত তারিখের সময়ের ব্যবধান তিন মাস।

হবিবপুর কেশবপুর ফাজিল মাদ্রাসা সূত্র জানায়, হুলিয়ারপাড়া জামেয়া কাদেরিয়া সুন্নিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো: মইনুল ইসলাম পারভেজের নামে ইতিমধ্যে কাবিন জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের দুইটি মামলা চলমান থাকায় তিনি গত ২০ মে ২০২৩ ইং তারিখে হুলিয়ারপাড়া জামেয়া কাদেরিয়া সুন্নিয়া ফাজিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি স্বাক্ষরিত অনাপত্তি পত্র জমা দিলেও তার নাম প্রস্তাব না করতে হবিবপুর কেশবপুর ফাজিল মাদ্রাসার অভিভাবক এবং কুশীলবরা মতামত দেন। তারই প্রেক্ষিতে তার দুইটি মামলার কাগজ মাদ্রাসা অধিদপ্তরের ডিজি মহোদয়ের কাছে জমাও দেওয়া হয়েছিল। নাম প্রস্তাব না করলেও এবং ইস্যুকৃত চিঠিতে উল্লেখিত আবেদন প্রতিষ্ঠান থেকে করা না হলেও মো: মইনুল ইসলাম পারভেজ বিদ্যোৎসাহী সদস্য মনোনীত হওয়ায় তারা আশ্চর্য হয়েছেন। এই জালিয়াতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেছেন।

উল্লেখ্য যে, বিদ্যোৎসাহী সদস্য মনোনয়নের ঔ চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘রাষ্ট্রীয় নিয়ম শৃঙ্খলা, অধিদপ্তর ও মাদ্রাসা স্বার্থ পরিপন্থী কোন কর্মকান্ডের জন্য মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর উক্ত সদস্য পদ যে কোন সময় বাতিল করতে পারে।’ অথচ মনোনীত বিদ্যোৎসাহী সদস্য মো: মইনুল ইসলাম পারভেজের বিরুদ্ধে তার অনিয়ম উল্লেখ করে চাকরিবিধি পরিপন্থী এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে উল্লেখ করে  ইতিমধ্যে  শোকজ করা এবং এই চিঠি ইস্যুর ঠিক দুই দিন আগে তার নিয়োগ জালিয়াতির অভিযোগে সকল কাগজপত্র নিয়ে অধিদপ্তরে তলব করা হলেও তাকে কিভাবে সদস্য পদে মনোনীত করা হলো তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন হবিবপুর কেশবপুর ফাজিল মাদ্রাসার সংশ্লিষ্টরা।

অভিযোগে বিষয়ে জানতে চাইলে হুলিয়ারপাড়া জামেয়া কাদেরিয়া সুন্নিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও হবিবপুর কেশবপুর ফাজিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির (অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কর্তৃক সদ্য মনোনীত) বিদ্যোৎসাহী সদস্য মো: মইনুল ইসলাম পারভেজের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি শিক্ষাবার্তা’র প্রতিবেদককে বলেন, আপনাদের আমার প্রতি এত ইন্টারেস্ট কেন? শিক্ষাবার্তা’র সাথে কারও ব্যক্তি আক্রোশ নেই অনিয়ম পেলে সে বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানালে তিনি বলেন, আপনাদের সাথে কোনো কথা বলব না আমি। পরে মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

অধিদপ্তরের ডিজি কর্তৃক মনোনীত বিদ্যোৎসাহী সদস্যের মনোনীত করার জন্য গত ২৮ আগস্ট ২০২৩ তারিখে করা আবেদন পত্রে প্রতিস্বাক্ষর করেছিলেন কি’না জানতে চেয়ে গত ২২ জুন ২০২৩ ইং তারিখে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) হিসেবে যোগদান করা হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদ এর অফিসিয়াল মুঠোফোন নম্বরে কল করলে তিনি ব্যস্ত আছেন পরে কথা বলবেন বলেন। পরে আবার কল করলে তিনি পুনরায় ব্যস্ততা দেখান। এরপর আর কল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ জাকির হোসাইন শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, বিদ্যোৎসাহী প্রতিনিধির বিষয়টি নিয়ে আমি বলতে পারব না। এই বিভাগের দায়িত্বে আছেন যে পরিদর্শক উনিই বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন।

জানতে চাইলে ডিজি কর্তৃক মনোনীত বিদ্যোৎসাহী সদস্য মনোনয়নের জন্য ইস্যু করা চিঠিতে স্বাক্ষরকারী অধিদপ্তরের পরিদর্শক (ঢাকা ও সিলেট বিভাগ) মোঃ সাজিদুল হক শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, বিদ্যোৎসাহী প্রতিনিধি দেওয়ার এখতিয়ার ডিজি স্যারের। এখানে মাদ্রাসা অধ্যক্ষ এবং সভাপতির প্রস্তাবনা থাকে। ঐ প্রস্তাবনা থেকে যদি ডিজি স্যার ইচ্ছে করে দিতে পারেন অথবা তিনি যদি অন্য কাউকে উপযুক্ত মনে করেন দিতে পারেন। সেটা ডিজি মহোদয়ের এখতিয়ার। আপনার স্বাক্ষরিত ইস্যুকৃত চিঠিতে বর্ণিত মাদ্রাসার যে স্মারকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা ঐ মাদ্রাসা থেকে এমন কোনো স্মারক নম্বর দেওয়া হয়নি উল্লেখ করলে তিনি বলেন, স্মারক নম্বর তো মাদ্রাসা দেয়না (দুইবার আবেদনেই মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ স্মারক নম্বর ব্যবহার করেছেন)। স্মারক দেয় অধিদপ্তর। বর্ণিত মাদ্রাসার স্মারক নম্বরের কথা উল্লেখ থাকলেও তার দাবি, এটা অধিদপ্তর কর্তৃক দেওয়া স্মারক নম্বর। চিঠিতে আবেদনের যে তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে সেই তারিখে অধ্যক্ষ কোনো আবেদন করেননি এবং তিনি এই তারিখের আবেদনে স্বাক্ষর করেননি তাহলে কিভাবে এই আবেদনটা এলো জিজ্ঞেস করলে এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা তো কারও মুখের কথায় বিশ্বাস করব না। আমাদের কাছে অধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত আবেদন আসছে এবং তার উপর ভিত্তি করেই এই সদস্য মনোনীত করা হয়েছে।  অর্থ্যাৎ অধ্যক্ষ উল্লেখিত তারিখে আবেদন এবং স্বাক্ষর  না করার কথা বললেও অধ্যক্ষ কর্তৃক স্বাক্ষরিত উক্ত তারিখের আবেদনেই এই সদস্য মনোনীতি করা হয়েছে দাবি এই পরিদর্শকের।

জানতে চাইলে মাদ্রাসা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) হাবিবুর রহমানের মুঠোফোনে কল করেও তাকে না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৯/১০/২০২৩   

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.